প্রথম দিকে স্পুটনিক ভি সম্পর্কে কিছু সংশয় থাকলেও, পরে এই ভ্যাকসিন বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, প্রয়োগের পর এই ভ্যাকসিন ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছে। এমনকি ‘দ্য ল্যান্সেট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও দাবি করা হয়েছে, স্পুটনিক ভি করোনা রুখতে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে এবং তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও এর নেই। |

অনলাইন পেপার : সপ্তাহ খানেক আগে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ঘোষণা করেছিল, কো-ভ্যাকসিন ও কোভিশিল্ডের মতো এবার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে রাশিয়ান ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি-কে। আগামী মে মাসের প্রথম দিকেই এই ভ্যাকসিন রাশিয়া থেকে আমদানি করা হবে। আর এদেশে উৎপাদন শুরু হবে আগামী জুন-জুলাই নাগাদ। উৎপাদন করবে ‘ডক্টর রেড্ডিজ’।
এবার জেনে নেওয়া যাক এই ভ্যাকসিন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য –
গত বছরের ১১ আগস্ট প্রথম দেশ হিসাবে রাশিয়া করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছিল। আর সেই ভ্যাকসিনটির নাম দিয়েছিল ‘স্পুটনিক ভি’। ওই আগস্ট থেকেই স্পুটনিক ভি প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছিল রাশিয়া সরকার। বলা বাহুল্য, সেসময় রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিন পুতিন নিজেই স্বীকার করেছিলেন, তাঁর এক মেয়েকেও এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে।
বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম দিকে স্পুটনিক ভি সম্পর্কে কিছু সংশয় থাকলেও, পরে এই ভ্যাকসিন বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, প্রয়োগের পর এই ভ্যাকসিন ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছে। এমনকি ‘দ্য ল্যান্সেট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও দাবি করা হয়েছে, স্পুটনিক ভি করোনা রুখতে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে এবং তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও এর নেই।
‘দ্য ল্যান্সেট’ সাময়িকীতে আরও বলা হয়েছে, প্রথম দিকে ৩৮ জন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাঁদেরকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার ৩ সপ্তাহ পরে দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় ডোজ। এরপর তাঁদের ৪২ দিন নজরে রাখা হয়েছিল। তবে ৩ সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।
রাশিয়ার এই ভ্যাকসিন অন্য ভ্যাকসিনগুলির মতোই সাধারণ সর্দি-কাশি সৃষ্টির ‘অ্যাডেনো’ ভাইরাসের উপাদান দিয়েই তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও কো-ভ্যাকসিন বা কোভিশিল্ডের মতো এই ভ্যাকসিনেরও রয়েছে দু’টি ডোজ। এক্ষেত্রে প্রথম ডোজ নেওয়ার ৩ সপ্তাহ বা ২১ দিন পর নিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। তবে এই দুটি ডোজের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের ওই প্রতিবেদনে এব্যাপারে বলা হয়েছে, দুটি ডোজই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার সক্ষমতা রাখবে, তবে ভিন্নভাবে। কারণ এই দুটি ডোজ আলাদা আলাদা প্রক্রিয়ায় নির্মিত। যার ফলে শরীরে দীর্ঘ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারবে।
রাশিয়া ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, তাদের এই ভ্যাকসিন প্রায় ৯২ শতাংশ সাফল্য দেখিয়েছে। তবুও ‘হু’ (WHO) বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি সহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা এই ভ্যাকসিনকে এখনও পর্যন্ত অনুমোদন দেয়নি। তারপরেও ভারত, আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা, হাঙ্গেরি, মেক্সিকো, ইসরায়েল সহ বিশ্বের ৬০টি দেশ এই ভ্যাকসিন আমদানির উপর ছাড়পত্র দিয়েছে।