লকডাউনে ই-লার্নিং শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য ডেকে আনবে না তো?

Advertisement
el
বাবলি পাল : এক ভয়ংকর মহামারির কবলে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে ত্রাস আর বেঁচে থাকার তীব্র লড়াই। দিন যতই এগিয়ে চলেছে, ততই এই মহামারি অতিমারির রূপ ধারণ করছে। করোনাকে আটকাতে তাই বাধ্য হয়েই বিশ্ব জুড়ে শুরু হয়েছে লকডাউন। এর থেকে বাদ যায়নি ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গও। ফলে একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে সারা বিশ্ব সহ এদেশের মানুষদের প্রাত্যহিক জীবন।
     দেশজুড়ে লকডাউনের প্রভাবে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক দমবন্ধকর পরিস্থিতি। আর শিক্ষা যেখানে দক্ষতা, বিকাশ ও সমাজে অগ্রগতিমূলক প্রক্রিয়া, সেখানে শিক্ষার্থীদের দেখতে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ দরজার মুখ। করোনা সংক্রমনের আতঙ্কে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ এখন। তাই রীতি অনুযায়ী প্রথাগত শিক্ষাগ্রহণে ব্যর্থ শিক্ষার্থীরা।
     যেখানে চঞ্চল শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে চিন্তামুক্ত হতেন অভিভাবকরা। আজ সেই শিশুরা গৃহবন্দী। তাদের মুক্তমনা প্রাণ বাইরেও অন্যদের সঙ্গে খেলতে পারছে না। ফলে সামাজিক দূরত্ব থেকে ক্রমশ মানসিক দূরত্বের দিকে এগিয়ে চলেছে তাদের মন
     এদিকে করোনা প্রভাবে সম্ভাবতজুন মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে উচ্চমাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষা। ফলে ওই শিক্ষার্থীদের স্নাতকস্তরে ভর্তি হওয়ার সময়েও বিঘ্ন ঘটতে পারে। অন্যদিকে এবার যারা ফাইনাল সেমিষ্টার দেবে, তাদের অনেক সিলেবাস এখনও শেষ হয়ে ওঠেনি। ফলে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে তাদের পরবর্তী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও(যদিও এ সমস্ত কিছুই অনুমান করে বলা হয়েছে। প্রশাসন নিশ্চয় কোনও না কোনও উপায় খুঁজে বের করবে।)
     কিন্তু এত কিছুর পরেও এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে থমকে যাননি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে তাঁদের শিক্ষা পদ্ধতি পৌঁছে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের পড়ার ঘরে। ই- লার্নিং-এর ফলে প্রযুক্তি নির্ভর হয়েছে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাতাই মজার ব্যাপার, শিক্ষা ব্যবস্থায় পূর্বে যেখানে স্কুলকলেজে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, মোবাইল ব্যবহারের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ সেই শিক্ষাক্ষেত্রেই শিক্ষার স্রোতকে এগিয়ে নিয়ে চলার একমাত্র পথ তৈরি করেছে এই অনলাইন ক্লাস। এখানে শিক্ষকরা বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপলিকেশন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অব্যহত রেখেছেন তাঁদের পড়াশোনা প্রক্রিয়া।
     অনলাইন ক্লাস শেষে ছাত্রছাত্রীদের নোট সরবরাহের জন্য তৈরি হয়েছে বেশ কিছু সোশ্যাল গ্রুপ। কিন্তু এখানেই কয়েকটিপ্রশ্ন থেকে যাচ্ছে
     প্রথমত, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শ্রেনীকক্ষে মতো শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহভিত্তিক ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত শিক্ষণ প্রক্রিয়া একথায় অসম্ভব। শ্রেনীকক্ষে যেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা, সমবেদনা, সক্রিয়তা, অনুকরণ, অনুভাবন প্রভৃতি গুণাবলীর বিকাশ ঘটে থাকে, সেখানে অনলাইন ক্নাস এই গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে পারছে কী?
     দ্বিতীয়ত, একজন শিক্ষক কখনই অনলাইন ক্লাসে একজন শিক্ষার্থীর বোধগম্যতা, চিন্তাধারা, অনুশীলন, চাহিদা, মনোযোগ ও আগ্রহের সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারেন না। এরফলে আরও পিছিয়ে পড়েছে না তোক্লাসে থাকা স্লো লার্নার বা অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধিমত্তা ছেলে-মেয়েরা?
     তৃতীয়ত, অনেক পুরনো শিক্ষকরা এই আধুনিক ইং-লার্নি ব্যবস্থায় প্রশিক্ষিত নন, ফলে তাঁদের শিক্ষা কি আদৌ পৌঁছতে পারছে ছাত্রছাত্রীদের কাছে?
     চতুর্থত, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ও দিনআনা দিনখাওয়া পরিবারে শিক্ষার্থীদেরঅনেকের কাছে স্মার্টফোন এখনও সহজলভ্য নয়। আর থাকলেও ইন্টারনেট পরিষেবা সব জায়গায় সমানভাবে সক্রিয় নেই। ফলে অনলাইন ব্যবস্থাই যদি এই লকডাউনের সময়ে মূল শিক্ষা ব্যবস্থা হয়, তাহলে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও কি বৈষম্য তৈরি হচ্ছে না?
     এ সমস্ত কিছুই এখন ভাবাচ্ছে সমাজকে। যদিও করোনা পরবর্তী সময়ে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে আবার পুরনো নিয়মে স্কুল-কলেজে শিক্ষা শুরু হবে নিশ্চিত। কিন্তু ততদিন লকডাউনে থাকা শিক্ষার্থীরা কিভাবে শিক্ষা অর্জন করবে সেদিকেও নজর রাখতে হবে সমাজকে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনওভাবেই শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে না পড়ে।
(লেখিকা ডিএলএড-এপাঠরত)
  • All Rights Reserved
Advertisement
Previous articleলকডাউনে আটকে থাকা অসহায় শিক্ষার্থীকে সাহায্য করলেন শিক্ষিকা
Next articleনিজের জমির ফসল বেচে ‘ত্রাণ’ দিলেন গ্রামবাসীদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here