রাতের সমুদ্রতট সেজে উঠেছে প্রকৃতির আলোয়, মুগ্ধ তো হতেই হবে!

Advertisement

এই সপ্তাহেই আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি কর্ক উপকূলের ফাউন্টেইনসটাউন সৈকত সেজে উঠেছিল প্রকৃতির নীল আলোয়। সমগ্র তট জুড়ে জলতরঙ্গের সঙ্গে নেচে উঠছিল বারবার। অবশ্য এই নীল আলোর জন্য দায়ী এক ধরণের সামুদ্রিক এক কোষী প্ল্যাঙ্কটন। যাদের বলা হয়ে থাকে ডাইনোফ্লাজেলেট। এদের তুলনা করা হয় জোনাকিদের সঙ্গে। – ছবি : সংগৃহীত

beach at night is transformed into the light of nature

অনলাইন পেপার : গ্রাম-বাংলায় রাতের প্রকৃতিকে নিজের শীতল হলদে সবুজ আলোয় সাজিয়ে রাখে জোনাকির দল। ঝোপে-ঝাড়ে অথবা নদীর ধার ঘেঁষে মিট-মিট করে জ্বলতে থাকা জোনাকির মনোঃমুগ্ধকর সেই আলো দেখে যে কেউ প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যেতে পারে। কত কবি-সাহিত্যিকের কলমে উঠে এসেছে সে-কথা!

     কিন্তু ঘটনাটি যদি সমুদ্রের জলে ঘটত, ব্যাপারটি কেমন হতো? ধরা যাক, কোনও প্রকৃতি প্রেমিক রাতের সমুদ্র উপভোগ করতে সমুদ্রতটে পায়াচারি করছে। হঠাৎ দীপাবলির সাজানো রাতের মতো রাশি রাশি নীল আলোকরেখা তার পায়ের নিচে জলের তরঙ্গের সঙ্গে নাচতে শুরু করেছে। প্রকৃতি প্রেমিক ওই ব্যক্তির মানসিক অবস্থা তখন কেমন হতে পারে? এ যেন না চাইতেই বৃষ্টি। এসেছিলেন রাতের সমুদ্র উপভোগ করতে, উপরি পেয়ে গেলেন অদ্ভুত আলোক নাচন।

     ঘটনাটি মোটেও কাল্পনিক নয়। এরকম ঘটনা অনেকবারই ঘটেছে। এবং প্রায়ই ঘটে চলেছে। শুধু প্রয়োজন পড়ে নির্দিষ্ট জায়গা আর উপযুক্ত সময়। বিবিসি সংবাদ মাধামের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এই অদ্ভুত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মিলেছে এই সপ্তাহেই। স্থানটি ছিল আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি কর্ক উপকূলের ফাউন্টেইনসটাউন সৈকত। সূর্য ডোবার পরপরই নীল আলোকমালায় সেজে উঠেছিল ওই সৈকতের বিক্ষিপ্ত তট জুড়ে।

     তবে কেন এই অদ্ভুত নীল আলোকমালায় সেজে উঠেছিল সমুদ্র সৈকত। অবশ্য এর উত্তর যথাযথ গচ্ছিত রয়েছে বিজ্ঞানের কাছে। বিবিসির ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ওই রকম আলোর জন্য দায়ী এক ধরণের এক কোষী সামুদ্রিক প্ল্যাঙ্কটন। ওসান রিসার্চ অব অবজারভেশন আয়ারল্যান্ড যাদের নাম দিয়েছে ডাইনোফ্লাজেলেট। বলা বাহুল্য, এই প্ল্যাঙ্কটনকে সামুদ্রিক জোনাকিও বলা যেতে পারে। যা রাতের অন্ধকারে বিক্ষিপ্তভাবে সমুদ্রতটকে আলোকিত করে রাখে।

beach at night is transformed into the light of nature 2
ডাইনোফ্লাজেলেট

     জোনাকিদের আলো সৃষ্টির সময় দেখা যায়, তাদের কোষে অবস্থিত লুসিফেরাসের উপস্থিতিতে লুসিফেরিন কোষের এটিপি (ATP)-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে লুসিফেরাইল অ্যাডেনাইলেট তৈরি করে। পরে এই লুসিফেরাইল অ্যাডেনাইলেট অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়ায় অক্সিলুসিফেরিন ও অ্যাডনোসাইন মনোফসফেট তৈরি করে এবং এর থেকেই উৎপন্ন হয় তাদের আলো। ডাইনোফ্লাজেলেটের ক্ষেত্রেও অনেকটা সেরকমই ঘটে থাকে।

     সমুদ্রের জলে এই প্ল্যাঙ্কটন হামেশায় পাওয়া যায়। তবে কিছু জায়গায় এদের উপস্থিতি থাকে কয়েক কোটি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রতি লিটার জলে এই প্ল্যাঙ্কটন যখন লক্ষাধিক পরিমাণে জমা হয়, তখনই সমুদ্রতট ওই রকম নীল আলোকমালায় জ্বলে ওঠে। তবে এর জন্য চায় রৌদ্রজ্জ্বল দিন। কারণ ডাইনোফ্লাজেলেটগুলি সারাদিন অধিক রোদে তাপশক্তি সঞ্চয় করে রাতের অন্ধকারে নিজেদের আলোকমালায় মেলে ধরতে পারে।

Advertisement
Previous articleথানকুনি, চেনা গাছের অজানা কথা
Next articleআধুনিকতার যাঁতাকলে কদর কমছে মাহালি সম্প্রদায়ের বাঁশ শিল্পের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here