Advertisement
অরবিন্দ মালী : গ্রামের নাম কুন্ডিরা। গ্রামটি রাজনগর ব্লকের ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্ন্তগত। এখানে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম হল বাদ্যকর সম্প্রদায়। অনেকে এঁদের ডোম সম্প্রদায়ও বলে থাকেন। এই সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে গ্রাম–বাংলার বিভিন্ন লোক–সংস্কৃতি ও শিল্প–কলার ঐতিহ্য বহন করে আসছেন। এক সময়ে ভাঁদু, ঝুমুর, ঘেঁটু গানের মধ্য দিয়ে এঁরা নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ ও সমাজকে আনন্দ দিয়ে এসেছেন। বতর্মানে সে সব প্রায় বিলুপ্তির পথে বলা যায়।
গ্রামটিতে এখন প্রায় ৩০টি বাদ্যকর পরিবার বাস করছেন। তাঁদের জীবন-জীবিকার মূল উৎস বাঁশ শিল্প ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাদ্য বাজানো। তবে সারা বছর অনুষ্ঠান না থাকায় সমান্তরালভাবে কুটির শিল্পের ওপর তাঁদের নির্ভর করে থাকতে হয়। কুটির শিল্প বলতে বোঝানো হয়েছে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন রকম সামগ্রী – ঝুড়ি, পেছে, চাকলি, কুলো, হাত পাখা প্রভৃতিকে। যা তাঁরা নিকটবর্তী রাজনগর হাঁটে বিক্রি করে কোনও রকমে সংসার চালান। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই এই কর্মের সাথে যুক্ত আছেন।
তবে বর্তমান যুগের সমাজ বড্ড বেশিই পশ্চিমী সভ্যতার অনুকরণে ব্যস্ত। তাই ভয়ংকর রকম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এই গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া মানুষগুলির জীবিকা। বাজারের সস্তা প্ল্যাস্টিকের সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিয়ে যেমন তাঁদের কুটিরশিল্প নষ্ট হচ্ছে। তেমনি আধুনিক উচ্চস্বরের স্পিকার, ডিজের প্রভাবে তাঁদের নিজস্ব বাদ্য জীবিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে কর্মহীন হয়ে আরও অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ছেন তাঁরা। নতুন কর্মসংস্থার সন্ধানে বাধ্য হচ্ছেন ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে। এই পরিস্থিতিতে সমাজ এগিয়ে না এলে ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে তাঁদের শিল্প ভাবনা।
Advertisement