Advertisement
ধ্রুব পাল : বড়দিন-এর সাথে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িয়ে আছে সান্তা ক্লজ-এর ভাবনা। যিনি না থাকলে যেন ক্রিসমাসটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ধারণা করা হয়, বড়দিন-এর প্রথম রাতে অর্থাৎ সমস্ত শিশুরা যখন ঘুমের জগতে তলিয়ে থাকে, তখন তাদের ঝুলিয়ে রাখা মোজায় উপহার দিয়ে যান কিংবদন্তীএই সান্তা ক্লজ। কিন্তু কীভাবে এই কিংবদন্তীর জন্ম হল? বা কে এই সান্তা ক্লজ? তা হয়তো অনেকেই জানে না।
আসলে, যাকে আজ সান্তা ক্লজ নামে সারা বিশ্ব চিনছে, সেই মানুষটির রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। লাল পোশাক, লাল টুপি পরা সাদা ধবধবে দাড়িওয়ালা এই লোকটির বিষয়ে জানতে গেলে পৌঁছাতে হবে প্রায় ৩০০ খৃষ্টাব্দেরও আগে।
সান্তা ক্লজের ইতিহাস শুরু হয়েছিল সেন্ট নিকোলাস নামের এক সন্ন্যাসীকে ঘিরে। ২৮০ সালের দিকে এশিয়ার মাইনর অঞ্চল বা বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তাঁর জন্ম হয়েছিল। সততা এবং দয়ার জন্য সবাই তাকেখুবই পছন্দ করত। সম্পদশালী এই মানুষটি সব সময়ইদরিদ্র, দুঃখী এবং অসহায় মানুষকে সাহায্য করতেন। শোনা যায়, একবার তিনি দাস হিসাবে বিক্রি হওয়া থেকে তিনটি মেয়েকে উদ্ধার করেছিলেন এবং পরে তাঁদের বিয়ের জন্য যৌতুক ও যাবতীয় খরচও দিয়েছিলেন।
সেন্ট নিকোলাস-এর এসব দান-ধ্যান ও মহানুভবতার খবর ততদিনেচারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সাথে তিনি মানুষের রক্ষক হিসাবেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর দিন অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বরকে সবাই বিয়ে করার বা কেনাকাটা করার দিন হিসাবেও পালন করতে শুরু করে।
এরপর সেন্ট নিকোলাস-এর পরিচিতি সারা বিশ্বে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আমেরিকায় তাঁর পরিচিতি পৌঁছায় ১৭০০ সালের শেষের দিকে। ১৭৭৩ ও ১৭৭৪ সালে পরপর দু’বার একটি পত্রিকায় এক ডাচ পরিবারের সেন্ট নিকোলাস-এর মৃত্যুবার্ষিকী উৎযাপন করার খবর প্রকাশিত হয়। ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে ডাকা হতো সিন্টার ক্লাস (সেন্ট নিকোলাসের সংক্ষিপ্ত রূপ)।ধারণা করা হয়, পরে এই সিন্টার ক্লাস থেকেই সান্তা ক্লজ নামটির উৎপত্তি হয়েছে।
ক্রিসমাসে সবাইকে, বিশেষ করে বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার রীতি শুরু হয় ১৮০০ সালের প্রথম দিকে। ১৮২০ সালের দিকে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে দোকানগুলো তাদের নিজস্ব বিজ্ঞাপন দিত, পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা বের হত। যেখানে প্রায়ই সান্তা ক্লজের ছবি ছাপানো হতে দেখা যেত। ১৮৪১ সালে ফিলাডেলফিয়ার একটি দোকানে একটি মানুষ আকৃতির সান্তা ক্লজ তৈরি করা হয়েছিল, যা দেখতে হাজার হাজার কচিকাঁচা বেশ ভিড় জমিয়েছিল। এরপর বাচ্চা এবং তাদের বাবা-মায়েদের আকৃষ্ট করতেবিভিন্ন দোকানে জীবন্ত সান্তা ক্লজ সাজানোর চল শুরু হয়।
১৮২২ সালে ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুর নামক একজন ব্যক্তি ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে একটি কবিতাও লিখে ফেললেন। যার প্রথম লাইনটি ছিল, “An Account of a Visit from St. Nicholas.”। কবিতাটিতে লাল পোশাক পরা সাদা দাড়িওয়ালা এক সন্ত-এর ৮টি হরিণে টানা গাড়িতে উড়ে উড়ে বাচ্চাদের বাড়ি গিয়ে উপহার বিতরণ করার বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে সান্তা ক্লজের যে রূপ সবাই কল্পনা করে, সেটি আসলে এই কবিতার বর্ণনা থেকেই নেওয়া। খুব তাড়াতাড়ি এই কবিতাটি জনপ্রিয়তা পায় গোটা আমেরিকা জুড়ে। ১৮৮১ সালে থমাস নাস্ট নামক একজন কার্টুনিস্টের আঁকা একটি ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, সান্তা ক্লজ হরিণেটানা গাড়িতে চড়ে কাঁধে উপহারের ঝোলা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের উপহার দিচ্ছেন।
শুধু আমেরিকা নয়। সান্তা ক্লজের এই কল্পনা সারা বিশ্বেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর সেই সাথে বিশ্বের অধিকাংশ শিশুর মনে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেন তিনি। আর প্রতি বছর ক্রিসমাসের আগের রাতে বাচ্চাদের ঝোলানো মোজা ভরে ওঠে তাদের প্রিয় উপহারে।
Advertisement