সাঁওতাল সম্প্রদায়ের আদি বাসভূমি আসলে কোথায় তার প্রকৃত তথ্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবুও ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় ঘেঁটে যে টুকু তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে, তার থেকে কিছুটা আন্দাজ করা যায়, সাঁওতাল সম্প্রদায় আসলে অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাভাষীর মানুষ। তারা সম্ভবত সাড়ে তিন থেকে চার হাজার বছর পূর্বে ইন্দোচিন থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল।
ভারতবর্ষের প্রকৃত আদি বাসিন্দা আসলে কারা? এর উত্তর জানতে পারা খুবই মুশকিল। কারণ বহুবার এদেশের ইতিহাসের পটপরিবর্তন ঘটেছে বিভিন্নভাবে। তবুও ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় ঘেঁটে যে তথ্য পাওয়া যায়, তাতে বিশ্বাস করাতে বাধ্য করবে যে, আর্য ও অনার্যের সঙ্গে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষরাও ভারতে বেশ প্রাচীন।
পরবর্তীকালে আর্য ও অনার্য সম্প্রদায় যেভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে, তাতে তাদের আলাদা করে চেনার কোনও উপায় নেই। অপরদিকে কিন্তু সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষরা সেভাবে মিলে যেতে পারেনি। তাই শারীরিক গঠন ও ভাষা তাদেরকে এখনও অন্যদের তুলনায় প্রায় আলাদা করে রেখেছে।
সাঁওতাল সম্প্রদায়ের আদি বাসভূমি আসলে কোথায় তার প্রকৃত তথ্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবুও ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় ঘেঁটে যে টুকু তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে, তার থেকে কিছুটা আন্দাজ করা যায়, সাঁওতাল সম্প্রদায় আসলে অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাভাষীর মানুষ। তারা সম্ভবত সাড়ে তিন থেকে চার হাজার বছর পূর্বে ইন্দোচিন থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল। পরে দ্রাবিড় উপজাতির সঙ্গে মিশে যায়। বন-জঙ্গলকে কেন্দ্র করেই মূলত তাদের সভ্যতা গড়ে ওঠে। তাদের মাতৃভাষা ভারতের অন্য যে কোনও ভাষার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
এখন প্রশ্ন হল, সাঁওতাল সম্প্রদায়ের প্রকৃত ধর্ম আসলে কী? এ নিয়ে অবশ্য রয়েছে বেশ বিতর্ক। তাদের ধর্মাচরণ পৃথিবীর অন্য স্বীকৃত ধর্মগুলির সঙ্গে একেবারেই মেলে না। যদিও ভারতের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মকে নিজেদের ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণীর সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ হিন্দু ধর্ম থেকে অনেকটাই আলাদা সরনা বা সারনা ধর্মে বিশ্বাসী।
সারনা ধর্মেও রয়েছে হিন্দু ধর্মের মতো দেবতা। তবে এই দেবতা গ্রামকেন্দ্রিক। এখানে তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, বনভূমিতে একজন গ্রাম দেওতি বা গ্রামদেবতা রয়েছে। যাকে সন্তুষ্ট করতে বছরে দুবার তার সামনে বলি দেওয়া হয়। যদিও এই দেবতার কোনও মূর্তি নেই। আবার এই ধর্মের আলাদা কোনও ধর্মগ্রন্থও নেই।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেখা গিয়েছে, ভারতের প্রায় ৩১ শতাংশ (প্রায় ৫০ লক্ষ) আদিবাসী অর্থাৎ সাঁওতাল, মুণ্ডা, খারিয়া, হো, ভূমিজ, বাইগা, কুরুখ সম্প্রদায়ের মানুষ এই সারনা ধর্ম মেনে চলেন। এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা গ্রাম দেওতির পাশাপাশি চান্দোবোংগা (সূর্যদেবতা) ও মারাংবুরু দেবতাকেও পুজো করে থাকেন।
তবে ভারতবর্ষে সরনা বা সারনা ধর্মকে এখনও পর্যন্ত আলাদা কোনও ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাই মাঝেমধ্যেই ঝাড়খণ্ড বা পশ্চিমবঙ্গের সারনা ধর্মানুসারীরা এই ধর্মের স্বীকৃতি লাভের জন্য আন্দোলনরত অবস্থায় পথে নেমে পড়েন।