Advertisement
বিশ্বজিৎ ঘোষ : দীর্ঘ লকডাউনে খাদ্যের হাহাকার সব দিকেই। বিশেষ করে সেই সব অসহায় মানুষগুলি, যাঁরা ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালান, এই লকডাউনে তাঁরা সেভাবে অন্ন উপার্জন করতে পারছেন না। একাধিক বাড়ি ঘুরে তাঁদের ঝুলিতে জোগাড় হয় খুব সামান্যই কিছু অর্থ অথবা অন্ন। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণ ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গেও প্রবেশ করেছে প্রায় দেড় মাস আগেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মারণ ভাইরাসটি জন–সংস্পর্শে ছড়িয়ে থাকে। তাই জন–সংস্পর্শ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাই একপ্রকার প্রতিটা বাড়ির দরজা সাময়িক বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহিরাগতদের জন্য।
এর ফলেই সমস্যা বেড়েছে ভিক্ষাজীবীদের। কোনও বাড়িতেই এখন আর ঝুলি হাতে প্রবেশ করতে পারছেন না তাঁরা। সমস্যা বেড়েছে ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ মানুষগুলিরও। এমনিতেই সংসারে নিত্য অভাব লেগেই থাকে তাঁদের। এই দীর্ঘ লকডাউনে কর্মহারা হয়ে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে তাঁদের জন–জীবন। যদিও রেশন ব্যবস্থায় অবস্থার কিছুটা উপশম হলেও অভাব পুরোপুরি মোচন হয়নি তাঁদের।
তবে এই দুঃসময়ে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে ওই সমস্ত অসহায় মানুষগুলির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আঞ্চলিক কিছু সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নিজেদের সার্ধ মতো ওই অসহায় মানুষগুলির মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে দিনের পর দিন। বীরভূম জেলার আমোদপুরের চৌরঙ্গী সেবাশ্রম এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখবে।
সমস্ত দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছে ২৪ মার্চ থেকে। একপ্রকার ওই দিন থেকেই কাজহারা হতে হয়েছে আমোদপুর সংলগ্ন অঞ্চলের একাধিক খেটে খাওয়া মানুষকে। ধারণা করা হচ্ছে, লকডাউন না ওঠা পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারবেন না তাঁরা। কাজ না থাকলে অর্থ আসবে না ঘরে। বিকল্প ব্যবস্থা না করলে পেট চালানোও প্রায় মুশকিল হয়ে পড়বে সবার। ঠিক এরকম অবস্থায় তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াল আমোদপুর চৌরঙ্গী সেবাশ্রম। লকডাউনের প্রত্যেক দিনই ওই সমস্ত অসহায় মানুষগুলির মুখে একবেলা অন্ন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করল তারা। তাদের এই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে ৪ এপ্রিল থেকে। ওই সেবাশ্রমের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যতদিন লকডাউন চলবে, এভাবেই মানুষের সেবা করে যাবে তারা।
দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন ওই সেবাশ্রমের সদস্য অমিত দে, সব্যসাচী রুজ, অভিজিৎ ঘোষ, তপন দাঁ, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার চট্টোপাধ্যায়, অসীম রুজ সহ আরও অনেকেই। তার ফলপ্রসূ এই ব্যবস্থা ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে, সেবাশ্রমের নিজস্ব ফাণ্ড থেকে। এই উদ্যোগ শুরু হওয়ার পরই ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে শুরু করেন ওই অঞ্চলের আরও কিছু সহৃদয় ব্যক্তি। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে অর্থ বা খাদ্য সামগ্রী দান করে সেবাশ্রমের এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।
আমোদপুর চৌরঙ্গী সেবাশ্রমের সদস্য অমিত দে জানালেন, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকে ভাত, ডাল, সবজি, ডিম, পাঁপড়, চাটনি, মিষ্টি। অন্ন দেওয়া হয় প্রতিদিনই বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত। এই কঠিন সময়ে যারাই এখানে খাবারের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হন, কাউকেই খালি হাতে ফেরানো হয় না। প্রতিদিনই এখান থেকে অন্ন পান প্রায় ১৫০–২০০ জন অসহায় মানুষ। এমনকি আমোদপুর সংলগ্ন অঞ্চল ছাড়াও বহিরাগত, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক, যারা আমোদপুরের ওপর দিয়ে পেরিয়ে যান, তাঁদের জন্যেও থাকে এই অন্নের ব্যবস্থা। তবে তা পুরোটাই করা হয় প্রশাসনিক বিধিনিষেধ বা নির্দেশ মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। কতদিন চলবে এই ব্যবস্থা? এর উত্তরে অমিত দে জানালেন, যতদিন লকডাউন চলবে, ততদিনই এরকমভাবে মানুষের সেবা করে যেতে চান তাঁরা।
Advertisement