শিল্পী শিবরামের জন্ম-ই যেন হয়েছে প্রতিমা নির্মাণের জন্য

Advertisement
শিবরাম সূত্রধরের প্রতিমা শিল্পী হয়ে ওঠার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। আর সেটা নাকি অনেকটাই জন্মগতভাবে। খুব ছোটবেলায় স্কুলের রেলিং ধরে অন্য শিল্পীদের মূর্তি তৈরির কাজ দেখতেন। সেখান থেকেই তার মূর্তি গড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। পরে এক সময় তিনি তাঁর মনের মতো ‘গুরু’-র খোঁজও পেয়ে যান। তাঁর সেই গুরু ছিলেন সাঁইথিয়া নিবাসী বাদলচন্দ্র সূত্রধর। শিল্পী হওয়ার শুরুতে তিনি কালী, সরস্বতী, অন্নপূর্ণা সহ আরও অনেক দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি করতেন। তবে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণের কাজ অনেক পরে শুরু করেন। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি

শিল্পী শিবরামের জন্ম-ই যেন হয়েছে প্রতিমা নির্মাণের জন্য
শিল্পী শিবরামের জন্ম-ই যেন হয়েছে প্রতিমা নির্মাণের জন্য 2

বিশ্বজিৎ ঘোষ : শিবরাম সূত্রধর, তিনি বীরভূম জেলার আমোদপুর অঞ্চলের একটি পরিচিত নাম। এই এলাকার মানুষ তাঁকে একজন প্রতিমা শিল্পী হিসাবেই চেনেন। বর্তমানে তিনি আমোদপুরের সুভাষপল্লী (পুরাতন হাটতলা)-তে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। বাড়ির পাশেই রয়েছে তাঁর মৃৎ শিল্পকর্মের আস্তানা। যদিও এই আস্তানাটি খুব বেশি বড়ো নয়। কয়েকটি বাঁশ দিয়ে সাথে ত্রিপল বিছিয়ে খুব সাদা-মাটাভাবেই তৈরি। আর এখানেই প্রতি বছর তৈরি হয় শারদীয়র দুর্গা প্রতিমা। তৈরির পর যা পৌঁছে যায় আমোদপুর অঞ্চল সহ আরও অনেক অঞ্চলের পুজো মণ্ডপে। এছাড়াও প্রায় সারা বছর ধরেই তাঁর হাতের নিপুণ দক্ষতায় তৈরি হয়ে চলে অন্য দেব-দেবীর প্রতিমা।

কাজের ফাঁকে জনদর্পণ প্রতিনিধিকে তিনি জানালেন তাঁর শিল্পী হয়ে ওঠার কাহিনী। তাঁর পূর্বপুরুষও যুক্ত ছিল এই মৃৎ শিল্পের সঙ্গে। যদিও তাঁর পিতা প্রয়াত নারায়ণচন্দ্র সূত্রধর কাঠের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর জ্যাঠামশাই শান্তিরাম সূত্রধর মৃৎ শিল্পের কাজই করতেন।

তিনি জানালেন, তার এই প্রতিমা শিল্পী হয়ে ওঠার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। আর সেটা নাকি অনেকটাই জন্মগতভাবে। খুব ছোটবেলায় স্কুলের রেলিং ধরে অন্য শিল্পীদের মূর্তি তৈরির কাজ দেখতেন। সেখান থেকেই তার মূর্তি গড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। পরে এক সময় তিনি তাঁর মনের মতো ‘গুরু’-র খোঁজও পেয়ে যান। তাঁর সেই গুরু ছিলেন সাঁইথিয়া নিবাসী বাদলচন্দ্র সূত্রধর।

শিল্পী হওয়ার শুরুতে তিনি কালী, সরস্বতী, অন্নপূর্ণা সহ আরও অনেক দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি করতেন। তবে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণের কাজ অনেক পরে শুরু করেন। তাঁর হাতে প্রথম দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ হয় বছর পনেরো আগে। আর সেটি ছিল আমোদপুরের পার্শ্ববর্তী কুরুমসাহা গ্রামের ব্যানার্জি পরিবারের দুর্গা। প্রথম দুর্গা প্রতিমাতেই রীতিমতো প্রশংসা পেয়ে যান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে তাঁর কাছে বায়না আসতে শুরু করে আমোদপুর সহ আরও অন্যান্য অঞ্চল থেকে।

এই বছরের দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ প্রসঙ্গে জিগ্যেস করা হলে তিনি জানালেন, ১০টি প্রতিমা নির্মাণের বরাত পেয়েছেন এবার। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবছর প্রতিমা নির্মাণের খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। চলতি বছর করোনা আবহের জন্য প্রতিমা নির্মাণের বিভিন্ন সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই তুলনায় প্রতিমার মূল্য বাড়াতে পারেননি। অন্যান্য বছর যে প্রতিমার সর্বোচ্চ মূল্য ৪০-৪৫ হাজার টাকার কাছাকাছি থাকত, সেই প্রতিমার মূল্য এবছর কমে হয়েছে ৩৩ হাজার টাকার কাছাকাছি। অথচ মূর্তি তৈরির বিভিন্ন সামগ্রী যেমন বাঁশ, খড়, মাটি, রঙ, প্রতিমার সাজের মূল্য সহ তাঁর সহকারীদের মজুরী বেড়ে গিয়েছে। প্রতিমার সাজের বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে অন্য বছরগুলিতে তিনি কলকাতার কুমোরটুলিতে যেতেন। কিন্তু এবছর পার্শ্ববর্তী সাঁইথিয়া বা বহরমপুরের বাজার থেকে সেগুলি অপেক্ষাকৃত বেশি দামে কিনে এনেছেন। তবুও পুজো উদ্যোগতাদের আবদার মেটাতে ওই দামেই প্রতিমা তৈরি করতে হচ্ছে তাঁকে। পাছে ভয় হয়, যাতে আগামী বছরের বায়নাটা যেন ফসকে না যায়।

Advertisement
Previous articleএবছর (২০২০) যাঁরা নোবেল পুরস্কার পেলেন
Next articleকরোনা মহামারির সময়ে বাড়ছে মানুষ পাচারের মতো অপরাধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here