গ্রাম-গঞ্জের প্রায় প্রতিটা ঘরেই এখন পৌঁছে গিয়েছে টেলিভিশন। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবস্থার সহজলভ্যের জন্য প্রায় সকলের হাতেই পৌঁছে গিয়েছে ডিজিটাল মোবাইল। যা ছোটো-খাটো একটি টেলিভিশন বা কম্পিউটারের সংস্করণ। এসবের কারণে অতি সহজেই গুরুত্ব হারাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জের যাত্রাপালা ও নাট্যচর্চার। এর মধ্যে যাত্রাপালা দীর্ঘদিন থেকেই অন্তরালে চলে গিয়েছে। কোনওরকমে টিকে রয়েছে নাট্যচর্চা। যদিও কোনও একটি নাটকের দল একার পক্ষে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি |

বিজয় ঘোষাল : খুব বেশিদিন আগেকার কথা নয়, গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে যখন টেলিভিশন ছিল না, বা অন্য কোনও বিনোদনের মাধ্যম ছিল না, তখন সমস্ত এলাকা জুড়ে নাটক কিংবা যাত্রাপালার চর্চা ছিল চোখে পড়ার মতো। সামাজিক অনুষ্ঠানে কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, এলাকার স্থানীয় স্তরের শিল্পী ও কলাকুশলীরা মঞ্চ সাজিয়ে বিনোদনের জন্য নাটক পরিবেশন করত। সেখানে খুব জাঁকজমক যে প্রাধান্য পেত, তা নয়। স্বল্প অর্থে যতটা আয়োজন করা যায় ও নাটকের মূল ভাবনা যেন দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারে, সেটাই ছিল নাট্য উদ্যোক্তাদের মূল উদ্দেশ্য।
তবে সেই সব দিন আর নেই। গ্রাম-গঞ্জের প্রায় প্রতিটা ঘরেই এখন পৌঁছে গিয়েছে টেলিভিশন। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবস্থার সহজলভ্যের জন্য প্রায় সকলের হাতেই পৌঁছে গিয়েছে ডিজিটাল মোবাইল। যা ছোটো-খাটো একটি টেলিভিশন বা কম্পিউটারের সংস্করণ। এসবের কারণে অতি সহজেই গুরুত্ব হারাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জের যাত্রাপালা ও নাট্যচর্চার। এর মধ্যে যাত্রাপালা দীর্ঘদিন থেকেই অন্তরালে চলে গিয়েছে। কোনওরকমে টিকে রয়েছে নাট্যচর্চা।
যদিও কোনও একটি নাটকের দল একার পক্ষে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। নাট্যদলের স্থায়ীত্ব নির্ভর করে উক্ত দলের নাটকের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতার উপর। এই ধরণের নাট্যচর্চা গ্রামীণ স্তরের শিল্পী ও কলাকুশলীদের অভূতপূর্ব সুযোগ করে দেয় তাদের প্রতিভা বিকাশের।
ঠিক এই ভাবনাকে পাথেয় করেই গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বীরভূম জেলার আমোদপুর নাট্যসংস্থা “নাট্যতীর্থ”-র উদ্যোগে আমোদপুর জয়দূর্গা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ৪ দিনের ‘রাঙামাটি থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল’। এবারের নাটোৎসব ১৫ বছরে পা রাখল। ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রজকুমার সাহ, স্বপন রায়, উজ্জ্বল হক, বাবন চক্রবর্তী, কাঞ্চন চক্রবর্তী, নির্মল হাজারা, মৃলানজিৎ গোস্বামী, কাঞ্চন সরকার সহ প্রমুখ নাট্যব্যক্তিত্ব ও সাহিত্যপ্রেমী।
নাট্যোৎসবের প্রথম দিন আয়োজক সংস্থা-র নাটক ‘Pandemic’ অনুষ্ঠিত হয়। এই নাটকের মধ্য দিয়ে অতিমারি কোভিড ও লকডাউনের জন্য কীভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন নাট্যকর্মীরা, তারই একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।
নাট্যোৎসবের প্রথম দিনে ছিল আরও দুটি নাটক। অপর দুটি ছিল যথাক্রমে হরিপাল নাট্যপ্রহরীর অমিতাভ ভট্টাচার্য রচিত ও পুলক রায় নির্দেশিত “রবীন্দ্র জয়ন্তী” এবং থিয়েলাইট এর দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের কাহিনী অবলম্বনে “ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী”।
এবারের নাট্যোৎসব চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। নাটক পরিবেশনে থাকবে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ৯টি নাট্যসংস্থা। আয়োজক সংস্থার সম্পাদক সন্দীপন দত্ত জানালেন, “বর্তমান সমাজ জীবনে থিয়েটারের প্রভাব কতখানি, তা জানাতে এবং সমাজের কাছে এক মুঠো বিনোদন তুলে ধরতেই আমাদের এই নাট্যোৎসবের উদ্যোগ।”