সবুজ ধূমকেতু : দেখা মিলেছে, আবার কী তাকে দেখতে পাবে মানব সভ্যতা?

Advertisement

এক বছর আগেও এই সবুজ ধূমকেতুর কোনও তথ্য ছিল না জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে। গত বছরের ২ মার্চ প্রথম এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ব্রাইস বোলিন ও ফ্রাঙ্ক মাস্কি নামের দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্যালিফোর্নিয়ার পালোমার জুইকি ট্রানজিয়েট ফেসিলিটিতে গবেষণারত অবস্থায় আবিস্কার করেন এই সবুজ ধূমকেতু টিকে। এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে সি/ ২০২২ ই৩ (জেডটিএফ)।

ধূমকেতু

অনলাইন পেপার : বেশ কয়েক মাস ধরেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের উত্তেজনা ছিল চরমে। কারণ খালি চোখেই নাকি দেখা মিলবে এক বিরল ও আশ্চর্য ধূমকেতুর। রঙ তার সবুজ। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এটি সবুজ ধূমকেতু নামেই বেশি পরিচিত। একে বিরল বলার কারণ, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী এই সবুজ ধূমকেতু কে নাকি শেষবার পৃথিবীর আকাশ থেকে দেখা গিয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে। যখন আধুনিক মানুষের অস্তিত্বই ছিল না এই পৃথিবীতে। আর এটিকে আবার দেখতে পাওয়ার যাবে সেও প্রায় ৫০ হাজার বছর পর। আধুনিক মানুষের অস্তিত্ব সেসময়ে আদৌ টিকে থাকবে কিনা একথা কেউ বলতে পারবে না। তাই এই সময়ে ওই সবুজ ধূমকেতু কে দর্শন করা মানে অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার বলেই মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

এই সবুজ ধূমকেতুকে আশ্চর্য বলারও কারণ রয়েছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ এর দর্শনীয় অদ্ভুত সবুজ রঙ। সাধারণত অন্য ধূমকেতুগুলি সাদা উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো দেখালেও এর আপাদমস্তক জুড়ে রয়েছে সবুজের বিচ্ছুরণ।

এক বছর আগেও এই সবুজ ধূমকেতুর কোনও তথ্য ছিল না জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে। গত বছরের ২ মার্চ প্রথম এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ব্রাইস বোলিন ও ফ্রাঙ্ক মাস্কি নামের দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্যালিফোর্নিয়ার পালোমার জুইকি ট্রানজিয়েট ফেসিলিটিতে গবেষণারত অবস্থায় আবিস্কার করেন এই সবুজ ধূমকেতু টিকে। এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে সি/ ২০২২ ই৩ (জেডটিএফ)।

পরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা যায়, এটি সৌর জগতের প্রায় অন্তিম প্রান্তের বাসিন্দা। সূর্য থেকে প্লুটোর যে দূরত্ব, সেই স্থানের দূরত্ব তার থেকেও প্রায় ৩৪০০ গুণ বেশি। অর্থাৎ এটিই এখনও পর্যন্ত সৌর জগতের সবচেয়ে দূরে অবস্থান করা কোনও ধূমকেতু। এত দূরত্বে অবস্থান করার জন্যই সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে তার প্রায় ৫০ হাজার বছর সময় লেগে যায়। এর রঙ সবুজ হওয়ার কারণ হিসাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এতে অবস্থান করা কার্বন একটি বিশেষ অবস্থায় রয়েছে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আগেই জানিয়েছিলেন, গত ১২ জানুয়ারি এই সবুজ ধূমকেতু টি সূর্যের সবচেয়ে কাছে চলে এসেছিল। তারপর এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব হবে প্রায় ৪ কোটি ২০ লক্ষ কিলোমিটার থেকে ৪ কোটি ৪০ লক্ষ কিলোমিটারের মধ্যে। এই সময়ে রাতের আকাশ পরিষ্কার থাকলে খালি চোখেও দেখতে পাওয়া সম্ভব এই বিরল সবুজ ধূমকেতু কে। পরে সে ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের খুব কাছে চলে যাবে।

অবশেষে উত্তর গোলার্ধের বাসিন্দাদের একেবারে খালি হাতে ফেরায়নি এই সবুজ ধূমকেতু টি। খালি চোখেও দেখা দিয়েছে উৎসুক আকাশ প্রেমীদের। তবে দূরবীন বা টেলিস্কোপে আরও ভালোভাবে দর্শন মিলেছে তাদের। তারা অভিভূত। আর সেই সঙ্গে ভাগ্যবানও। কারণ এরপর এই সবুজ ধূমকেতু পুনরায় পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসতে সময় নেবে প্রায় ৫০ হাজার বছর। যদিও সেসময়ে বর্তমান সময়ের মতো এই আধুনিক মানুষের অস্তিত্ব আদৌ থাকবে কিনা, সেই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না।

Advertisement
Previous articleহারিয়ে যাওয়া লোকআঙ্গিক কে তুলে আনল সাহোড়া রায়বেঁশে যুবগোষ্ঠী
Next articleউদ্বোধন হল তারাশঙ্কর সেতু ও সেই সঙ্গে তারাশঙ্কর প্রসঙ্গ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here