বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার গুড়নী গ্রামের মহন্ত পরিবারের বাসন্তী পুজো এই রকমই একটি সাবেকি ধারার পুজো। পুজোর বয়স প্রায় দু’শো বছরেরও বেশি। ১৮০০ সাল নাগাদ এই পুজো প্রথম শুরু করেন রামানন্দ বৈরাগী। পাঁচ প্রজন্ম ধরে এই পুজো আজও হয়ে চলেছে। রামানন্দ বৈরাগীর পর এই পুজোর দায়িত্ব পান তাঁর ছেলে রামেশ্বর মহন্ত। এরপর একে একে রামেশ্বর মহন্তের ছেলে রামশশী মহন্ত, তাঁর ছেলে শরদিন্দু মহন্ত পূর্বপুরুষের ধারা বজায় রেখে এই পুজো চালিয়ে গিয়েছেন। |

জনদর্পণ ডেস্ক : রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে, রামচন্দ্র লঙ্কাধিপতি রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করার আশায় অকালে দুর্গা পুজো করেছিল। শরৎকালের সেই পুজো দেবীর অকালবোধন নামে পরিচিত। তবে এই শারদীয় দুর্গা পুজোরও অনেক আগে বাংলায় শুরু হয়েছিল বাসন্তী পুজো। এখানে শাস্ত্র মতে অবশ্য এই দুই দেবী একই। বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য এখানে দেবী দুর্গাকে ‘বাসন্তী’ বলা হয়েছে।
যদিও শারদীয় দুর্গোৎসবকেই এখন বাঙালিরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই অতি দ্রুত কমে যাচ্ছে বাসন্তী পুজোর জৌলুস। আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েও যে পুজোগুলি এখনও পর্যন্ত টিকে রয়েছে সেগুলি সবই প্রায় সাবেকি ধারার। হাতে গোনা মাত্র কয়েকটিই রয়েছে সার্বজনীন বা বারোয়ারি।
বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার গুড়নী গ্রামের মহন্ত পরিবারের বাসন্তী পুজো এই রকমই একটি সাবেকি ধারার পুজো। পুজোর বয়স প্রায় দু’শো বছরেরও বেশি। ১৮০০ সাল নাগাদ এই পুজো প্রথম শুরু করেন রামানন্দ বৈরাগী। পাঁচ প্রজন্ম ধরে এই পুজো আজও হয়ে চলেছে।
রামানন্দ বৈরাগীর পর এই পুজোর দায়িত্ব পান তাঁর ছেলে রামেশ্বর মহন্ত। এরপর একে একে রামেশ্বর মহন্তের ছেলে রামশশী মহন্ত, তাঁর ছেলে শরদিন্দু মহন্ত পূর্বপুরুষের ধারা বজায় রেখে এই পুজো চালিয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে শরদিন্দু মহন্তের তিন ছেলে সুশান্ত কুমার মহন্ত, প্রশান্ত কুমার মহন্ত এবং অচিন্ত কুমার মহন্ত এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন।
মহন্ত পরিবারের সদস্যা মণিকা মহন্ত জানালেন, তাঁদের বাসন্তী পুজোয় প্রতি বছর ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত মঙ্গলচণ্ডী গানের আয়োজন করা হয়। দশমীর ভোরে ‘বুড়া মঙ্গলচণ্ডী’-র পুজো দেওয়া হয়। এবং সেই সঙ্গে ‘বুড়ির নাচ’ ও ‘মশাল নাচ’-এর আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও জানালেন, “শারদীয় দুর্গোৎসবের থেকেও তাঁরা অনেক বেশি আনন্দ উপভোগ করেন এই বংশপরম্পরার বাসন্তী পুজোতে। এই একটা সময়েই পরিবারের সকলেই প্রায় একত্রিত হন এখানে। একপ্রকার হেসে-খেলেই কেটে যায় পুজোর চারটে দিন। আর দশমী এলেই মনের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। কারণ বিসর্জনের পর আবার তো প্রতীক্ষা করতে হয় দীর্ঘ এক বছরের।”