Advertisement
উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে সবজির আমদানি হচ্ছে কম। তাই মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে অনেকটাই। এবার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে গবাদি পশুর খাদ্যের। খোলা বাজারে কাহন প্রতি খড় বা বিচালির দাম ২০০০-২৫০০ টাকা। আধুনিক উপায়ে উন্নত প্রযুক্তির হারভেস্টার ব্যবহার করে ধান বা ফসল কাটছে অধিকাংশ চাষি। তাতে খরচ একবারে সামান্য বেশি হলেও সময় লাগছে অনেকটাই কম। কিন্তু গোটা খড় বা বিচালি পাওয়া যাচ্ছে না। – ছবি : সংগৃহীত
|
নারায়ণ চন্দ্র দাস : সবজির মূল্য বৃদ্ধি এবছর নতুন কিছু নয়। এমনিতেই গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের মরশুমে অতিবৃষ্টি হয়ে গিয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে। সবজির ক্ষেতগুলিতে জল জমে গাছ নষ্ট হয়ে প্রচুর ফসলের ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল সেসময়। এখন আবার অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে চাষিরা। সাব-মার্সিবল থেকে অতিরিক্ত জল তুলে চাষ সামাল দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। জল তোলার খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায়। ফলে সবজির বাজারগুলিতে তার প্রভাব পড়ছে স্বাভাবিকভাবেই।
স্থানভেদে বাজারে সবজির দাম এখন বেগুন ৫০-৬০ টাকা, করলা ৪৫-৫৫ টাকা, ঝিঙে ২৫-৩৫ টাকা, পটল ৫০-৬০ টাকা প্রতি কেজিতে। আলু এখন যেন আরও অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠেছে। প্রতি নিয়তই তার মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত মাসেই যে আলুর মূল্য ছিল গড়ে ২৮ টাকা প্রতি কেজি, এখন সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। সবচেয়ে অবাক করার মতো মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে পিঁয়াজে। কারণ গত মাসই পিঁয়াজের গড় মূল্য ছিল ১৮-২২ টাকা প্রতি কেজি, এখন এক ধাক্কায় সেই মূল্য বেড়ে হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা প্রতি কেজি।
তাই স্বাভাবিকভাবেই ‘সবজির বাজারে আগুন জ্বলছে’ বলা যায়। এর পাশাপাশি এবার আর এক নতুন সমস্যার জন্ম নিয়েছে এই করোনা সংক্রমণের সময়কালে। গবাদি পশুদের জন্য খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
গৃহস্থের গবাদি পশুর অন্যতম প্রধান খাদ্য যেখানে খড় বা বিচালি, সেই খাদ্যেরই আকাল দেখা দিয়েছে এখন। কিন্তু কিভাবে এই আকাল দেখা দিল, জানতে চাওয়াতে খড় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এখন আধুনিক উপায়ে ফসল কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে হারভেস্টার। একটি বড়ো হারভেস্টার ব্যবহার করে একই সময়ে ধান বা ফসল কাটা, ঝাড়া বা মাড়াই করা সম্ভব। এতে অর্থ একবারে সামান্য বেশি খরচ হলেও সময় অনেকটাই বাঁচানো যায়। মানুষ এখন সময় বাঁচানোর দিকেই নজর দিচ্ছে বেশি। কিন্তু এই উপায়ে ফসল কাটার ফলে গোটা খড় বা বিচালি ঘরে তোলা যায় না। পুরোটাই নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে মাঠে। পরে পচে মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
তাই স্বাভাবিকভাবেই খড়ের আকাল দেখা দিয়েছে একাধিক স্থানে। খোলা বাজারে আমদানিকৃত খড়েরও মূল্য বেড়েছে সেই সঙ্গে। এখন কাহন প্রতি সেই খড়ের দাম ২০০০-২৫০০ টাকা। খড়ের বিকল্প হিসাবে কাঁচা ঘাসের উপরই বেশি করে ঝুঁকছেন গবাদি পশু পালকেরা। কিন্তু সর্বত্র ও সব সময় সেই ঘাস পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠছে।
এমনিতেই করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ কয়েক মাস লকডাউন পালন করতে বাধ্য হয়েছে গোটা দেশ। যদিও সেই লকডাউন এখন অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে বাজারগুলি। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক হতে এখনও অনেকটাই সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন একাধিক অর্থনীতিবিদ। তার উপর দৈনন্দিন সবজির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দিশাহারা একাধিক গৃহস্থ। এই অবস্থায় গবাদি পশুর মুখে কিভাবে আহার তুলে দেবেন সেই চিন্তাও রয়েছে তাঁদের।
Advertisement