কিংবদন্তী রয়েছে, গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করলে একমাত্র পুরু রাজার কাছেই তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন। যুদ্ধের পূর্বে আলেকজান্ডারের স্ত্রী রৌঃশ্না রাজা পুরুকে একটি পবিত্র সুতো পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পুরু সেটিকে রাখি বন্ধন হিসাবেই চিহ্নিত করেছিলেন। তাই যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর এই ব্যাক্ট্রিয় বোনের রাখি বন্ধন এর মান রাখতে আলেকজান্ডারকে নিজে কখনও আঘাত করেননি।

জনদর্পণ ডেস্ক : ১৯০৫ সাল নাগাদ বঙ্গের ভাঙন ঠেকাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগ ছিল মনে গেঁথে রাখার মতো। ইংরেজ সরকার সেসময়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে বঙ্গভঙ্গের তোড়জোড় শুরু করেছিলেন। যা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কারোরই পছন্দের ছিল না। ওই বছর রাখি বন্ধন বা রাখি পূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর অনুসরণকারীরা বাংলার হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠা করতে একে ওপরের হাতে হলুদ সুতোর রাখি পরিয়ে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই চেষ্টা যথেষ্ট প্রশংসনীয় ছিল।
যদিও সেই সময়ের জন্য বঙ্গের ভাঙন রোধ করা সম্ভব হলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য বঙ্গভঙ্গ রদ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ে বাংলাকে সেই ভেঙেই দিয়ে গেল ইংরেজ সরকার আর কিছু ধান্দাবাজ ভারতীয়।
যাইহোক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখি বন্ধন উৎসবকে একটি একতার উৎসব হিসাবে প্রচলন ঘটিয়ে গিয়েছিলেন। যা আজও সমগ্র বাংলা জুড়ে রাখি পূর্ণিমার দিনে পালন করা হয়। কিন্তু এই উৎসব বেশ পুরনো। রামায়ণ-মহাভারতেও এর বিশেষ উল্লেখ রয়েছে।
জানা যায়, রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্র বানর সেনাদের মধ্যে একতা বা বন্ধনের আবর্তে বাঁধতে প্রত্যেকের হাতে বুনোফুলের রাখি পরিয়ে দিয়েছিলেন। অপরদিকে মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে, একবার শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে গেলে দ্রৌপদী নিজের আঁচলের কিছুটা অংশ ছিঁড়ে তার হাতে বেঁধে দিয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ তখন তাকে বোন বলে সম্বোধন করেছিলেন। এরকম অসংখ্য রাখি বন্ধন এর কথা লুকিয়ে রয়েছে পৌরাণিক ঘটনাগুলিতে।
ঐতিহাসিকভাবেও একাধিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। কিংবদন্তী রয়েছে, গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করলে একমাত্র পুরু রাজার কাছেই তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন। যুদ্ধের পূর্বে আলেকজান্ডারের স্ত্রী রৌঃশ্না রাজা পুরুকে একটি পবিত্র সুতো পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পুরু সেটিকে রাখি বন্ধন হিসাবেই চিহ্নিত করেছিলেন। তাই যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর এই ব্যাক্ট্রিয় বোনের রাখি বন্ধন এর মান রাখতে আলেকজান্ডারকে নিজে কখনও আঘাত করেননি। অবশ্য পুরু আলেকজান্ডারের বিশাল সেনার কাছে অতি সহজেই পরাস্ত হয়েছিলেন।
আর একটি কিংবদন্তী ঘটনা অনুসারে, ১৫৩৫ সাল নাগাদ গুজরাতের বাহাদুর শাহ্ চিতোর আক্রমণ করলে রানি কর্ণবতী মুঘল সম্রাট হুমায়ূনের সাহায্য চেয়ে পাঠান। সেই সঙ্গে হুমায়ূনকে একটি রাখিও পাঠিয়েছিলেন। যা ছিল ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। হুমায়ূন এতে অভিভূত হয়ে তাঁকে সাহায্যের জন্য সেনা পাঠান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁর সেনা চিতোর পৌঁছানোর পূর্বেই বাহাদুর শাহ্ চিতোর দখল করে ফেলে। এইরকম রাখি বন্ধন এর অসংখ্য গল্প লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাসের পাতাতেও।
একটা সময়ে এই রাখি বন্ধন শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কালক্রমে সেটি এখন জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে, এই প্রথা পৌরাণিক যুগে শুরু হলেও এটিকে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত সম্প্রদায়ের উৎসবে রূপান্তরিত করতে সর্বাধিক চেষ্টা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-ই।