Advertisement
সজয় পাল :মোবাইল, বর্তমান মানব সমাজের এক অপরিহার্য অঙ্গ। স্বল্পক্ষণের জন্যেও সে তার কাছ ছাড়া করতে নারাজ। দিনে দিনে এরই উন্নতি সাধনে ব্রতী হয়েছে এক শ্রেণীর মানুষ। ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে টুজি, থ্রিজির পর এখন বিশ্ব জুড়ে চালু হয়েছে ফোরজি। আগামী দু-এর বছরের মধ্যে ফাইভজিও চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। শহরাঞ্চল তো বটেই, গ্রামের সবুজ ক্ষেত্রগুলিও ছেয়ে গিয়েছে একের পর এক মোবাইল টাওয়ারে। যার নেতিবাচক ফল ইতিমধ্যেই ভোগ করতে শুরু করেছে সমগ্র জীবকুল।
মোবাইল টাওয়ার সংলগ্ন স্থানে রেডিও তরঙ্গ ও মাইক্রোওয়েভ একত্রিত হয়ে বায়ুমণ্ডলে একটি তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। যার আওতার মধ্যে থাকা মোবাইল ফোনগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কসাধন করতে সক্ষম হয়। এক্ষেত্রে টাওয়ার ও মোবাইল উভয় থেকেই ক্ষতিকরইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড (ইএমএফ), ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন (ইএমআর) এবং রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি (আরএফ)নির্গত হয়। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। মোবাইল টাওয়ার থেকে প্রতি বর্গমিটারে ছড়ানো তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ১৭১০০ থেকে ৭২০০০ মাইক্রোওয়াট। ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফ্রিকুয়েন্সি হলো ১৯০০ মেগাহার্জ, যা মানুষের শরীরকে সহজেই ভেদ করতে পারে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব মৌমাছি সহ বিভিন্ন পতঙ্গ। সম্প্রতি একটি গবেষণায় মোবাইল টাওয়ার সংলগ্ন স্থানে বসবাসরত মৌমাছিদের অদ্ভুত সব আচরণ লক্ষ্য করা গিয়েছে। তারা সাধারণত ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক চুম্বককে অবলম্বন করে সার্কেল সিস্টেমে দূর–দূরান্তে খাবার সংগ্রহ করতে ছুটে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে অনেক মৌমাছিই টাওয়ার থেকে নির্গত তড়ি চুম্বকীয় তরঙ্গের প্রভাবে বারবার দিকভ্রান্ত হয়ে আর বাসায় ফিরতে পারছে না। মাঝপথে মারা যাচ্ছে। তাদের জিনগত পরিবর্তনও লক্ষ্য করা গিয়েছে।
শুধু মৌমাছি নয়, অন্যসব পতঙ্গ এমনকি শালিক, টুনটুনি, চড়ুই বা ময়নার মতো পাখিরাও ক্রমশ পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। টুজি বা থ্রিজি পরিষেবা চালুর সাথে সাথে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছিল পতঙ্গ পরিবারগুলো, ঠিক তেমনি ফোরজি পরিষেবা চালু হতেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে পক্ষী পরিবারগুলো। আগামীতে চালু হতে যাচ্ছে ফাইভজি পরিষেবা। যার রেডিও তরঙ্গের মাত্রা হতে পারে দ্বিগুণেরও বেশি। এর প্রভাব পড়বে সমস্ত জীবকুলের ওপর। বাদ যাবে না মানুষও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে মানুষ অদূর ভবিষ্যতে নিজেই নিজেকে অন্ধকারে টেনে নিয়ে যাবে। কারণ পতঙ্গ পরিবার ক্রমশ বিনষ্ট হওয়ার ফলে কৃষিক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে।
Advertisement