এমনই এক রহস্যময় ঘটনা তুঙ্গুস্কা বিস্ফোরণ। ঘটনাটি স্থানীয় অনেকেই চাক্ষুষ করেছিলেন সে সময়ে। বিস্ফোরণের আলো ও শব্দে কেঁপে উঠেছিলেন অনেকেই। বহু দূর থেকেও তার আস্ফালন অনুভব করেছিলেন অনেকে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনাটি আসলে কি ছিল, সে সম্পর্কে আজও সঠিক কোনও ধারণা কেউ দিতে পারেননি।

পৃথিবীতে এমনও কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার রহস্য আজও কোনওভাবেই সমাধান করা সম্ভব হয়নি। বহু চেষ্টার পরেও সে রহস্য রহস্যই থেকে গিয়েছে। স্বল্প কিছু তথ্যের উপর নির্ভর করে সামান্য কিছু বিবৃতি তৈরি করতে হয়েছে মাত্র। তাতে রহস্য বেড়েছে বই কমেনি কিছুই। পরে সেই ঘটনাটিগুলিই লোকমুখে প্রচার পেতে পেতে অতি রহস্যের আকার নিয়ে গিয়েছে।
এমনই এক রহস্যময় ঘটনা তুঙ্গুস্কা বিস্ফোরণ। ঘটনাটি স্থানীয় অনেকেই চাক্ষুষ করেছিলেন সে সময়ে। বিস্ফোরণের আলো ও শব্দে কেঁপে উঠেছিলেন অনেকেই। বহু দূর থেকেও তার আস্ফালন অনুভব করেছিলেন অনেকে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনাটি আসলে কি ছিল, সে সম্পর্কে আজও সঠিক কোনও ধারণা কেউ দিতে পারেননি।
আসলে ঘটনাটি ছিল ১৯০৮ সালের ৩০ জুনের এক সকালবেলার। অন্য সাধারণ দিনের মতোই দিনটা শুরু করতে যাচ্ছিলেন সাইবেরিয়ার ক্রাসনোইয়ার্স্ক ক্রাই অঞ্চলের পডকামেনায়া তুঙ্গুস্কা নদীর তীরবর্তী ইভেনকি ও রাশিয়ান শিকারিরা। ভোরের আকাশ ছিল একেবারেই পরিষ্কার। রাতের বরফও ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে তখন।
ঠিক সকাল যখন প্রায় সোয়া সাতটা (স্থানীয়দের বিবৃতি অনুযায়ী), হঠাৎ আকাশে একটা উজ্জ্বল বিন্দু দেখা যায়। ক্রমে সেই বিন্দু আরও বড় হতে থাকে। প্রথমে তার রঙ ছিল সাদা-নীল। পরে তা কমলা ও আগুনের গোলার মতো হয়ে ওঠে। এই ঘটনায় স্থানীয় সমস্ত পশু-পাখি এলাকা ছেড়ে ভয়ে পালাতে শুরু করে। মানুষেরাও পাহাড়ের দিতে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে যায়।
স্থানীয়দের বিবৃতি থেকে সে সময়ে আরও জানা যায়, কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই আগুনের গোলা তুঙ্গুস্কা নদীর প্রায় উপরে চলে আসে। যেন মনে হয় সুদূরের সূর্য নিজেই পৃথিবীর কাছে চলে এসেছে। সমগ্র বাতাস জুড়ে তখন শিসের মতো অদ্ভুত গম্ভীর অথচ তীক্ষ্ণ শব্দ ছড়িয়ে পড়েছে।
আগুনের গোলাটি যখন ভূমি থেকে ৫-১০ কিলোমিটার উপরে, হঠাৎ বিশাল এক বিস্ফোরণ ঘটে যায়। তার কয়েক সেকেন্ড পর ভেসে আসে কান ফাটা আওয়াজ। সেই আওয়াজ চলতে থাকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত। আকাশে কালো ধোঁয়ার স্তম্ভ উঠতে থাকে। দিনের বেলাতেও হঠাৎ নেমে আসে সন্ধ্যার অন্ধকার। এই বিস্ফোরণের তাপ তরঙ্গ ভেসে যায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত। নিমেষের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায় ওই অঞ্চলের ২,১৫০ বর্গ কিলোমিটার যুক্ত সাইবেরিয়ান জঙ্গল। পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় ৮ কোটি গাছ। বিস্ফোরণের ফলে যে ভূ-কম্পন তৈরি হয়েছিল, সেই কম্পন পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপ পর্যন্তও।
বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল, ওই বিস্ফোরণে যে শক্তি তৈরি হয়েছিল, তার মাত্রা ছিল ১০-১৫ মেগাটন। যা ছিল হিরোশিমা পরমাণু বোমার শক্তির চেয়েও প্রায় ১ হাজার গুণ বেশি। এই শক্তির প্রভাবে বহু দূর অঞ্চলের বাড়ির কাচও ভেঙে পড়ে যায় অবলীলায়। যদিও এই তুঙ্গুস্কা বিস্ফোরণ আসলে কীসের থেকে উৎপন্ন হয়েছিল, তার সমাধান আজও কেউ করতে পারেননি।
এই ঘটনার সঙ্গে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু পরমাণু বোমার সূত্র তখনও আবিস্কার করা হয়ে ওঠেনি। তাই সেই সম্ভাবনা এক বাক্যে বাদই দেওয়া যায়। তবে এই ব্যাপারে কয়েকটি ব্যাখ্যা উপহার দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে সবচেয়ে জোরালো ব্যাখ্যাটি ছিল উল্কা বা ধূমকেতু পতনের ঘটনা।
বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল, ওই সময়ে ওই অঞ্চলে ৫০-৬০ মিটার ব্যাসের কোনও উল্কা বা ধূমকেতু টুকরোর আবির্ভাব ঘটেছিল। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর ভূমি থেকে ৫-১০ কিলোমিটার উপরে কোনও কারণে সেটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। যদিও মাটিতে ওই অঞ্চলের কাছাকাছি কোথাও গর্তের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন সময়ে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সামনে আসে মিনি ব্ল্যাক হোল, এলিয়েন, ভূমির গভীরে গ্যাস বিস্ফোরণ বা অ্যান্টিমেটার বিস্ফোরণের মতো ঘটনা। যদিও এই ঘটনার সঠিক কোনও ব্যাখ্যা আজও কেউ দিতে পারেননি।