সুন্দরবনের দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের আলোর দিশা দেখিয়ে চলেছেন বিশ্বভারতীর ছাত্র

Advertisement
দেশ-বিদেশের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় তিনি একান্ত প্রচেষ্টায় গ্রামেই গড়ে তুললেন একটা ‘কমিউনিটি বুক ব্যাঙ্ক’। আর এর মাধ্যমেই বই-খাতা সহ পাঠ্যের বিভিন্ন সামগ্রী পৌঁছে দিতে লাগলেন এলাকার দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে। শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনার নিজের গ্রাম দেড়িয়া-ই নয়, পার্শ্ববর্তী বড়বেড়িয়া, মানিকা, হাঁড়া সহ আরও একাধিক গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও সে এভাবে আলোর দিশা দেখিয়ে চলেছেন নিরলসভাবে। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি
সুন্দরবনের দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের আলোর দিশা দেখিয়ে চলেছেন বিশ্বভারতীর ছাত্র

বিজয় ঘোষাল : গত বছরের ২০ মে সুন্দরবনে আছড়ে পড়েছিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’। নিমেষেই ছারখার করে দিয়েছিল গোটা সুন্দরবনকে। সেই বিভীষিকার হাত থেকে সুন্দরবনবাসীদের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেন বিশ্বভারতী’র সোশাল ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের ছাত্র সৌম্যদীপ্ত বোস। তবে একা নয়, তাঁকে সঙ্গ দিতে এগিয়ে আসেন বহু দূর-নিকটের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। নদীবাঁধ সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় শুরু করেন ত্রানের কাজ।

শুধু ‘আমফান’ হলে তো মিটেই যেত! পরপর আঘাত হানতে থাকে করোনা আর তার জেরে লকডাউন। ফলে দারিদ্র যেন ছাপিয়ে যায় দারিদ্রতাকেও। একটার পর একটা দুর্যোগের আঘাতে সমস্যাগুলি যেন আরও জটিল হয়ে উঠতে থাকে। লকডাউন ও করোনাপর্বের যৌথ জাঁতাকলে গ্রামের মানুষগুলি হারিয়ে ফেলতে থাকে তাদের রোজগার। হারাতে থাকে কর্মসংস্থানও। ফলে ঘরের ছেলে-মেয়েদের পাঠ্যবই কেনার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয় বড়ো করে।

এখানে আবারও এগিয়ে এলেন সৌম্যদীপ্ত ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। দেশ-বিদেশের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় তিনি একান্ত প্রচেষ্টায় গ্রামেই গড়ে তুললেন একটা ‘কমিউনিটি বুক ব্যাঙ্ক’। আর এর মাধ্যমেই বই-খাতা সহ পাঠ্যের বিভিন্ন সামগ্রী পৌঁছে দিতে লাগলেন এলাকার দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে। শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনার নিজের গ্রাম দেড়িয়া-ই নয়, পার্শ্ববর্তী বড়বেড়িয়া, মানিকা, হাঁড়া সহ আরও একাধিক গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও সে এভাবে আলোর দিশা দেখিয়ে চলেছেন নিরলসভাবে।

সৌম্যদীপ্ত শুধু এখানেই থেমে নেই, পরিবেশ নিয়েও তিনি যথেষ্ট সচেতন। বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে পরিবেশের উপর আঘাত হানছে, সুন্দরবনের নিজস্বতা নষ্ট করছে, এ বিষয়ে এলাকার মানুষদের সচেতন করতে তিনি শুরু করেছে ‘ক্লিন দ্য রিভার’ কর্মসূচী। এব্যাপারে ইতিমধ্যেই তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ও সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে নদী তীরবর্তী পিকনিক স্পটগুলি পরিস্কার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করে দিয়েছেন।

সৌম্যদীপ্তকে তাঁর কাজের ব্যাপারে সমস্ত রকমভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন তাঁর বাবা শুভেন্দু বোস, সমাজসেবী লালটু মিদ্যা, তাপস চৌধুরী, মলয় পাল, রাকেশ হালদার, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, বাপী শাহ, স্বপ্না মিদ্যা, সাংবাদিক শুভেন্দু ঘোষ সহ আরও অনেকেই। তিনি জানালেন, এই সমস্ত ব্যক্তিদের সর্বক্ষণের সহযোগিতা ও পাশে থাকার আশ্বাসে তিনি আরও দীর্ঘ পথ এগিয়ে চলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি আরও জানালেন, এই অঙ্কুরিত স্বপ্নকে তিনি পরিণত করতে চান বৃহৎ বৃক্ষে, যার শীতল ছায়া-ই নির্ভয়ে বিশ্রাম নিতে পারবে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষগুলি।

Advertisement
Previous articleসর্ববৃহৎ হিমশৈলটি আর নেই, গলতে গলতে হারিয়েই ফেলেছে নিজের অস্তিত্ব
Next articleমঙ্গল অভিযান : ড্রোন উড়ানের পর এবার জলশূন্য রহস্য

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here