বহুরূপীর আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে অদম্য শৈশবের জৌলুস

Advertisement
20190225 145024

সজয় পাল : ফুল্লরা মেলায় ঢোকার মুখে হঠাৎ সামনে এসে হাজির আট-দশ বছরের ভগবান শিবকালী। শিবের সমস্ত শরীর সাদা চুনে আবৃত। মাথায় পাটের জটা। হাতে ভাঙা কাঠের ত্রিশূল। অপর দিকে মা কালীর সাজ আকাশী-নীলে। লম্বা রক্তরঙা জিভ। মাথায় শোলার মুকুট। সামনে হাত পেতে অর্থ প্রার্থনা, দুটি ভাত খাবে বলে।
     এরা বহুরূপী। সমাজের বিলুপ্তপ্রায় এক লৌকিক গ্রামীণ শিল্পকে এখনও আঁকড়ে বেঁচে আছে কোনও রকমে। এ শিল্পের ইতিহাস প্রায় অনেকটাই প্রাচীনরং মেখে বা মুখোশ পরে যারা নিজের চেহারাকে পুরোপুরি বাহ্যিকভাবে পালটিয়ে অন্য রূপ বা চেহারা ধারণ করে, সাধারণত তাঁদেরকেই বহুরূপী বলে সম্বোধন করা হয়। সেকালের রাজা-বাদশা থেকে শুরু করে জমিদার-প্রভুর ছত্রছায়ায় এক শ্রেণীর মানুষ সঙ সেজে তাঁদের মনোরঞ্জন করতো। যে কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে তাঁরা ছিল সমাজের আনন্দ দানের মূল উপাদানএটাই ছিল তাঁদের জীবিকা।
     কিন্তু কালের স্রোতে হারিয়ে গেছে সেই সব দিন। কয়েক দশক আগেও তাঁরা বেশ সচ্ছলতায় সমাজে মনোরঞ্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কখনও বাঘ-সিংহ, কখনও ভুত-পেত্নী আবার কখনও ঠাকুর-দেবতা সেজে হাজির হতো ‘ভদ্র’ সমাজের আঙিনায়। দু’হাত ভরে কুড়িয়ে নিতো সামান্যতম উপহার। বাস! তাতেই তাঁরা বেজায় খুশি। শরৎচন্দ্র থেকে সমরেশ বসুর গল্প-উপন্যাসে জায়গা করে নিয়েছিল বেশ সহজেই।
     আজকের পরিবেশ অবশ্য একেবারেই ভিন্ন। ফুল্লরা মেলা থেকে ফেরার পথে আবার দেখা তাঁদের সাথে। তবে এবার একটু অন্য মেজাজে। পথের মুক্ত প্রাঙ্গণেই জড়ো হয়ে বসে আছে ৭-৮টি অদম্য শৈশব। গায়ে-মুখে তখনও লেগে আছে বহুরূপীর ছাপ। আর মধ্যমণি হয়ে জ্বলন্ত হাঁড়িয়ে কিছু রাঁধছেন তাঁদের মা। সমাজের পকেট থেকে সারাদিনের যা কিছু উপার্জন, এখন তা সেদ্ধ হচ্ছে উনুনের তাপে। এ বড়ো আজব সমাজ। লুপ্তপ্রায় এক বহুরূপী শিল্পের ছত্রছায়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পরিচিত শৈশব। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে তাঁদের শিক্ষাদীক্ষা, আলোকিত ভবিষ্যৎ

Advertisement
Previous articleদার্শনিক সক্রেটিস ও তাঁর সহধর্মিণী জ্যানটিপি
Next articleজিনের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব শিশু অবস্থায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here