মঙ্গলে ঘটে চলা লাল ধুলোর ঝড় নতুন ও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই ঝড়ের সঙ্গেই যে ভালো রকম যুজতে হবে, সেকথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছিল পারসিভিয়ারেন্স-কে। সে এখন সুদূর মঙ্গলের দুর্গম জেজেরো ক্রেটার থেকে গুটিগুটি পায়ে গিরিখাত ও মরে যাওয়া নদীর অববাহিকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখান থেকেই অদ্ভুত আর নতুন কিছু দেখলেই খবর পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে। রহস্যময় মঙ্গলে ঘুরছে একা। খুঁজে চলেছে প্রাণের হদিশ। |

রঞ্জন সরকার : লাল ধুলোর ঝড়! সে লাল বীরভূমের লাল মাটির থেকেও অনেক বেশি লাল। মঙ্গলের মাটি মাঝে মাঝেই কেঁপে ওঠে, আর হঠাৎ-ই শুরু হয় ঘূর্ণি হাওয়া, লাল ধুলোর ঝড়। মঙ্গলের পরিমণ্ডলে প্রায় ১০-২০ কিলোমিটার পর্যন্ত সেই ঝড় ছড়িয়েও পড়ে। সেই সঙ্গে নেমে আসে অকাল অন্ধকার। এই অবস্থা স্থায়ী হয় অন্তত ২০-২৫ দিন, কখনও বা মাসও পেরিয়ে যায়। ‘মিস কিউরিসিটি’ অনেক আগেই নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জানিয়েছিল এই সব তথ্য। তবে সদ্য মঙ্গলে পাঠানো মহাকাশযান ‘পারসিভিয়ারেন্স’ এবার স্বচক্ষে দেখল সেই সব অদ্ভুত দৃশ্য। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দিল নাসার দফতরে।
মঙ্গলে ঘটে চলা লাল ধুলোর ঝড় নতুন ও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই ঝড়ের সঙ্গেই যে ভালো রকম যুজতে হবে, সেকথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছিল পারসিভিয়ারেন্স-কে। সে এখন সুদূর মঙ্গলের দুর্গম জেজেরো ক্রেটার থেকে গুটিগুটি পায়ে গিরিখাত ও মরে যাওয়া নদীর অববাহিকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখান থেকেই অদ্ভুত আর নতুন কিছু দেখলেই খবর পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে। রহস্যময় মঙ্গলে ঘুরছে একা। খুঁজে চলেছে প্রাণের হদিশ।
গ্রহটির গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৮০ ডিগ্রি ফায়েনহাইট। প্রতিদিনের তাপমাত্রা কখনও কখনও বেড়ে ১৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পৃথিবীর দিন-রাতের যা সময়কাল, মঙ্গলেরও প্রায় একই। নিজের চারিদিকে একবার পাক থেকে মঙ্গলের সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট প্রায়। পৃথিবীর মতো মঙ্গলেও সঙ্ঘটিত হয় ভূমিকম্প। তবে পৃথিবীর মতো মঙ্গলের কোনও টেকটনিক প্লেট নেই। সেখানে ক্রাস্টের বালিকনার নড়াচড়াতেই হয়ে থাকে কম্পন। পারসিভিয়ারেন্স এসবই দেখছে। আর মুহুর্মুহু রিপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছে নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে।
সাফল্যের সঙ্গে পারসিভিয়ারেন্স তার নিজের কাজ করে চলেছে। যদিও সে নিজেই একটি রোবট বা যন্ত্রমানব, কম্পিউটার ও গবেষণা কেন্দ্র। তার গবেষণার উপরই এখন একটানা নজর রেখে চলেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। সে-ই তো এখন সবচেয়ে বড়ো ভরসা তাদের। অনেক কিছুই নির্ভর করছে পারসিভিয়ারেন্স-এর গবেষণার উপর। বিজ্ঞানীরা এখন অপেক্ষা করছেন সেই দিনটির জন্য, কখন আসবে একটা নতুন খবর। যা পালটে দেবে মঙ্গল সম্পর্কে এতদিনের চিরাচরিত সমস্ত ইতিহাস।