Advertisement
সর্বানী ধারা : বোলপুর থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার এগোলেই চৌপাহাড়ী জঙ্গল। শাল-সেগুনে আবৃত জঙ্গলটি খুব বেশি ঘন না হলেও, এককালে যে বেশ গভীর ছিল তা অনায়াসেই বলা যায়। এর পাশেই দ্বারোন্দা গ্রাম। ব্রাহ্মণ, বৈদ্য প্রধান গ্রামটি খুব বেশি নামী না হলেও বেশ পুরনো বলা যায়। গ্রামটির নামের সাথে জড়িয়ে আছে বহু পুরনো দ্বারোকাচণ্ডী মাতার মন্দির। এই মন্দিরের নামেই হয়তো গ্রামটির নাম হয়েছে দ্বারোন্দা।
অন্য আর একটি কারণেও এই গ্রামটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। দ্বারোকাচণ্ডী মাতা মন্দিরের খুব কাছেই বৃটিশ আমলের একটা নীলকুঠি ছিল। যদিও তা আজ আর নেই। শুধু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে তার-ই কিছু ধ্বংসাবশেষ।
শোনা যায় ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড আস্কাইন নামের ১৯ বছর বয়সী এক ইংরেজ যুবক চিপ্ সাহেব (জন চিপ্)-এর সহকারী ছিলেন। সে সময় চিপ্ সাহেব ডেভিড আস্কাইনকে কোনও কারণে কিছু আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। ডেভিড আস্কাইন তখন এই দ্বারোন্দা গ্রামে একটা নীল কোম্পানি গড়ে তোলেন। নাম দেন আস্কাইন কোম্পানি। এই নীলকুঠিটি তাঁরই তৈরি বলে জানা যায়। আজ তার সবই প্রায় বিলুপ্তির পথে।
নীলকুঠির কাছাকাছি সাহেবদের একটা হাতিশাল ছিল। এখনও যাকে বলা হয় ‘হাতি বাঁধা ঢিপি’। শোনা যায় আজও নাকি গ্রামবাসীরা এখানে নীল গাছ জন্মাতে দেখেন। নীলকুঠি সংলগ্ন স্থানে কয়েক দশক আগেও ঝোপ-জঙ্গলে ভরা ছিল। আজ তার চেহারা পাল্টে গেছে। ধীরে ধীরে জনবহুল হয়ে উঠছে। আর সেই সাথে নীলকুঠির ইতিহাসও হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।
নীলকর সাহেবরা কেমন নির্মম ছিল তা ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে রক্তাক্ষরে। আস্কাইন কোম্পানিও তার ব্যতিক্রম ছিল না বলেই জানা যায়। গ্রামের চাষিদের চাবুকাঘাতে বাধ্য করতো নীল চাষে। চাষিদের চক্ষুজলে নীলকুঠি ভরে উঠতো নীলের বাক্সে।
অনেকে বলেন, রাতের বাতাসে কান পাতলে আজও নাকি শোনা যায় নীলকর সাহেবদের নির্লজ্জ-নিষ্ঠুর হাসি, চাবুকাঘাতের সপ্ সপ্ শব্দ, নির্বিকার-নিঃস্ব চাষিদের বুক ফাটা আর্তনাদ।
কয়েক দশক আগেও নীল তৈরির চৌবাচ্চা দেখতে পাওয়া যেতো এখানে। এখন তার শেষ চিহ্নটুকুও খুঁজে পাওয়া যায় না। সরকারিভাবে কোনও দিনও এই স্থানটিকে ঐতিহাসিকভাবে তেমন গুরুত্ব দেওয়া বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। হয়তো কোনও একদিন শুধু নাম-ই থেকে যাবে ‘নীলকুঠি’, হারিয়ে যাবে তার পুরনো ইতিহাস।
Advertisement