লাল গ্রহ ‘মঙ্গল’ রাতের দিকে সবুজ হয়ে ওঠে

Advertisement

এতদিন পর্যন্ত পৃথিবীর প্রতিবেশী মঙ্গল-কে সবাই লাল গ্রহ নামেই চিনে এসেছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, রাতের দিকে এই গ্রহটি সবুজ বর্ণ ধারণ করে। কারণ মঙ্গলে সূর্য ডোবার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই গ্রহের তাপমাত্রা মাইনাস ৭৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডেরও নিচে নেমে যায়। তখন মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় আলট্রাভায়োলেট রশ্মি। যদিও এই রশ্মি মানুষের চোখে অদৃশ্য থেকে যায়। – ছবি : সংগৃহীত

red planet mars turned green at night

রঞ্জন সরকার : এই আগস্টে আপনি যদি পূর্ব আকাশে ঠিক রাত ১০টার দিকে চোখ রাখেন, দেখবেন মাঝারি একটা উজ্জ্বল কমলাটে জ্যোতিষ্ক স্থিরভাবে তাকিয়ে রয়েছে যেন আপনারই দিকে। আসলে ওই জ্যোতিষ্কটি আর কেউ নয়, ওটি সবচেয়ে বিস্ময়ে ভরা পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ ‘মঙ্গল’ (Mars)। গ্রীক পুরাণে মার্স হল যুদ্ধের দেবতা। আর যোদ্ধাদের রক্ত ঝরাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এদিকে মঙ্গলও আপাদমস্তক একটি লাল গ্রহ। তাই অনেকটাই মিলিয়ে মিশিয়ে হয়তো ওই গ্রহটির নামকরণ এরকমই করা হয়েছে।

     সে যাইহোক, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই মঙ্গলের লাল রঙের রহস্যের সমাধান করতে পেরেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সমগ্র মঙ্গলের ভূমি জুড়ে উড়ে বেড়ায় ‘ফেরাস অক্সাইড’, এ যেন অনেকটা মরচে পড়া ধুলো। তবে এবার যে বিষয়টি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজরে পড়েছে, তা আরও অবাক করার মতোই ঘটনা। লাল রঙের এই গ্রহটি রাতের দিকে সবুজ বর্ণও ধারণ করে থাকে। বিজ্ঞানীরা নাসার ম্যাভেন স্পেসক্র্যাফট থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

     তবে মঙ্গলের সেই সবুজ রঙ মানুষের চোখে অদৃশ্যই থেকে যায়। মানুষ খালি চোখে সেই রঙের অস্তিত্ব বুঝতে পারে না। সায়েন্স ডেইলি-তে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, এই সবুজ রঙের রহস্য সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এমনিতেই মঙ্গলের তাপমাত্রা সবসময়ই মাইনাসের নিচে থাকে। সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সেই তাপমাত্রা পৌঁছে যায় মাইনাস ৭৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডেরও নিচে। ঠিক এই সময় মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের উপরি অংশে এক প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে থাকে। যার ফলে উৎপন্ন হয় এক ধরণের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি। এই রশ্মি পৃথিবী পর্যন্তও পৌঁছে যায়। তবে পৃথিবীবাসীর চোখে এটি পুরোপুরি থেকে যায় অদৃশ্য।

     যদিও এই রশ্মি নিয়ে চলছে এখনও বিস্তারিত গবেষণা। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। কারণ এই রশ্মির কোনও ক্ষতিকারক দিক রয়েছে কিনা তা এখনও অজানা। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, আগামীতে পৃথিবীর উপনিবেশ তৈরি হবে মঙ্গলে। সেখানে বসতি গড়ে উঠবে মানুষের। তাই স্বাভাবিকভাবে এই অদৃশ্য রশ্মি নিয়ে ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

     মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষমতা পৃথিবীর তুলনায় অনেকটাই কম। যদিও পৃথিবীর থেকে মঙ্গল আকারে বেশ ছোটো। সেখানকার মাধ্যাকর্ষণ ক্ষমতা কম হওয়ার জন্য মহাকাশযান উৎক্ষেপণে পৃথিবীর চেয়ে জ্বালানি কম লাগাটাই স্বাভাবিক। তাই কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানী ধারণা করছেন, আগামীতে মঙ্গল হতে পারে পৃথিবীর মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ স্থল, যেখান থেকে আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সিতে যাত্রা করাও সম্ভব হতে পারে। আবার সেখানকার দুই মেরুতে বরফের উপস্থিতিও রয়েছে। যা জলের চাহিদা মেটাতে পারবে। সম্প্রতি আবিস্কার হয়েছে সেখানকার হ্রদ ও সমুদ্রতট, যা কিনা এক সময়ে পরিপূর্ণ ছিল টলমলে জলে। গবেষণা করার চেষ্টা চলছে ভূমিভাগের নিচের স্তর নিয়েও। আবার গত ৩০ জুলাই মঙ্গলের উদ্দেশ্যে উড়ে গিয়েছে নাসার মহাকাশযান ‘পারসিভিয়ারেন্স’। তাই সবকিছু মিলিয়ে পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের স্পট লাইট যে এখন মঙ্গল গ্রহ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

     আর এর মাঝেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে মঙ্গলের এই সবুজ বর্ণ ধারণ। যদিও বিজ্ঞানীরা এব্যাপারে জানিয়েছেন, পুরোপুরি জানতে তাঁদের আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণা চলুক, কিন্তু মঙ্গলের এই সবুজ বর্ণ ধারণকে বেশ উৎসাহের চোখেই দেখছেন সখের আকাশপ্রেমীরা।

Advertisement
Previous articleবাংলার আলপনা নিয়ে বিশেষ কর্মশালা শান্তিনিকেতনের সৃজনীতে
Next articleধোনির শূন্যতা শুধু ধোনিই পূরণ করতে পারে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here