সংকটেশ্বরী মন্দির : মুর্শিদাবাদের সাহোড়া গ্রামের অজ্ঞাত ঐতিহাসিক মন্দির (ভিডিও সহ)

Advertisement

জনশ্রুতি অনুযায়ী, সাহোড়ার এই সংকটেশ্বরী মন্দির একটি সতীর উপ-পীঠ। বলা হয়, দেবী সতীর দেহখণ্ড পতিত হয়ে স্থাপিত হয়েছে সতীপীঠ। আর দেবীর অলঙ্কার পতিত হয়ে স্থাপিত হয়েছে সতীর উপ-পীঠ। তবে সতীর ৫১টি মহাপীঠের কথা জানা থাকলেও, উপ-পীঠ সম্পর্কে অনেক কিছু আজও অজানা রয়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মুর্শিদাবাদের এই সাহোড়া গ্রামে পতিত হয়েছিল দেবীর শঙ্খ। তাই দেবী এখানে শঙ্খশ্বেরী নামে বিশেষভাবে পরিচিত।


সংকটেশ্বরী মন্দির : মুর্শিদাবাদের সাহোড়া গ্রামের অজ্ঞাত ঐতিহাসিক মন্দির

বিজয় ঘোষাল : মুর্শিদাবাদ মানেই এক ঐতিহাসিক জেলা। কত না ঐতিহাসিক ভ্রমণ স্থান ছড়িয়ে রয়েছে এই জেলায়। রয়েছে ঐতিহাসিক একাধিক নিদর্শনও। প্রতি বছর তাই দেশ ও বিদেশের অসংখ্য পর্যটকের ভিড় জমে এখানে। এছাড়াও মুর্শিদাবাদের প্রায় অলিতে গলিতে বা প্রান্তিক গ্রামগুলিতে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস। তার ঐতিহ্য আজও নাড়া দিয়ে যায় মানবিক মনকে। এই জেলার বড়ঞা থানার সাহোড়া তেমনই একটি প্রাচীন গ্রাম। গ্রামের শরীর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অষ্টাদশ শতকের বেশকিছু প্রাচীন মন্দির।

তবে সবার প্রথমেই নজরে পড়বে গ্রামটির উত্তর-পূর্ব প্রান্তের এক সুবিশাল শ্বেত মন্দিরের দিকে। এর উচ্চতা প্রায় ৭৫ ফুট। যা স্থানীয়দের কাছে সংকটেশ্বরী মন্দির নামেই বেশি পরিচিত। প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় জমে এখানে।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, সাহোড়ার এই সংকটেশ্বরী মন্দির একটি সতীর উপ-পীঠ। বলা হয়, দেবী সতীর দেহখণ্ড পতিত হয়ে স্থাপিত হয়েছে সতীপীঠ। আর দেবীর অলঙ্কার পতিত হয়ে স্থাপিত হয়েছে সতীর উপ-পীঠ। তবে সতীর ৫১টি মহাপীঠের কথা জানা থাকলেও, উপ-পীঠ সম্পর্কে অনেক কিছু আজও অজানা রয়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মুর্শিদাবাদের এই সাহোড়া গ্রামে পতিত হয়েছিল দেবীর শঙ্খ। তাই দেবী এখানে শঙ্খশ্বেরী নামে বিশেষভাবে পরিচিত।

এই স্থানটি সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে রচিত হয়েছে একাধিক ইতিহাস। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহাভারতের কাহিনীও। শোনা যায়, পান্ডবদের অজ্ঞাতবাসকালে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির অঙ্গ রাজ্য  উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় বীরভূমের একচক্রা গ্রামের এক দরিদ্র বাহ্মন পরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে দীর্ঘ জঙ্গল পথ অতিক্রম করে এই সাহোড়া গ্রামে উপস্থিত হন। তিনি এই গ্রামের জঙ্গলের একটি বিশেষ পাষানখণ্ডকে দেবীজ্ঞানে পুজো করেছিলেন তাঁর সংকট মোচন করার জন্য। কিছুদিন পর তিনি রাজ্য ফিরে পান ও তাঁর সংকটও মোচন হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, সেই থেকে দেবীর নাম এখানে শঙ্খশ্বেরী থেকে সংকটেশ্বরীতে পরিণত হয়। এছাড়াও গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রয়েছে সংকেটেশ্বর শিবমন্দির।


Devi Sanketaswari Upo-Peeth In Murshidabad

শোনা যায়, কাশী থেকে আগত সাধক ভবনানন্ন গিরি ধ্যানমগ্ন অবস্থায় এখানেই মায়ের সিংহবাহিনী রূপের দর্শন পেয়েছিলেন। তাছাড়া দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সাধক কৃষ্ণানন্দ এখানেরই একটি শিমূল গাছের তলায় সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি তিব্বতের মানস সরোবরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন।

নাটোরের রানী ভবানী দেবী এক সময়ে এখানে একটি ছোটো মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে অনেক পরে ২০১১ সালের দিকে গ্রামের এক মাতৃসাধক গৌতমী দাশগুপ্তের আর্থিক সহায়তায় বর্তমানের এই ৭৫ ফুট উচ্চতার সুবিশাল শ্বেত মন্দিরটি নির্মিত হয়। যদিও মন্দিরের কাজ আজও হয়ে চলেছে।

মন্দির সজ্জা অবাক করবে যে কোনও দর্শনার্থীকে। এখানে সমগ্র মন্দিরের গায়ে ফুটে উঠেছে দেবী দুর্গার বিভিন্ন মাতৃরূপ। দেবী এখানে ‘সংকটি তারা’ ও দুর্গাজ্ঞানে পূজিত হয়। প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার অধিক মানুষের সমাগম ঘটে অধিক। এছাড়াও প্রতি পৌষ মাসের কোনও এক মঙ্গলবারে এখানে মহোৎসবের আয়োজন করা হয়। এই মহোৎসবে সামিল হতে প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষের আগমন ঘটে এখানে।

তবে এত কিছুর পরেও আশ্চর্যরকমভাবে সাহোড়া গ্রামের এই সংকটেশ্বরী তলা ও তার মহত্ত্ব খুব বেশি প্রচারের আলোয় আসেনি এতদিনেও। কিন্তু স্থানীয়দের বিশ্বাস, প্রশাসন উদ্যোগী হলে আগামী দিনে এই সংকটেশ্বরী মন্দির ও সাহোড়া গ্রাম পর্যটন শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। আর তেমনটি হলে, এই গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থারও যথেষ্ট উন্নতি হবে। সেই সঙ্গে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথও প্রশস্ত হবে এই গ্রামের হত-দরিদ্র মানুষগুলির।

Advertisement
Previous articleক্রিকেট আইনে ঘটে গেল বিরাট কয়েকটি পরিবর্তন
Next articleঅ্যালোপেসিয়া : মাথার চুল একবার ঝরতে শুরু করলে তা রোখা সত্যিই মুশকিল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here