স্বাধীনতার এত বছর পরেও পুরোপুরি আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে পারেনি ভারত

Advertisement

স্বাধীনতার এত বছর পরেও পুরোপুরি পরনির্ভরতার বাধা অতিক্রম করতে পারেনি ভারত। স্বাধীনতার পূর্বে ‘স্বদেশী আন্দোলন’ যেমনভাবে সারা ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, ১৯৪৭-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তেমনভাবে কাউকেই সেই আন্দোলন নিয়ে মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি। তবে নতুন করে এখন ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের আওয়াজ উঠছে সমগ্র দেশ জুড়ে। – ছবি সংগৃহীত

even after so many years of independence India has not become fully self sufficient

সুমন সরকার : আমরা ভারতবাসী এবছর ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছি। আর সেই সঙ্গে স্বাধীনতার ৭৩ বছর পেরিয়ে এখনও আত্মনির্ভর ভারত নিয়ে ভাবছি। এখানে আত্মনির্ভর বলতে অবশ্যই বোঝানো হচ্ছে উৎপাদন ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়া। অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরে স্বদেশী জিনিষের উৎপাদন বাড়িয়ে পরনির্ভরতা থেকে মুক্তিলাভ করা। এটা অবশ্যই মানতে হবে, পরনির্ভরতা যে কোনও দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিকে সব সময়ই বাধা প্রদান করে। তাই ভারতের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিকে সর্বোচ্চ স্তরে তুলে ধরতে এই পরনির্ভরতার বাধা অতিক্রম করা একান্ত আবশ্যক।

     এদেশের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ‘আত্মনির্ভর’ শব্দটি নতুন কিছু নয়। শুধু উচ্চারণের ভঙ্গি পালটিয়েছে মাত্র। স্বাধীনতার পূর্বেও এরকমই একটি শব্দ ব্যবহার করা হত। তখন সেই শব্দটি ছিল ‘স্বদেশী’ নামে। ‘স্বদেশী আন্দোলন’ (১৯০৫-১৯১১ খ্রিস্টাব্দ)-কে কেন্দ্র করে এবং বিদেশী দ্রব্য বর্জন করার সৌভাগ্যে তৎকালীন ভারতের অনেক শিল্পপতিই বৃহৎ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনের গতিকে আরও গতিময় করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই আন্দোলনের ঢেউ নিয়ে বিশেষ কাউকেই আর তেমন মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি। আর তাই স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও ‘আত্মনির্ভর’ শব্দটিকে পুনরায় ব্যবহার করতে হচ্ছে।

     যে কোনও দেশকে ‘আত্মনির্ভর’ হতে মেধার প্রয়োজন অবশ্যই পড়বে। কিন্তু ১৩৭ কোটির এই বিশাল ভারতভূমিতে মেধার ঘাটতি কোনও কালেই ছিল কী? পশ্চিমী বিশ্বের উন্নত দেশগুলির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেসব দেশের নামী-দামি সংস্থা (গুগল, মাইক্রোসফট, নাসা)-য় ভারতীয় মেধারই প্রাধান্য বেশি। বিক্রম সারাভাই, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, হোমা জাহাঙ্গীর ভাবা, চিদাম্বরম পিল্লাই, ড. এপিজে আব্দুল কালাম প্রভৃতির মতো মহান ব্যক্তিত্ব এই দেশেই জন্মিয়েছেন এবং দেশের আত্মনির্ভর ও আর্থিক বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁদের উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। কিন্তু তার পরেও স্বাধীনতার এত বছর পর ভারত প্রকৃত অর্থে আত্মনির্ভর হতে পারল কোথায়?

     স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি তথ্য ঘাঁটলে বোঝা যাবে, প্রতি বছরই ভারত বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর আমদানি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। কিন্তু সেই তুলনায় রপ্তানি বাড়েনি। কৃষি, চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা, বিদ্যুৎ সরঞ্জাম, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যন্ত্রাংশ প্রভৃতির ক্ষেত্রে ভারত এখনও অনেকটাই বিদেশের ওপরই নির্ভরশীল। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এইভাবে পরনির্ভর হয়ে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ হওয়া কী আদৌ সম্ভব?

     এবার যদি বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলির দিকে তাকানো যায়, দেখা যাবে তারা প্রকৃত অর্থেই আত্মনির্ভর। কারণ আমদানির তুলনায় সেসব দেশে নিজেদের তৈরি রপ্তানি দ্রব্যের পরিমাণই বেশি।

     দেশকে আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক গবেষণা ও শিল্পক্ষেত্রে অধিক বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। শিল্পক্ষেত্রের আকার প্রসারিত করার দিকেও নজর দিতে হবে। তাতে কর্মসংস্থানের ঘাটতি কমবে। সেই সঙ্গে মেধা শক্তিরও উপযুক্ত ব্যবহার হবে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, একদিনেই বা এক বছরেই আত্মনির্ভর হওয়া সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে সুপরিকল্পিত পথে এগোতে হবে। আর অবশ্যই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আরও বেশি করে দায়িত্বশীল হতে হবে।

Advertisement
Previous articleএবার সর্দি থেকেও মিলবে মুক্তি, আসছে টিকা
Next articleবাংলার আলপনা নিয়ে বিশেষ কর্মশালা শান্তিনিকেতনের সৃজনীতে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here