শীতঘুমে বন্ধ হয়ে যায় সাপেদের চলাফেরা। সেই সঙ্গে বিপাক ক্রিয়ার হারও কমে যায়। তবে সব অঞ্চলের সাপেদের এই শীতঘুমের মেয়াদ কিন্তু সমান নাও হতে পারে। কারণ এক এক অঞ্চলের শীতের ধরণ ও সময়কাল হয় এক এক রকম। সেই অঞ্চলের সাপেদের শীতঘুম-এর সময়কালও হয় তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। সাধারণত শীত আসার পূর্ব মুহূর্ত ও শীত যাওয়ার পর মুহূর্তে সাপেরা একটু বেশিই চঞ্চল হয়ে ওঠে। |

জনদর্পণ ডেস্ক : আবহাওয়া দফতর ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে, বর্ষার মরশুম আপাতত শেষ। এবার অপেক্ষা শীতের। তবে শীত কবে নাগাদ এ রাজ্যে প্রবেশ করবে, তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু পারদ এরই মধ্যে নেমে গিয়েছে অনেকটাই। গ্রামাঞ্চলে রাতের দিকে শীতের শিরশিরে ভাবও বেশ ভালোভাবেই অনুভব করা যাচ্ছে। কিছু অঞ্চলে ভোরের পরিবেশও ঢেকে যাচ্ছে হালকা বা ঘন কুয়াশায়।
আর এই অবস্থা-ই এখন চঞ্চল করে তুলছে সাপেদের। কারণ তাদের এবার শীতঘুম-এ যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। ভরপুর খাওয়া-দাওয়া মিটিয়ে তারা গোটা শীতের জন্য বেছে নেবে কোনও উপযুক্ত স্থানকে। যেখানে নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিতে পারবে আগামী কয়েক মাস। এই অবস্থায় তাদের বিরক্ত করা মানে নিশ্চিত বিপদকে ডেকে আনার সমান।
শীতঘুম আসলে কি? কয়েক শ্রেণীর সরীসৃপ, মাছ, কীটপতঙ্গ প্রভৃতির শীতের কয়েক মাস নিরাপদে গোপন কোনও স্থানে অবিচল অবস্থায় বিশ্রাম নেওয়াকে বিশেষজ্ঞরা তাদের ‘শীতঘুম’ বা ‘হাইবারনেশন’ বলছেন। তবে একেক প্রজাতির প্রাণীর শীতঘুমের মেয়াদ এক এক সময়ের হতে পারে। এটি নির্ভর করে ওই প্রাণীর শারীরিক উষ্ণতা ও পরিবেশের বর্তমান উষ্ণতার সঙ্গে মানিয়ে চলার উপর।
এই যেমন সাপেদের রক্ত শীতল। তারা গড়ে পরিবেশের ১১ থেকে ২৮ ডিগ্রী তাপমাত্রায় নিজেদের মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত। এর বেশি বা কম তাপমাত্রা তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে। শীতের মরশুমে ভারতীয় পরিবেশে অধিকাংশ স্থানের তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রীর নিচে নেমে যায়। এই অবস্থায় সাপেদের পরিবেশে টিকে থাকা বেশ দুষ্কর হয়ে ওঠে। তাদের শারীরিক প্রক্রিয়া কার্যত নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রয়োজন পড়ে বেঁচে থাকার জন্য শারীরিক শক্তির। তখন শক্তির অপচয় রুখতে ও পরিবেশে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে তারা বাধ্য হয় শীতঘুমে যেতে।
শীতঘুমে বন্ধ হয়ে যায় সাপেদের চলাফেরা। সেই সঙ্গে বিপাক ক্রিয়ার হারও কমে যায়। তবে সব অঞ্চলের সাপেদের এই শীতঘুমের মেয়াদ কিন্তু সমান নাও হতে পারে। কারণ এক এক অঞ্চলের শীতের ধরণ ও সময়কাল হয় এক এক রকম। সেই অঞ্চলের সাপেদের শীতঘুম-এর সময়কালও হয় তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।
সাধারণত শীত আসার পূর্ব মুহূর্ত ও শীত যাওয়ার পর মুহূর্তে সাপেরা একটু বেশিই চঞ্চল হয়ে ওঠে। তার প্রধান কারণ খাদ্য অন্বেষণ ও আত্মরক্ষা। শীতঘুমে যাওয়ার আগে অথবা শীতঘুম থেকে ফেরার পরে যখন তাদের বিপাক ক্রিয়ার হার অত্যন্ত বেড়ে যায়, তখন প্রয়োজন পড়ে অতি দ্রুত খাদ্য সংগ্রহের। এদিকে সেই খাদ্য অন্বেষণে আত্মরক্ষাও তাদের অনেকটা হিংস্র করে তোলে।
আবার নির্বিঘ্নে শীত ঘুমের জন্য সাপেরা কোনও উষ্ণ, আরামদায়ক ও নিরাপদ স্থানকে বেছে নিতে চাই। এক্ষেত্রে গ্রাম অঞ্চলের মেঠো বাড়ির ইঁদুরের গর্ত বা খড়ের চাল, পুরনো খড়ের পালুই, খাদ্যশস্যের সঞ্চয় স্থল, বড়ো গাছের কোঠর এরকম উষ্ণ স্থানগুলি তাদের অন্যতম পছন্দের জায়গা হয়ে উঠতে পারে। তাই গৃহস্থকে এই সময় অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে আত্মরক্ষার কথা ভেবে।