পাথরকুচি গ্রামের কাঁসা শিল্প ও শিল্পী

Advertisement
WhatsApp%2BImage%2B2019 11 12%2Bat%2B22.36.07%2B%25281%2529
সুজয় ঘোষাল : গ্রামের নাম পাথরকুচি। গ্রামটির মাটির সঙ্গে পাথরকুচি মিশে থাকায় তার নাম হয়েছে এই রকম। খয়রাশোল ব্লকের অন্তগর্ত এইগ্রামটিতে পৌঁছলে প্রায় প্রতিটা বাড়িতে শোনা যাবে ধাতব পেটানোর ঠুংঠাং শব্দ। বীরভূম জেলায় লোকশিল্পের আঙিনায় এই গ্রামটির বিশেষ খ্যাতি আছেকেননা লোকায়ত শিল্পের অন্যতম প্রাচীন শিল্প কাঁসাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই গ্রাম। গ্রামটির অর্থনীতিকে সুঠাম করতে চাষবাসের পাশাপাশি কাঁসা শিল্প সম অবদান রাখে। এখানে ১০০টির বেশি পরিবার এই ধাতুশিল্প সাথে প্রতক্ষ্যভাবে যুক্ত।
     আধুনিকতার যুগে ঘর-গৃহস্থে স্টিল, অ্যালুমিনায়াম, প্লাস্টিক প্রভৃতির ব্যবহার ক্রমশ বাড়ার ফলে আভিজাত্য নিদর্শনকারী কাঁসার কদর কমেছে ক্রেতা সমাজে। পাথরকুচি গ্রামে কাঁসার থালা তৈরির আঞ্চলিক বিশেষত্ব দেখা যায়। গ্রামটির নিকটবর্তী হজরতপুর ও লাউবেড়িয়া গ্রামে শুধুমাত্র কাঁসার বাটি তৈরী হয়। ঠিক তেমনভাবে ইলামবাজার ব্লকের টিকরবেতায় তৈরি হয় কাঁসাপিতলের ঘড়া ও কলসী। এখানে ভুবনেশ্বরী, বগি, রাজরাজেশ্বরী, বেলুঞ্চি ইত্যাদি নামের কাঁসার থালা তৈরি করে থাকে শিল্পীরা।
     যাইহোক,এই ধাতুশিল্পের কাজ অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য অনেকগুলি ধাপ অতিক্রম করে একটি সুদৃশ্য ও সুন্দর থালা তৈরী করে পাথরকুচির শিল্পীরা। এই গ্রামের শিল্পীরা কাঁচামাল হিসাবে পুরনো বা ভাঙাচোরা কাঁসার সামগ্রী মহাজনদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে কিনে নেয়। যদিও ৭ : ২ অনুপাতে তামা ও টিন মিশিয়ে কাঁসা তৈরী হয়।
     পাথরকুচি গ্রামে কাঁসা শিল্পের সাথে যুক্ত শিল্পী জয়দেব মেহতরী জানালেন, কাঁসা কাজ করতে অনেক বেশী পরিশ্রম করতে হয়। মুচিতে যখন কাঁসা গলানো হয়, তখন প্রচন্ড তাপ সহ্য করতে হয়। মুচিতে কাঁসা গলানোর পর সেটিকে পিঁড়ি নামক একটি ছাঁচে ঢালা হয়। একটু ঠান্ডা হওয়ার পর সেটাকে জলে ডোবানো হয়। জলে না ডোবালে কাঁসা কাঁচের মতো স্বচ্ছ হয় না। তাইপেটানোর সময় কাঁসা ভেঙে যেতে পারে। এরপর ছাঁচটিকে পিটিয়ে পাত বানানো হয় এবং কম্পাসের সাহায্যে গোল করে নেওয়া হয় থালার আকৃতি দেওয়ার জন্য। পাত তৈরি হওয়ার পর টার্নার মেশিনে পাতটিকে উজ্বল ও মৃসণ করা হয়। অবশেষে তৈরী হয় কাঁসার থালা।
     তবে এখন পাত পেটানোর কাজ সহজ করতে পাথরকুচি বেশ কয়েকজন পিঁড়িগুলিকে বাঁকুড়া নিয়ে গিয়ে যান্ত্রিক সহয়তার সাহায্য নেয়যদিও এক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। হাতুড়ি দিয়ে পাতগুলি পেটানোর সময় কাঁসার থালায় আঙুল কেটে যাওয়ারও সম্ভবনা থাকে। তাই আঙুলে প্লাস্টিক নেয় শিল্পীরা
     এই গ্রামের কাঁসা শিল্পী বাপ্পা কবিরাজ, প্রতীক কবিরাজ, উত্তম মেহতরী, বরুণ কবিরাজ, গণেশ কবিরাজ জানালেন, পারিবারিক আয় খুব একটা ভালো  না হওয়ায় তাঁরা ১২-১৪ বছর বয়স থেকে এই পেশার সাথে যুক্ত আছেনবর্তমানে কাঁসা সামগ্রীর চহিদা কমেছে কাঁসার কাজে কায়িক শ্রম লাগে এবং প্রতিদিন শ্রম দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আজকাল এই শিল্পে আগের মতো কেউ আর এগিয়ে আসতে চানা। অনেকেই আবার এই কাজ ছেড়ে অন্য কাজে যুক্ত হয়ে গিয়েছেন
     বর্তমানে প্রত্যেক কাঁসা শিল্পী দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি পান। বিপনন ব্যবস্থার উন্নতি না হলে হয়তো কোনও একদিন এই ধাতুশিল্প পাথরকুচি গ্রাম থেকে হারিয়ে যাবেসেদিন ধাতু পেটানোর ঠুং-ঠ্যাং শব্দও হারিয়ে যাবে গ্রামের পরিবেশ থেকে
Advertisement
Previous articleস্বপ্ন দিয়েই শুরু হয়েছিল যাত্রাসিদ্ধি তলার মহোৎসব
Next articleযৌন সংসর্গেও ছড়াতে পারে ডেঙ্গু

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here