Advertisement
সজয় পাল : পেরিয়ে গেল বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসব দুর্গোৎসব ও সেই সাথে আলোকোজ্জ্বল দীপাবলি। এই দিনগুলিতে শহরাঞ্চলের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামগুলিও সেজে উঠেছিল অপূর্ব আলোর মায়ায়। বিশেষ করে দীপাবলির বিদঘুটে অন্ধকার রাত যেন জব্দ হয়ে গিয়েছিল মানুষের ইলেকট্রিকের সাজবাতির কাছে। খুদে এলইডির সঙ্গে বড়ো এলইডির বাতিগুলিও মানুষকে বিস্মিত করে তুলেছিল।
শুধুমাত্র উৎসবের দিনগুলিতে নয়, প্রায় সারা বছরই এখন আলোর মায়ায় সাজিয়ে তোলা হয় আমাদের চারপাশ। দিন আর রাতের তফাৎ বোঝা এখন মুশকিল। শুধুমাত্র দিনের আলোর ওপর নির্ভর করে দিনযাপনের প্রয়োজন প্রায় শেষ। অবশ্য এর জন্য অতিরিক্ত কয়লা বা খনিজ তেল পোড়ানোর প্রয়োজন পড়ে। তাতে পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধির পাশাপাশি খনিজ সম্পদের পরিমাণও হ্রাসের দিকে এগিয়ে যায়।
তবে এসব মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে, শুধুমাত্র নিজের কথা ভেবেই স্বার্থপরের মতো ব্যবহার করছে। পরিবেশের অন্য কারও স্বার্থের কথা তার মনেই আসে না। সমাজে টিকে থাকতে গেলে আলোর প্রয়োজন আছে ঠিকই, কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তারও কিছু সীমারেখা নির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। এতে যেমন মানব সভ্যতার আয়ু দীর্ঘস্থায়ী হবে, রক্ষা পাবে অন্য জীবকুলও। পরিবেশে তাদেরও বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার আছে।
গবেষকদের একাংশ ইতিমধ্যেই আলোর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারকে ‘আলোক দূষণ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তারা অত্যন্ত সহজভাবে পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন, আলোক দূষণের ব্যাপক প্রভাব পড়ে সমগ্র জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ, এমনকি নিরীহ উদ্ভিদের উপর। মানুষ নিজেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উদ্ভিদ দিনের পাশাপাশি রাতের অন্ধকারেও তার পরাগায়ন ঘটিয়ে থাকে। এই কাজে তাকে মথ, গুবরে পোকা বা ছাড়পোকার মতো নিশাচর পতঙ্গরা দারুণভাবে সহযোগিতা করে। তবে আলোক দূষণের প্রভাবে ওই সমস্ত পতঙ্গরা ক্রমশ দূরে সরে যাওয়ায় লোকালয়ের কাছাকাছি উদ্ভিদের রাতের পরাগায়ন এখন আর তেমনভাবে হতে পারে না। এছাড়াও আলোক দূষণের প্রভাবে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিয়াল বা বনবিড়ালের মতো লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের রাতের দৃষ্টিশক্তি। রাতের অন্ধকারে চুপিসারে খাদ্য আহরণে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। অপরদিকে ওই একই কারণে বাদুড় বা পেঁচার মতো নিশাচরদের সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে ক্রমশ। জোনাকিরা এখন এতটাই কমে গিয়েছে আলোক দূষণের প্রভাবে, আগামী কয়েক দশক পর হয়তো গভীর জঙ্গল ছাড়া তাদের দেখা পাওয়া-ই ভার হয়ে উঠবে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাতের পরিযায়ী পাখিরাও। আলোক দূষণের প্রভাবে দিকভ্রান্ত হয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে ভুল পথে।
তাই পরিবেশের কথা বিবেচনা করে, অন্তত ওই নিরীহ প্রাণী বা উদ্ভিদের কথা চিন্তা করে যতটা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় আলোর ব্যবহার কমাতেই হবে মানুষকে। তাকে পরিবেশ ও মানব সমাজ উভয়ই বেঁচে থাকা সহজ হবে।
Advertisement