১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮, ফিরে দেখা মারাদোনার ফুটবল ক্যারিয়ার

Advertisement
মারাদোনা ফুটবল জীবনে পেয়েছেন একাধিক সম্মান। তাঁর অন্যতম সেরা পুরস্কার অবশ্যই ২০০০ সালে ফিফা দ্বারা ঘোষিত ‘শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়’ নির্বাচন। ওই বছর ‘শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়’ বেছে নেওয়া হয় অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ম্যাগাজিন ও বিচারক দ্বারা ভোট প্রদানের মাধ্যমে। অনলাইন ভোটে মারাদোনা ৫৩.৬ শতাংশ আর পেলে ১৮.৫৩ শতাংশ ভোট পান। তা সত্ত্বেও ‘ফুটবল ফ্যামিলি’ গঠন করে ফিফা ওই বছর মারাদোনা ও পেলে উভয়কেই ‘শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়’ ঘোষণা করেছিল।

১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮, ফিরে দেখা মারাদোনার ফুটবল ক্যারিয়ার
১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮, ফিরে দেখা মারাদোনার ফুটবল ক্যারিয়ার 2

অনলাইন পেপার : ফুটবলের রাজপুত্র ডিয়েগো মারাদোনা আর নেই। গত ২৫ নভেম্বর বুয়েনাস আয়ার্সে নিজের বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়েছেন। কিন্তু ফুটবল জগতে রেখে গিয়েছেন তাঁর বাঁ’পায়ের কৃতিত্ব। ফুটবলের প্রসঙ্গ উঠলে বরাবরই ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সম্রাট পেলের সঙ্গে তাঁর তুলনা চলে। এবং এই তুলনা বর্তমানের মেসি-রোনালদোর থেকেও বেশ জোরালো হয়েই আলোচনায় উঠে আসে। যদিও দুই কিংবদন্তির মধ্যে কে সেরা এই আলোচনা চলতেই থাকবে সারা জীবন, যতদিন ফুটবল বেঁচে থাকবে প্রত্যেকের হৃদয়ে। কিন্তু সে সবের কোনও প্রসঙ্গে আজ না গিয়ে বরং ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মারাদোনার ফুটবল ক্যারিয়ার সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছুটা আলোচনা করা যাক।

ফুটবল ক্যারিয়ারের সূত্রপাত : তাঁর পুরো নাম ডিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা। ৩০ অক্টোবর ১৯৬০ সালে তিনি জন্মেছিলেন আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনাস আয়ার্সে লানুসের পলিপলিনিকো আবিতা হাসপাতালে। তিনি ছিলেন ৭ ভাই-বোনের মধ্যে ৫ম। মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই তাঁর ফুটবল প্রতিভা প্রকাশ পেতে শুরু করে। আর্জেন্টিনোস জুনিয়োর্সে থাকার সময়ে ১২ বছর বয়সে বলবয় হিসাবে যোগদানকালে একটি ম্যাচের প্রথমার্ধের বিরতিতে ফুটবল স্কিল দেখিয়ে তিনি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।

ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ার : ২০ অক্টোবর ১৯৭৬ সালে আর্জেন্টিনোস জুনিয়োর্সের হয়ে ১৬ নাম্বার জার্সি গায়ে তিনি প্রথমবারের জন্য ম্যাচ খেলতে নামেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছরেরও কম। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি এই ক্লাবে ছিলেন। ১৬৭টি ম্যাচ খেলে তিনি করেছিলেন ১১৫টি গোল।

ওই বছরেই তিনি যোগ দেন আর্জেন্টিনার অন্যতম সেরা ক্লাব বোকা জুনিয়োর্সে। কিন্তু এর ঠিক ১ বছর পর অর্থাৎ ১৯৮২ সালের ফিফা বিশ্বকাপের পর তিনি আর্জেন্টিনা ছেড়ে পাড়ি দেন ইউরোপিয়ান ক্লাবে। এখানে তাঁর প্রথম ক্লাব বার্সেলোনা। মারাদোনার কিংবদন্তী হওয়ার সূত্রপাত মূলত এই ক্লাবে খেলার সময় থেকেই। ১৯৮৩ সালে একবার বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ম্যাচ ছিল। ওই ম্যাচে তাঁর করা একটি সেরা গোলেই বার্সেলোনা জয়ী হয়েছিল। বলা বাহুল্য, রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকরা প্রথমবারের জন্য বিপক্ষ কোনও ফুটবলারকে প্রশংসাও করেছিল।

