শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা লকডাউনে জরুরী

Advertisement
3
সোমনাথ মুখোপাধ্যায় : লকডাউনের মেয়াদ প্রত্যাশিতভাবেই ৩ মে পর্যন্ত বর্ধিত হল। এত দীর্ঘ লকডাউনে থাকার অভিজ্ঞতা ভারতবাসীর নেই। ইতিমধ্যেই বহু মানুষের মধ্যে মানসিক অবসাদ তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসার প্রকোপ। জীবিকা না থাকায় অনেক মানুষই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খোঁজা আশু প্রয়োজন। সেই কারণে হতাশা ও গৃহবন্দিত্বের একঘেঁয়েমি কাটানোর কিছু সুলুক সন্ধান এখানে দেওয়া হল।
     বাড়িতে যদি বই ও পত্র-পত্রিকা থাকে, তাহলে সেগুলো নিয়ে অবসর সময়ে বসে পড়ুন। পড়া বই হলেও আবার নতুন করে পড়ুন। বাড়িতে তেমন বই না থাকলে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ফ্রি সাইট থেকে ই-বুক ডাউনলোড করে নিন। এখন সংবাদপত্রের সরবরাহ কিছুটা অনিয়মিত কুছ পরোয়া নেই নেট থেকে ই-পত্রিকা ডাউনলোড করে পড়ে নিন। মাঝে মাঝে খবরের চ্যানেলে চোখ রাখুন তবে সারাক্ষণ খবর দেখবেন না তাতে মানসিক চাপ বেড়ে যেতে পারে। মোবাইল বা ইন্টারনেট দীর্ঘ সময় সার্ফিং করবেনা।
1
ছবি : সংগৃহীত
     অনেকেই বলেন বই পড়তে ভালো লাগে না পড়ার অভ্যাস অনেকদিন আগেই চলে গেছে সে ক্ষেত্রে টিভিতে বিভিন্ন খেলার চ্যানেলে পুরনো খেলার রিপ্লে দেখতে পারেন অথবা সিনেমা বা সিরিয়াল দেখুন, চমৎকার সময় কেটে যাবে।
     বাড়িতে কাজের দিদি বা মাসিকে সবেতন ছুটি দিয়ে দিন এবং স্ত্রীর সাথে ঘরদোর পরিষ্কার করা ও গোছানোর কাজে হাত লাগান। এতে দুজনেই খুশি থাকবেন। এই সঙ্কটজনক সময়ে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন যাতে ডাক্তার বাবুর কাছে না যেতে হয়। সহজপাচ্য খাবার খান। অহেতুক বাজার করে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করবেন না। বাজারে জিনিসপত্রের অভাব খুব একটা নেই।
4
ছবি : সংগৃহীত
     যেহেতু লকডাউন চলবে দীর্ঘদিন কাজেই প্রস্তুতিও অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী হবে। খুঁজে বের করুন সেইসব কাজ, যেগুলো অনেকদিন ধরে পড়ে আছে। সেই রকম কোন কাজ বাড়িতে বসে সম্পন্ন করা যায় কিনা দেখুন। মোবাইল বা গান শোনার কোন ডিভাইসে গান শুনুন। গান মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কাটাতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে।
     সকাল সকাল উঠে ছাদে গিয়ে সূর্যোদয় দেখুন। রাতে তারা ভরা আকাশের দিকে চেয়ে থাকুন,দেখবেন মনটা অনেক প্রসারিত হবে। ছাদে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে বাড়িতে কিছু সময় ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ও যোগ ব্যায়াম করুন। সর্বক্ষণ বাড়িতে থাকার কারণে ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি কমে যাওয়ায় শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলে ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন, এন্ডোরফিনের মত ফিল্ড গুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাবে। যা মনকে সদা প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করবে।
