City of Z আসলে আমাজন জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া একটি সভ্যতা। এই সভ্যতার উদ্ভব কবে ও কীভাবে ঘটেছিল, তা অবশ্য সুনির্দিষ্ট করে কেউই বলতে পারেন না। অনেকে অবশ্য আজও বিশ্বাস করেন না এই City of Z সভ্যতার অস্তিত্বের কথা। অনেকে গুজব বলে উড়িয়েও দিয়েছেন।

পৃথিবীতে যতগুলি রহস্যের সমাধান আজও পুরোপুরিভাবে করতে পারেননি গবেষকেরা, আমাজন তার অন্যতম। সর্ববৃহৎ এই জঙ্গলটি সত্যিই রহস্যে ঘেরা। আয়তনে প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। যা সুবিশাল ভারতভূমির থেকেও প্রায় ৬ গুণ বড়। ৯টি দেশে বিস্তৃত এই জঙ্গল। যার প্রায় ৪০ শতাংশ রয়েছে ব্রাজিলে।
আমাজন যেমন পৃথিবীর এক বৃহৎ অক্সিজেন ভাণ্ডার, তেমনি একে এক অন্যতম রেইনফরেস্টও বলা হয়। গবেষণায় জানা গিয়েছে, এই জঙ্গল নিজেই নিজের বৃষ্টি তৈরি করে নেয়। অর্থাৎ এই জঙ্গলের ঘনত্ব এতটাই বেশি, প্রায় প্রতিদিনই সুবিশাল জলীয় বাষ্প থেকে আকাশের মেঘ তৈরি হয়। আর তা থেকে নেমে আসে ঘন বৃষ্টি। এখানকার গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার মিলিমিটার। এর পাশাপাশি আরও অবাক করা তথ্য, এই জঙ্গলের জলীয় বাষ্প থেকে সৃষ্ট মেঘ ভেসে গিয়ে সুদূর পশ্চিম আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, এমনকি উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত পৌঁছিয়েও বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে থাকে।
হাজার রহস্যে মোড়া এই আমাজন জঙ্গলের অন্যতম এক রহস্য City of Z। যে রহস্যের সমাধান খুঁজতে গিয়ে ১৯২৫ সাল নাগাদ পার্সি ফসেট নামের এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা তাঁর ছেলে সহ গোটা অভিযাত্রী দল নিয়েই হারিয়ে যান। তাঁর এই রহস্যময়ভাবে হারিয়ে যাওয়াকে ঘিরে ওই এলাকায় আজও ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক গুজব বা কল্প কাহিনি।
গবেষকদের দাবি, City of Z আসলে আমাজন জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া একটি সভ্যতা। এই সভ্যতার উদ্ভব কবে ও কীভাবে ঘটেছিল, তা অবশ্য সুনির্দিষ্ট করে কেউই বলতে পারেন না। অনেকে অবশ্য আজও বিশ্বাস করেন না এই City of Z সভ্যতার অস্তিত্বের কথা। অনেকে গুজব বলে উড়িয়েও দিয়েছেন। তবে আধুনিক স্যাটেলাইট ও লিডার প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সভ্যতার অস্তিত্ব যে এক সময়ে ছিল, তার একাধিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
স্যাটেলাইট ও এই লিডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা গিয়েছে, ওই অঞ্চলে এক উন্নত সভ্যতার অস্তিত্ব সত্যিই ছিল। যার কৃষিকাজ, নগর গঠন ও সমাজ ব্যবস্থা ছিল সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার থেকে অনেকটাই এগিয়ে।
গবেষকেরা আমাজন জঙ্গলের ওই অঞ্চলের কাছাকাছি কিছু অঞ্চলে এক ধরণের মাটির অস্তিত্ব পেয়েছেন। যাকে তাঁরা নাম দিয়েছেন Terra Preta। এটি ছিল এক ধরণের উর্বর অথচ কৃত্রিম মাটি। এই মাটির সঙ্গে পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের মাটির আদৌ কোনও মিল নেই। একাধিক গবেষক এই কৃত্রিম মাটিকে City of Z সভ্যতারই নিজস্ব তৈরি করা মাটি হিসেবে অভিহিত করেছেন। শত শত বছর পরেও এই মাটির উর্বরাশক্তি একই থাকে বলে তাঁদের অনুমান।
যদিও কীভাবে এই সভ্যতা আমাজন এর মতো এক গভীর জঙ্গলে গড়ে উঠেছে তা অবশ্য কেউই বলতে পারেন না। তবে অনেকেই দাবি করেছেন, এই সভ্যতায় প্রায় ৫ থেকে ১০ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করত। তারা জঙ্গলের ক্ষতি না করে বরং জঙ্গলকে কাজে লাগিয়েই শহর, রাস্তা, কৃষিক্ষেত্র নির্মাণ করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। পরে অবশ্য কোনও এক অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সমগ্র সভ্যতাটাই ধ্বংস হয়ে যায়।