রাজমাতা নাইকি দেবী যেন ছিলেন গ্রীক দেবী নাইকিরই অবতার

Advertisement
ভারতের ইতিহাসে সুলতানি যুগের সুলতানা রাজিয়া বা ব্রিটিশ যুগের বীরাঙ্গনা লক্ষ্মী বাঈ-এর বীরত্বের কথা হামেশায় সাধারণের কাছে পরিচিত। তবে নাইকি দেবীর পরিচিতি সে তুলনায় অনেকটাই কম। সুলতানা রাজিয়া বা লক্ষ্মী বাঈ এর অনেক আগেই নিজের বীরত্ব দেখিয়ে গিয়েছেন তিনি। তিনি ছিলেন গোয়ার রাজকন্যা। তাঁর পিতা ছিলেন গোয়া রাজ কাদম্বা। একজন নারী হয়েও তিনি সেসময়ে অশ্ব চালনা, অস্ত্র চালনা, সামরিক কৌশল সম্পর্কে ভালোরকম জ্ঞাত ছিলেন।
নাইকি যেন ছিলেন গ্রীক দেবী নাইকিরই অবতার
Symbolic Image – Image by rsteve254 from Pixabay

সজয় পাল : ভারত আক্রমণের পর একের পর এক বিজয় মুহাম্মদ ঘুরি (আসল নাম মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ)-কে করে তুলেছিল যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। ১১৭৫-৭৬ সাল নাগাদ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি মুলতান ও উচ জয় করে ফেলেছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল আরও দক্ষিণে ভারত বিজয়ের। এই সময় তার বিশাল সেনাবাহিনী ও দক্ষ সেনানায়কের কাছে একপ্রকার মাথা নত করতে বাধ্য হচ্ছিলেন ক্ষমতাধর ভারতীয় রাজারা।

১১৭৮ সাল নাগাদ তিনি স্থির করলেন গুজরাত আক্রমণের। তাঁর বিশ্বাস ছিল এই ছোটো সাম্রাজ্যকে অতি সহজেই তিনি পরাজিত করতে পারবেন। কিন্তু ঘটনাটি ঘটেছিল ঠিক তার উল্টো। তাঁর বিশাল সেনাবাহিনীকে তিনি মুলতান থেকে উচে নিয়ে আসেন। তারপর মরুভূমির লাল বালি উড়িয়ে আক্রমণ করেন গুজরাত। অপরদিকে গুজরাত রাজ্যের সেনাবাহিনী ছিল যৎসামান্য। মুহাম্মদ ঘুরির সেনাবাহিনীর তুলনায় যেন কিছুই নয়।

সেবার কায়াদায়ার মরু প্রান্তে সংঘটিত সেই ভয়ঙ্কর যুদ্ধে উল্টে নাকাল হতে হয়েছিল মুহাম্মদ ঘুরিকেই। গুজরাত সেনা তছনছ করে দিয়েছিল মুহাম্মদ ঘুরির ভয়ঙ্কর অপরাজেয় সেনাবাহিনীকে। সেই যুদ্ধে কোনও ক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে খালি হাতেই মুলতান ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কেন? অপরাজেয় সেনা নিয়েও কেন সেদিন মুহাম্মদ ঘুরিকে ফিরতে হয়েছিল সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে?

একাধিক ঐতিহাসিকের দাবি, কারণ সেবার গুজরাত সেনার অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজমাতা নাইকি। কে এই রাজমাতা নাইকি? সে যেন গ্রীক দেবী নাইকিরই অবতার। গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী, দেবী নাইকি ছিলেন শক্তি, গতি ও বিজয়ের দেবী। অতীতে যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ জয়ের জন্য গ্রীক সেনা সদস্যরা এই দেবী নাইকি-কে স্মরণ করতেন।

ভারতের ইতিহাসে সুলতানি যুগের সুলতানা রাজিয়া বা ব্রিটিশ যুগের বীরাঙ্গনা লক্ষ্মী বাঈ-এর বীরত্বের কথা হামেশায় সাধারণের কাছে পরিচিত। তবে নাইকি দেবীর পরিচিতি সে তুলনায় অনেকটাই কম। সুলতানা রাজিয়া বা লক্ষ্মী বাঈ এর অনেক আগেই নিজের বীরত্ব দেখিয়ে গিয়েছেন তিনি। তিনি ছিলেন গোয়ার রাজকন্যা। তাঁর পিতা ছিলেন গোয়া রাজ কাদম্বা। একজন নারী হয়েও তিনি সেসময়ে অশ্ব চালনা, অস্ত্র চালনা, সামরিক কৌশল সম্পর্কে ভালোরকম জ্ঞাত ছিলেন। এমনকি রাজনীতি ও কূটনীতিতেও ছিলেন সমান পারদর্শী।

নাইকি দেবী বিয়ে করেছিলেন গুজরাতের সোলাঙ্কি বংশের রাজা অজয়পাল-কে। তবে অল্পদিনের মধ্যেই রাজা অজয়পাল মারা গেলে তাঁদের পুত্র দ্বিতীয় মূলরাজ কিশোর বয়সেই সিংহাসনে বসেন। সেনাপতি হন দ্বিতীয় ভিমদেব। যিনি সম্পর্কে ছিলেন রাজা অজয়পালের কাকা। তবে সাম্রাজ্য পরিচালনার সমস্ত দায়-দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন রাজমাতা নাইকি দেবী।

১১৭৮ সাল নাগাদ মুহাম্মদ ঘুরির গুজরাতের উপর নজর পড়লে রাজ সভার অন্য সদস্যরা বিচলিত হলেও নাইকি দেবী কখনও মুষড়ে পড়েননি। এমনকি গুজরাতের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির কাছে সাহায্য চেয়ে বিফল হয়েও তিনি দমে যাননি। দেশপ্রেম ও আত্মবিশ্বাসে ভর করে সেবার তিনি রুখে দিয়েছিলেন মুহাম্মদ ঘুরির অপরাজেয় সেনার বিজয় চাকা। শুধু তাই নয়, সম্মুখ সমরে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি নিজেই। সুদক্ষ সেনা পরিচালিকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কায়াদায়ার মরুপ্রান্তে নিজের হাতেই প্রাণ নিয়েছিলেন অসংখ্য সেনার। তাঁর বীরত্বে দিক্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সেবার মুহাম্মদ ঘুরি নিজেই একপ্রকার পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছিলেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে।

যদিও এই মহান রাজমাতার বীরত্বের প্রচার তেমনভাবে কোথাও উল্লেখ নেই। তাঁর কথা সর্বপ্রথম সামনে এনেছিলেন জৈন পণ্ডিত মেরুতুঙ্গ। তাঁর বর্ণনায় রাজমাতা নাইকি-র যেন বারবার গ্রীক পুরাণের দেবী নাইকি-র প্রতিচ্ছবিই ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবে।

Advertisement
Previous article২০১৮ সালের পুনরাবৃত্তি, গুলাব ঝরে তৈরি হয়েছে শাহিন
Next articleএ কোন অভিশাপ! গোটা একটি সাজানো গ্রাম ঢেকে যাচ্ছে কাঁদায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here