মুক্তা কীভাবে এল ঝিনুকের শরীরে?

Advertisement

আসলে মুক্তা তৈরি হয় ঝিনুকের ম্যান্টল অংশে। খাদ্য গ্রহণের পর খাদ্যের ভিতরে থাকা বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সংশ্লেষিত হয়ে ঝিনুকের এই অংশে নেক্রর নামে এক ধরণের তরল নিঃসৃত হয়। এতে অধিকাংশই মিশে থাকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট। যা পরে জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে পরে। আর এটিই ঝিনুকের খোলস তৈরির মূল উপাদান। এই নেক্রর তাই মূলত ঝিনুকের আত্মরক্ষার কাজই করে থাকে।


Image by gunter from Pixabay

অনলাইন পেপার : এই বিশ্বে মুক্তা -ই একমাত্র রত্ন, যা পাওয়া যায় কোনও প্রাণীর শরীর থেকে। অন্যসব রত্ন অবশ্য আসে খনিজ পদার্থের সঙ্গে, মাটির তলা থেকে। মুক্তা বহু পুরনো একটি রত্ন। প্রায় ৫ হাজার বছর আগেও মানুষ মুক্তা কে অলঙ্কার হিসাবে ব্যবহার করেছে, সে প্রমাণ প্রত্ন তত্ত্ব সামগ্রীর মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ তখনকার সময়ের মানুষেরাও তাহলে জানত, মুক্তা পাওয়া যায় শুধুমাত্র ঝিনুক নামের এক বিশেষ জাতের জলজ প্রাণী থেকে। কিন্তু ঝিনুকের শরীরে এই মুক্তা এল কীভাবে?

এক্ষেত্রে অধিকাংশের ধারণা, খাদ্য গ্রহণের সময় ঝিনুক যে বালি কণা খেয়ে ফেলে, সেটিই পরবর্তীকালে পরিণত হয় মুক্তা তে। ব্যাপারটি অর্ধ সত্য।

আসলে মুক্তা তৈরি হয় ঝিনুকের ম্যান্টল অংশে। খাদ্য গ্রহণের পর খাদ্যের ভিতরে থাকা বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সংশ্লেষিত হয়ে ঝিনুকের এই অংশে নেক্রর নামে এক ধরণের তরল নিঃসৃত হয়। এতে অধিকাংশই মিশে থাকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট। যা পরে জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে পরে। আর এটিই ঝিনুকের খোলস তৈরির মূল উপাদান। এই নেক্রর তাই মূলত ঝিনুকের আত্মরক্ষার কাজই করে থাকে।

এখন খাদ্য গ্রহণের সময় ঝিনুকের ম্যান্টল অংশে যদি এমন কোনও উপাদান প্রবেশ করে, যা ঝিনুকের খাদ্য উপাদান নয়, ঝিনুক সঙ্গে সঙ্গেই আত্মরক্ষার জন্য নেক্রর নিঃসৃত করে ওই উপাদানটিকে ঢেকে দেয়। বারংবার এইভাবে ঢাকতে ঢাকতে আকারে বেশ বড় হয়ে মুক্তা য় পরিণত হয় অবশেষে। এইভাবে একটি ঝিনুকের ম্যান্টল অংশে এক বা একাধিক মুক্তা ও তৈরি হতে পারে। পরে মুক্তা সংগ্রহকারীরা ঝিনুকের এই ম্যান্টল অংশ থেকে বিশেষ উপায়ে ছুরির সাহায্যে মুক্তা সংগ্রহ করে নেয়।

মুক্তা বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। সাদা রঙের মুক্তা র পরিমাণ অবশ্য বেশি। তবে ধূসর, লাল, নীল, কালো বা সবুজ রঙের মুক্তা ও দেখতে পাওয়া যায়। মুক্তা র এই রঙের ভেদ মূলত খাদ্যের উপাদান, পরিবেশ আর প্রজাতির উপর নির্ভর করে। সাধারণত মুক্তা হয়ে থাকে গোলাকার। তবে অসম আকারের মুক্তা ও পাওয়া যায় এই প্রকৃতিতে। যাদের বলা হয় ব্যারোক।

একটি মুক্তা র ওজন কত হতে পারে? সাধারণত খোলা বাজারে যে মুক্তা অলঙ্কারের রত্ন হিসাবে বিক্রি হয়, তার ওজন কয়েক গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে ঐতিহাসিকভাবে এমনও মুক্তা পাওয়া গিয়েছে, যার ওজন গ্রাম ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে কিলোগ্রামে। ২০০৬ সালে ফিলিপাইনে একটি মুক্তা পাওয়া গিয়েছিল, যার ওজন ছিল প্রায় ৩৭ কিলোগ্রাম। সে সময়ে এর বাজার দর উঠেছিল প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলারের কাছাকাছি।

শুধু এটি নয়, বড় আকারের আরও অনেকগুলি মুক্তা পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। যার সবগুলিই ছিল প্রায় প্রাকৃতিক উপায়ে ঝিনুকের শরীরে তৈরি মুক্তা। তবে বর্তমানে খোলা বাজারে যে মুক্তা গুলি বিক্রি হচ্ছে তার ৯৯ শতাংশই চাষ করা মুক্তা। এর মূল্য বেশ কম।

Advertisement
Previous articleএখনও এল নিনো সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনে উঠতে পারেনি বিজ্ঞানী মহল
Next articleজামাই ষষ্ঠী : কীভাবে শুরু হল জামাইদের এই ভুঁড়িভোজের রীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here