Advertisement
বিজয় ঘোষাল : শেষ কবে চিঠি পেয়েছিলাম, ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে পড়ে গ্রীষ্মের দুপুরবেলায় ঠা ঠা রোদ্দুরে খাকি পোশাক, মাথায় টুপি, কাঁধে ব্যাগ, সাইকেলে চাপা পোস্টম্যানের হাত থেকে খামে ভরা আমার প্রিয় বন্ধুর লেখা শেষ চিঠি পেয়েছিলাম।
এমনি করে পোস্টম্যান গ্রামে গ্রামে চিঠি বিলি করতো এক সময়। যা এখন আর দেখা যায় না। আগে যখন মোবাইল ছিল না, বাবা বা মা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো দূরে থাকা ছেলের চিঠি প্রাপ্তির অথবা বিয়ে হয়ে যাওয়া কোনও মেয়ের চিঠির আশায়। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সাইকেলের বেল বাজিয়ে পোস্টম্যান যখন জানান দিতো তাঁর আগমনের বার্তা, তখন এক আত্মীয় আর এক আত্মীয়ের হাতের লেখা কোনও বার্তার অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে থাকতো। মনের অজান্তে পোস্টম্যানকে জিগ্যেস করতো, ‘আমার কোনও চিঠি আছে?’ না এসে থাকলে পোস্টম্যান বলতো, ‘না, হয়তো এবার আসেনি, পরে আসবে’।
চিঠির প্রাপকরা প্রতি উত্তরের জন্য পোস্টাপিসের পঞ্চাশ পয়সা মূল্যের হলুদ পোস্ট কার্ড বা খাম কিনতো। কেউ বা ডাক টিকিত কিনে আলাদা খামে লাগিয়ে চিঠি লিখে দিয়ে আসতো ডাক বিভাগের নির্দিষ্ট ডাক বাক্সে।
কিন্তু বর্তমানে ওই রীতি-রেওয়াজ আর চোখে পড়ে না। হারিয়ে গিয়েছে কালের গর্ভে। এখনকার প্রজন্ম সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বার্তা বহন করে। হাতের লেখা চিঠির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
পরিবর্তনের রঙ মেখে আর কি ফিরবে না সেই সব চিঠিরা। হয়তো কোনও এক গ্রীষ্মের দুপুরে খাকি পোশাক, মাথায় টুপি, কাঁধে ব্যাগ, সাইকেলে চেপে পুরনো পোস্টম্যান আবার এসে দাঁড়াবে প্রিয় বন্ধুর চিঠি নিয়ে। চিঠির পাতায় জ্বলজ্বল করবে তাঁর কথা, ‘বন্ধু কেমন আছো? আমি ভালো আছি…’।
Advertisement