স্টেলথ প্রযুক্তি জানার আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন রাডার ব্যবস্থার কার্যকলাপ সম্পর্কে। আসলে রাডার বা RADAR (Radio Detection and Ranging) হল এমন একটি প্রযুক্তি, যেখানে রেডিও তরঙ্গকে ব্যবহার করে দূরবর্তী যে কোনও বস্তুর অবস্থান, দিক, দূরত্ব ও গতি নির্ণয় করা সম্ভব।

চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানের যুগ প্রায় শেষের দিকে। সমগ্র বিশ্ব এখন পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান হাতে পেতে চাইছে। কারণ এই প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান যে কোনও সময়ে যুদ্ধের রঙ বদলে দিতে পারে। এই বিমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে স্টেলথ প্রযুক্তি। অর্থাৎ শত্রুপক্ষের রাডার ব্যবস্থাকে অনেকটাই ফাঁকি দেওয়া সম্ভব। কিন্তু কী এই স্টেলথ প্রযুক্তি?
স্টেলথ প্রযুক্তি জানার আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন রাডার ব্যবস্থার কার্যকলাপ সম্পর্কে। আসলে রাডার বা RADAR (Radio Detection and Ranging) হল এমন একটি প্রযুক্তি, যেখানে রেডিও তরঙ্গকে ব্যবহার করে দূরবর্তী যে কোনও বস্তুর অবস্থান, দিক, দূরত্ব ও গতি নির্ণয় করা সম্ভব।
প্রথমে রাডার যন্ত্র থেকে শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ প্রেরণ করা হয়। সামনে কোনও বস্তু (বিমান, জাহাজ, মিসাইল) পড়লে এই তরঙ্গ বাধাপ্রাপ্ত হয়। বাধাপ্রাপ্ত তরঙ্গের কিছু অংশ আবার রাডার যন্ত্রে ফিরে আসে। পরে মুহূর্তের মধ্যে বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারা যায় বস্তুটির দিক, অবস্থান, দূরত্ব ও গতি। কিন্তু বস্তুটিতে যদি স্টেলথ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তাহলে কোনওভাবেই সেই রেডিও তরঙ্গ আর রাডারে ফিরে আসে না। অর্থাৎ বস্তুটি অজ্ঞাতই থেকে যায়।
আসলে স্টেলথ প্রযুক্তি হল এমন একটি কৌশল, যার সঙ্গে অনেকেই নিনজা কৌশলের তুলনা করেছেন। মধ্যযুগে জাপানী গুপ্ত ঘাতকেরা এক ধরণের যুদ্ধ কৌশল ব্যবহার করতেন। সেখানে নিজেরা অত্যন্ত সাহসিকতায় সম্পূর্ণ ছদ্মবেশে শত্রুর ঘাঁটিতে প্রবেশ করতেন। পরে সুযোগ বুঝে শত্রুর উপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ফিরে আসতেন। সারা বিশ্বের কাছে জাপানী যোদ্ধাদের এই নিনজা কৌশল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।
এবার সেই কৌশলই যুদ্ধ বিমান, জাহাজ বা ডুবোজাহাজে যুক্ত করতে চাইছে সমগ্র বিশ্ব। যাতে অতি সহজেই রাডার ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে শত্রু এলাকায় ঢুকে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফিরে আসা যায়।
স্টেলথ প্রযুক্তি –তে রেডিও তরঙ্গকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য যুদ্ধ বিমান বা জাহাজগুলিকে বিশেষভাবে নকশা করা হয়। যাতে শত্রুপক্ষের রাডার থেকে নিঃসৃত রেডিও তরঙ্গ গায়ে লেগে প্রতিফলিত হয়ে অন্যদিকে চলে যেতে পারে। কোনওভাবেই রাডারে ফিরে যেতে পারে না। এছাড়াও রাডার শোষণকারী বিশেষ পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যুদ্ধ বিমান বা যুদ্ধ জাহাজের শরীর। ইঞ্জিন যাতে বেশি গরম না হতে পারে বা ইঞ্জিনে যেন বেশি শব্দ না হয়, সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয় স্টেলথ প্রযুক্তি –তে।
ইতিমধ্যেই আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপের কয়েকটি দেশের হাতে স্টেলথ প্রযুক্তি –র যুদ্ধ বিমান চলে এসেছে। ভারতের হাতেও এক দশকের মধ্যে আসতে চলেছে এই প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান।