এখানে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে সবুজায়নের উপর। স্কুল বন্ধ, তাই বাগান পরিচর্যার এটাই সেরা সময়। স্কুলের আঙিনা জুড়ে একে একে তাই লাগানো হচ্ছে হরেক রকম ফুল-ফলের গাছ। যার মধ্যে রয়েছে অশোক, পলাশ, অমলতাস, জারুল, কৃষ্ণচূড়া, ফাগুনবউ। এছাড়াও রয়েছে আমলকী, হরিতকী, বহেড়া, গুলঞ্চের মতো ঔষধি বৃক্ষ। দীর্ঘদিন পা না পড়া স্কুলের আঙিনা জুড়ে বেড়ে ওঠা ঘাসেদের জঙ্গল পরিষ্কার করে লাগানো হচ্ছে এই সব মনোরম উদ্ভিদগুলি। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি |

জনদর্পণ ডেস্ক : স্কুল বন্ধ সেই মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে। শিক্ষার্থীদের আনাগোনাও তাই বন্ধ। দীর্ঘ ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও কবে আবার স্কুল খুলবে, তাও এখনও প্রায় অনিশ্চিত। এই সুযোগে ক্লাসে ক্লাসে জমে উঠেছে ধুলোর রাশি। বেড়ে যাচ্ছে উইপোকার অত্যাচার। লাইব্রেরী ঘরের আলমারিতে সাজানো প্রয়োজনীয় দামি বইগুলিতে মাটির ঢিবি তুলে নষ্ট করছে এই জন্মান্ধ ক্ষুদ্র পোকারা। স্কুলের আঙিনা জুড়েও বেড়ে উঠছে ঘাস-পাতার জঙ্গল। আড্ডা বাড়ছে সাপ ইঁদুরের। এসব দেখার এখন কেউ নেই। যদিও মিড-ডে মিল দেওয়ার জন্য মাসে বার কয়েক স্কুল খুলতে হয় শিক্ষকদের। কিন্তু মিড-ডে মিলের ঝামেলা মেটাতেই পেরিয়ে যায় সারাটা দিন। বিশেষভাবে নজর পড়ে না কোথাও।
তবে এব্যাপারে কিছুটা ব্যতিক্রম অবশ্য আমোদপুর জয়দুর্গা হাই স্কুল। স্কুলের পঠন-পাঠন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। তাই বলে পরিচর্যা বন্ধ রাখেনি বীরভূম জেলার এই স্কুলটি। প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে চলছে স্কুল সাজানোর কাজ। ক্লাসঘর পরিষ্কার থেকে শুরু করে আঙিনায় বেড়ে ওঠা ঘাস-পাতার জঙ্গল কেটে পরিষ্কার, লাইব্রেরী ঘরের বইগুলির পরিচর্যা, আবার কখনও বা চলছে বাগানে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন ঘটানোর প্রক্রিয়া। আসল কথা, যে কোনও সময়ে সরকারি নির্দেশে স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রদের যেন ক্লাস করতে কোনওরকম অসুবিধা না হয়, সেদিকে নজর রাখছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এখানে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে সবুজায়নের উপর। স্কুল বন্ধ, তাই বাগান পরিচর্যার এটাই সেরা সময়। স্কুলের আঙিনা জুড়ে একে একে তাই লাগানো হচ্ছে হরেক রকম ফুল-ফলের গাছ। যার মধ্যে রয়েছে অশোক, পলাশ, অমলতাস, জারুল, কৃষ্ণচূড়া, ফাগুনবউ। এছাড়াও রয়েছে আমলকী, হরিতকী, বহেড়া, গুলঞ্চের মতো ঔষধি বৃক্ষ। দীর্ঘদিন পা না পড়া স্কুলের আঙিনা জুড়ে বেড়ে ওঠা ঘাসেদের জঙ্গল পরিষ্কার করে লাগানো হচ্ছে এই সব মনোরম উদ্ভিদগুলি।

পরিচর্যার কাজ অবশ্য করছে স্কুলের ছাত্ররা-ই। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর লখিরাম মুরমু, প্রদীপ ভাণ্ডারী, দেবনাথ দাস, সৌভিক মণ্ডল, নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ছেলেরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সকাল-বিকাল এগিয়ে আসছে এই পরিচর্যার কাজে। তারা নিজেরাই নিজেদের মতো বাগান পরিষ্কার করে গাছ লাগিয়ে সবুজায়নের পথকে প্রশস্ত করছে। শুধু গাছ লাগিয়েই তারা থেমে নেই, সকাল-বিকাল তাতে জল দেওয়ারও ব্যবস্থা করছে। অবশ্য তাদের এসব কাজে সহযোগিতা ও উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন প্রধান শিক্ষক সুশান্ত ভট্টাচার্য।
সুশান্তবাবু জানালেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার জন্য স্কুলের চারপাশ ঘাস-লতাপাতায় ভরে গিয়েছে। এতে সাপ-ইঁদুরের উৎপাত বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। স্কুলের স্থানীয় ছাত্ররা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে গাছ লাগানোর দায়িত্ব নিয়েছে। গাছ লাগানোর জন্য আমোদপুর পঞ্চায়েত জৈব সারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। স্কুলের বাইরে রাস্তার ধার বরাবর গাছ লাগানোর জন্য ইটের বেড়ারও ব্যবস্থা করে দিয়েছে আমোদপুর পঞ্চায়েত। এছাড়াও লাইব্রেরীর বইগুলি উইপোকার অত্যাচারে নষ্ট হতে বসেছে। সেগুলিকেও বিশেষভাবে পরিচর্যা করতে হচ্ছে।
সুশান্ত বাবু আরও জানালেন, তিনি সব দিন স্কুলে এসে দেখাশোনা করতে পারেন না। স্থানীয় ছাত্ররাই এখন এসব দেখাশোনার ভার নিয়েছে। তিনি শুধু তাদের উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন মাত্র।