হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার দেশী মাছের ঝাঁক

Advertisement
colisa lalia3

জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় :শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের বাতাস বইছে এখন। মাঠঘাট, নদীর কূল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে ঝরে যাওয়া কাশফুলের শুকনো কাঠিগুলো। ঋতুরা যায়, আবার ফিরেও আসে। যদিও স্পষ্টভাবে তেমন আর বোঝা যায় না। যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল রেখে আবহাওয়াও চরম পরিবর্তিত হয়েছে। এ পুরটাই প্রকৃতির খেয়াল। সেই খেয়ালে গা ভাসিয়ে বিলুপ্ত হয়ে চলেছে একের পর এক পৃথিবীর দামি সম্পদগুলো। অবশ্য এর জন্যে প্রকৃতিকে একেবারেই দায়ী করা যায় না। এর দায় পুরটাই আমাদের মানব সমাজের।
     একটা সময় ছিল যখন বর্ষার মরশুমে গ্রাম বাংলার খাল-বিল-নদী-নালাগুলো জলে টইটুম্বুর হয়ে উঠত। চারিদিকে যেন গ্রীষ্মের গ্লানি মুছে দেওয়ার অব্যর্থ চেষ্টা। বর্ষার দুরন্ত মেজাজে তখন গ্রামের ছেলেরা ফাঁদ নিয়ে ছুটত মাছের নেশায়। মাছ যে বাঙ্গালীর অতি প্রিয়! ভারি আশ্চর্য লাগত, ধানক্ষেত বা ছোটো নালাগুলিতে না জানি কোথা থেকে এসে হাজির হতো হাজারও ছোটো মাছের ঝাঁক। আর সে সব পেয়ে কত খুশিই না হত ছোটো ছোটো ছেলেরা!
     এখন তো সে সব অতীত। কালক্রমে হারিয়ে গেছে সেই সব মাছেরা। যারা এখনও টিকে আছে, তারাও হারিয়ে যাওয়ার মুখে। একটা সময় ছিল যখন অতি পরিচিত দেশী প্রজাতির ফলি, বামাশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, গুলশা, কাজলি, গাং মাগুর, চেলা, বাতাসি, রানি, পুতুল, সরপুঁটি, মলা, কালোবাউশ, গোঙসা, রায়াক, রয়না, বাতাসি, বাজারি, বেলে, চাপিলা, খৈলসা মাছেরা নির্বিচারে ঘুরে বেড়াত গ্রাম বাংলার খাল-বিল-নদীগুলিতে। এদের এখন আর তেমন দেখা যায় না। তবে মাঝে মাঝে বর্ষার দিনগুলিতে হাজির হয় মাগুর, শিঙি, পাবদা, টাকি, মৃগেল, চিতল, রিটা, আইড়, কৈ, বোয়াল মাছেরা। কিন্তু এদের স্বাদও হয়তো আমরা আর বেশিদিন পাব না। কারণ পরিবর্তনের যুগে এরাও হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের গ্রাম বাংলায় মাত্র চল্লিশ বছর আগেও প্রায় ২৯৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন খুব বেশি হলে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯০ প্রজাতিতে।
     দেশী মাছ হারিয়ে যাওয়ার বেশ কতকগুলি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। যার মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হল জলের স্বল্পতা, চাষাবাদের জন্যে বাঁধ নির্মাণ, নদী বা খালের তলদেশে পলি জমে নাব্যতা হ্রাস, বিশেষ নিয়ম না মেনে নির্বিচারে মাছ শিকার, দেশী প্রজাতির মাছেদের নির্দিষ্ট নিরাপদ আশ্রয় ও প্রজননক্ষেত্র না থাকা, সংযোগকারী খালগুলো মজে যাওয়া, প্রকৃতির খাম খেয়ালিপনায় খরা বা অনাবৃষ্টিআর সবচেয়ে ক্ষতিকর কারণটি হল চাষের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। 
     মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটাতে মাছের গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। কিন্তু কৃত্রিমভাবে চাষযোগ্য মাছে সেই সব পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা তুলনামূলক অনেক কমসেদিক দিয়ে বিচার করলে দেশী মাছ সংরক্ষণের প্রতি নজর রাখা অবশ্যই আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। একটু নজর দিলে হয়তো বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলিকে আরও কিছুদিন টিকিয়ে রাখা যাবে।
Advertisement
Previous articleব্রাহ্মসঙ্গীত : ‘জনগণমন-অধিনায়ক’
Next articleআবিস্কার হল দৈত্যাকার ব্ল্যাকহোল, পাল্টে যাবে প্রচলিত ধারণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here