Advertisement
শুক্রের বায়ুমণ্ডলে ফসফিনের অস্তিত্ব রয়েছে, এমনই আভাস পেলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর পরিবেশে ফসফরাস ও হাইড্রোজেন মিলিতভাবে ফসফিন তৈরি করে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া। সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে ফসফিন তৈরি হতে পারে না। তাই শুক্রের বায়ুমণ্ডলে ফসফিনের উপস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে বিজ্ঞানীদের। তাহলে কী শুক্রে প্রাণ রয়েছে? যদিও এব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। – ছবি : সংগৃহীত
|
অনলাইন পেপার : পৃথিবীর সন্ধ্যার আকাশে যাকে ‘সন্ধ্যাতারা’ আর ভোরের আকাশে যাকে ‘শুকতারা’ বলা হয়, সেটি আসলে শুক্র গ্রহ। গ্রহটি অন্য গ্রহের তুলনায় পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকার জন্য এতটাই উজ্জ্বল দেখায় যে, চাঁদের পরই এই গ্রহটির দিকে নজর চলে যেতে বাধ্য। এদেশের গ্রাম-বাংলায় প্রায় সবার কাছেই শুক্র বড়ো আদরের ‘তারা’।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একে যত সরল ভাবা হয়, আসলে তা নয়। পৃথিবীর চেয়ে কিছুটা ছোটো হলেও, সূর্যের অনেক কাছে থাকার জন্য এই গ্রহ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৪৬৪-৫০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। যেখানে কোনও জীবের পক্ষেই বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভবই। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর একে ঘিরে থাকা গ্যাস মণ্ডল। বাতাসের প্রায় ৯৬ শতাংশেরও বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড। যা তাপমাত্রাকে অনেক বেশি সময় ধরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও বায়ুমণ্ডলে রয়েছে নাইট্রোজেন, সালফার-ডাই-অক্সাইড, আর্গন, হিলিয়াম, নিয়ন প্রভৃতি। তবে শুক্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উপরে তাপমাত্রা বেশ অনেকটাই কম, প্রায় ৩০-৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই অংশে ভেসে বেড়ায় বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাসের মেঘ।
বায়ুমণ্ডলের গ্যাসের এই অস্তিত্ব দেখে সহজেই বুঝতে পারা যাচ্ছে, এই গ্রহটি প্রাণের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। তাই পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বহির্বিশ্বে প্রাণের সন্ধান করতে গিয়েও কখনও শুক্রকে গুরুত্ব দেয়নি। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে মঙ্গল গ্রহ বা মাঝে মধ্যে বৃহস্পতির উপগ্রহ টাইটানকে। এমনকি সৌরজগৎ ছাড়িয়ে সুদূর ভিন গ্যালাক্সিতেও প্রাণের খোঁজ চালিয়ে গিয়েছে সাগ্রহে।
তবে এবার পুরনো ধারণা বদলাতে হচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। কারণ সম্প্রতি শুক্রের বাতাসে মিলেছে ফসফিন। যা বিশেষ এক ধরণের জীবের পক্ষেই সম্ভব তৈরি করা। অন্তত পৃথিবীর পরিবেশে ওই গ্যাস প্রাকৃতিকভাবে গঠিত হওয়া প্রায়ই অসম্ভব।
বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, পৃথিবীর পরিবেশে ফসফিন মূলত ফসফরাস ও হাইড্রোজেনের মিলিত একটি গ্যাস। যা তৈরি করে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া। রিপোর্টটি লিখেছেন জনাথন অ্যামোস।
ফসফিন প্রাকৃতিকভাবে প্রায় তৈরি হতে পারে না। তাই শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠদেশ থেকে ৫০ কিলোমিটার উপরের বায়ুমণ্ডলে ওই গ্যাস কিভাবে তৈরি হল, তা এখন যথেষ্ট ভাবাচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপ দিয়ে শুক্রের বায়ুমণ্ডলে সর্বপ্রথম এই গ্যাসের সন্ধান পায় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেন গ্রিভসের নেতৃত্বাধীন একটি দল। পরে তাঁরা আরও বেশি নিশ্চিত হয় চিলির আটাকামা লার্জ মিলিমিটার রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণের পর।
পৃথিবীর পরিবেশে যেহেতু ফসফিন প্রাকৃতিকভাবে তৈরি কোনও গ্যাসীয় পদার্থ নয়, ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমেই তৈরি হয়, শুক্রের বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত থাকা ফসফিনের সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার তাই সেখানে প্রাণের অস্তিত্বকে জোরালো করে তুলেছে। তবুও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ শুক্রের বায়ুমণ্ডলের যে অংশে এই গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে, সেখানে সালফিউরিক অ্যাসিড রয়েছে প্রায় ৭৫-৯৬ শতাংশ। তাহলে কিভাবে ওই অংশে প্রাণ টিকে থাকতে পারবে? তাহলে অবশ্যই সালফিউরিক অ্যাসিডের মধ্যে ওই জীবের টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
যদিও সাম্প্রতিক আবিষ্কার নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহ দেখাচ্ছেন ওই জ্যোতির্বিজ্ঞানী দলটি। ফসফিন সেখানে অন্য কোনও উপায়ে তৈরি হয়েছে কিনা সেদিকেও তাঁরা নজর দিচ্ছেন।
Advertisement
ভালো লাগলো পড়ে।