১৯৮৪ সালের শেষ দিকে মারাদোনা ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন। এই ক্লাবেই তিনি তাঁর ফুটবল জীবনের সেরা সময় কাটিয়েছেন। জিতেছেন একের পর এক শিরোপা। এমনকি ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ও তিনি এই ক্লাবে থাকার সময়েই পেয়েছিলেন। আবার অন্য দিক থেকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের অধিকাংশ কেলেঙ্কারিগুলিও এই সময়েই ঘটেছিল। একবার কোকেনের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার কারণে তাঁকে মোটা অঙ্কের জরিমানাও গুনতে হয় এই সময়।

১৯৯২ সালে নাপোলি ছাড়ার পর তিনি ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে সেভিয়া (১৯৯২-৯৩), নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ (১৯৯৩-৯৪) ও বোকা জুনিয়োর্স (১৯৯৫-৯৬)-এ ছিলেন। তারপর বিশ্ব ফুটবলকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানিয়েছেন। ক্লাব স্তরে তিনি ৫৮৯টি ম্যাচে ৩১১টি গোল করেছেন।

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ : পরপর ৪টি বিশ্বকাপে তিনি যোগদান করেন। ১৯৮২ সালের প্রথম বিশ্বকাপে তিনি আশানুরূপ পারফর্মেন্স দেখা পারেননি। তবে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ লেখা থাকবে তাঁর নামের সঙ্গেই। কারণ ধরেই নেওয়া হয়, এই বিশ্বকাপ ছিল মূলত তাঁরই। সম্পূর্ণ একক ক্ষমতায় নিজের দেশ আর্জেন্টিনাকে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন। বাঁ’পায়ের অসাধারণ জাদুকরী স্কিল দেখিয়ে সেবার তিনি সমগ্র বিশ্বকেই স্তম্ভিত করে দিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা তাঁর ‘দ্য হ্যান্ড অফ গড’ গোলটি বাদ দিলে ১৯৮৬ সাল ছিল সম্পূর্ণভাবে মারাদোনাময়। ওই বিশ্বকাপে তিনি নিজে যেমন গোল করেছিলেন, তেমনি তাঁর সতীর্থদেরও গোল করতে সহযোগিতা করেছিলেন।

১৯৯০ বিশ্বকাপটিও লেখা থাকত তাঁর নামের সঙ্গেই, যদি না পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপ পেত। নিজে গোড়ালির চোটের জন্য সম্পূর্ণভাবে পুরনো কায়দায় খেলতে পা পারলেও সতীর্থদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছিলেন। কিন্তু ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে ০-১ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। যদিও ফাইনালের ওই একমাত্র গোলটি ছিল বিতর্কিত।

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ ছিল ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম এক কলঙ্কিত বিশ্বকাপ। কারণ প্রথম দুটি ম্যাচ খেলার পরেই অবৈধ ড্রাগ নেওয়ার অপরাধে তাঁকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর তার পরপরই ওই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় পর্ব থেকে আর্জেন্টিনাও বিদায় নেয়। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপই ছিল মারাদোনার শেষ আন্তর্জাতিক ফুটবল ময়দান। দেশের হয়ে তিনি ৯১টি ম্যাচে ৩৪টি গোল করেছেন।

মারাদোনার জীবনের কলঙ্কিত অধ্যায়টুকু বাদ দিলে শুধুমাত্র ফুটবলার হিসাবে এই বিশ্বে তাঁর মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় আগামীতে খুব কমই জন্মাবে। কারণ সবাই বড়ো ফুটবলার হতে পারলেও মারাদোনা হতে পারে না। তাঁর ফুটবল জীবনে তিনি পেয়েছেন একাধিক সম্মান। তাঁর অন্যতম সেরা পুরস্কার অবশ্যই ২০০০ সালে ফিফা দ্বারা ঘোষিত ‘শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়’ নির্বাচন। ওই বছর ‘শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়’ বেছে নেওয়া হয় অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ম্যাগাজিন ও বিচারক দ্বারা ভোট প্রদানের মাধ্যমে। অনলাইন ভোটে মারাদোনা ৫৩.৬ শতাংশ আর পেলে ১৮.৫৩ শতাংশ ভোট পান। তা সত্ত্বেও ‘ফুটবল ফ্যামিলি’ গঠন করে ফিফা ওই বছর মারাদোনা ও পেলে উভয়কেই ‘শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়’ ঘোষণা করেছিল।

Advertisement
Previous articleবাড়ছে শীত, আশ্রয় দিতে হবে পথের পশুদেরকেও
Next articleপাচার হওয়া ‘টেরাকোটা’ ফিরে পেল নাইজেরিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here