বীরভূম জেলার নাকাশ গ্রামের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের প্রাণ গেল সাপের কামড়ে। সাপে কাটার পর চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় এক ওঝার কাছে। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে ওই রোগীকে প্রথমে রাজনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানেই ওই রোগীকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। – ছবি : শুভজিৎ সিংহ |
অরবিন্দ মালি : চূড়ান্ত সচেতনতার অভাবে গত ২০ আগস্ট সাপের কামড়ে প্রাণ দিতে হল এক ১৫ বছর বয়সী কিশোরের। সঞ্জীব বাউড়ি নামে ওই কিশোরের বাড়ি বীরভূম জেলার রাজনগরের নাকাশ গ্রামে। সাপে কাটার পর তাঁকে প্রথমে এক স্থানীয় ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েক ঘন্টা ঝাড়-ফুক করার পর পরিস্থিতি যখন নাগালের বাইরে যায়, তখন তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে রাজনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সময় অনেকটা অতিবাহিত হওয়ায় যথা সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ার জন্যে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
ওই কিশোরের অকাল প্রয়ানে নাকাশ এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওঝার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে, যাতে পরবর্তী সময়ে এই রকম বেদনাদায়ক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। প্রতি বছর গড়ে ৫৮০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে শুধুমাত্র সাপের কামড়েই। এছাড়াও সাপে কাটা রোগীদের বছরে মৃত্যুর হার এই দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন সাপে কাটা রোগীর মধ্যে প্রায় ৭০ জনেরই মৃত্যু ঘটতে দেখা যায়।
পশ্চিমবঙ্গের পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ। এই রাজ্যে সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার প্রায় ৮০ শতাংশ। অবশ্য এর জন্য দায়ী মানুষ নিজেই। মূলত এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সচেতনতার চূড়ান্ত অভাব রয়ে গিয়েছে এখনও। এই একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছিয়েও এখনও অধিকাংশ গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করেন ওঝার ঝাড়-ফুঁকেই ভালো হয়ে যায় সাপে কাটা রোগী। তাই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে নিয়ে যায় অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন সেই ওঝার কাছেই। এখানে হাসপাতালের আধুনিক চিকিৎসার থেকেও তাদের পূর্ণ আস্থা থাকে ওঝার ঝাড়-ফুঁকের উপর। যার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সময় মতো চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু ঘটে ওই সাপে কাটা রোগীর।
তবে ভাগ্যক্রমে ওঝার চিকিৎসায় কেউ যদি বেঁচে ওঠে, সেটাই বড়ো দৃষ্টান্ত হয়ে যায় এলাকাবাসীর মধ্যে। কিন্তু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, এক্ষেত্রে ওই রোগীকে কোনও বিষাক্ত সাপেই দংশন করেনি। সাধারণ সাপে কেটেছিল। অথবা বিষাক্ত সাপে দংশন করলেও খুবই সামান্য বিষ ওই দংশিত ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করেছিল।
তবে এক্ষেত্রে মানুষের মূল্যবান জীবন বাঁচানোর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নেরও যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।