     বাড়ির লোকজনদের সময় দিন, গল্প-গুজব করুন। পুরনো ঘটনার সুখ স্মৃতি বা বেড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করুন। ছেলেমেয়েদের সাথে প্রাণ খুলে আড্ডা দিন দেখবেন ওরা কত কিছু বিষয়ে আপনাকে অবহিত করবে। ক্যুইজ কিংবা গানের লড়াইয়ে পুরোদস্তুর নেমে পড়ুন। বাড়িতে কেরাম দাবা থাকলে তাই নিয়ে সবার সঙ্গে বসে পড়ুন। ইনডোর গেমস রীতিমত সময় কাটানোর ভালো উপায়।
     ইচ্ছা করলে এই সময়টা সৃষ্টিশীলভাবেও কাটাতে পারেন। এককালে হয়তো ছবি আঁকা,  লেখালিখি কিংবা গানবাজনার অভ্যাস ছিল কিন্তু কাজের চাপে বর্তমানে সেসব চাপা পড়ে গেছে এখন এই অখণ্ড অবসরে সেসব নিয়ে আবার চর্চা শুরু করতে পারেন। ভেবে দেখুন জহরলাল নেহেরু, মহাত্মা গাঁধী প্রমুখ জাতীয় নেতারা তাঁদের জেল জীবনে কি অসাধারণ সব লেখালিখে গেছেন, যা আজও আমাদের মুগ্ধ করে। এই কঠিন সময়ে দিনলিপি লিখুন কে বলতে পারে আপনার লেখা ভবিষ্যতে মূল্যবান হয়ে উঠবে না।
     বাড়িতে ছোটখাটো বাগান থাকলে গাছপালার পরিচর্যা করুন মনটা বেশ খুশি থাকবে। বাড়িতে বড় গাছপালা থাকলে পাখিদের আনাগোনা লক্ষ্য করুন। কাছাকাছি বাড়ি থাকলে ছাদ বা বারান্দা থেকে পাশের বাড়ির পড়শীর সাথে একটু গল্পগুজব করে নিতে পারেন।
     বাড়িতে বয়স্ক মানুষ থাকলে নিজে হাতে তাঁদের যত্ন নিন এবং সেই সঙ্গে গল্প-গুজব করুন। জেনে নিন পরিবারের পুরোনো দিনের কথা, ইতিহাস। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সেগুলো লিখে নিতে পারেন। দেখবেন অনেক মূল্যবান তথ্য আপনি জানতে পারলেন, যা আগে আপনার জানা ছিল না। একই সঙ্গে আপনার সান্নিধ্য পেয়ে বয়স্ক মানুষগুলিও অত্যন্ত আনন্দ পাবেন।
     আত্মীয় বন্ধু-বান্ধবদের ফোন করুন কাজের চাপে যাদের কথা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন কিন্তু একটা ফোনেই দেখবেন সম্পর্কের সূত্রগুলো কেমন সজীব হয়ে উঠছে।
2
ছবি : সংগৃহীত
     রেডিও শুনুন। রেডিও মনঃসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। যদি রেডিওর পাট অনেকদিন উঠে গিয়ে থাকে তাহলেও কুছ পরোয়া নেই মোবাইলেই রেডিওর অ্যাপস ডাউনলোড করে শুনতে পারেন। প্লে স্টোরে খোঁজ করুন পছন্দমত অ্যাপস পেয়ে যাবেন।
     সর্বোপরি কেবলমাত্র করোনা আতঙ্কে থাকবেন না। সাবধানতা নিশ্চয়ই জরুরী কিন্তু সর্বদা করোনা নিয়ে আলোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ এই বিশ্ব জোড়া মহামারীতে আপনার লকডাউনে থাকা ছাড়া বিশেষ কিছুই করার নেই। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যা করার তা চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী ও দেশের সরকার করছেন। আপনি শুধু তাদের সাথে সহযোগিতা করুন। সুস্থ থাকুন,সুস্থ রাখুন।
  • All Rights Reserved
Advertisement
Previous articleকরোনা মোকাবিলায় মানুষের পাশে দাঁড়ালো ‘চিত্তহাট’
Next articleড. বাবা সাহেব ভীমরাও রামজি আম্বেদকর-এর কিছু অজানা কথা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here