মাহালী : কদর কম, তবু বাঁশ শিল্পকেই আঁকড়ে আছেন তাঁরা (ভিডিও সহ)

Advertisement

বীরভূমের মাহালী সম্প্রদায়ের মানুষেরা মূলত ঝাড়খণ্ড ও ছত্রিশগড় রাজ্য থেকে এসেছে। তাঁরা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। এদের কথ্যভাষা মাহালী। এই মাহালী ভাষার সঙ্গে আবার সাঁওতাল ভাষার বেশ মিল লক্ষ্য করা যায়। এই যেমন ‘মাহালী’ শব্দটি নিজেই এসেছে সাঁওতালি শব্দ ‘মাদ’ থেকে। যার অর্থ বাঁশ। মাহালী-রা বংশপরম্পরায় বছরের পর বছর ধরে অতি নিপুণ হাতে তৈরি করে চলেছে বাঁশের তৈরি কুলো, টোপা, পেঁচে, খলপা, সাজি, ঝাঁপি প্রভৃতি।


মাহালী : কদর কম, তবু বাঁশ শিল্পকেই আঁকড়ে আছেন তাঁরা

বিশ্বজিৎ ঘোষ ও বিজয় ঘোষাল : বাঁশের কোনও অভাব বঙ্গদেশে নেই। আবার এই বাঁশ ছাড়া অতীতের কোনও সভ্যতার অগ্রগতিও সম্ভব ছিল না। এই বাঁশকেই বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে এসেছে অতীতের পূর্বপুরুষেরা। যার প্রভাব আজও বয়ে বেড়াচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। যদিও আধুনিক এই সময়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে বাঁশের ব্যবহার। বাঁশের একাধিক বিকল্প দ্রব্যে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। তাই তেমনভাবে বাঁশের কদর নেই এখন। তবুও এই বাঁশকে আজও আঁকড়ে রয়েছে সমাজে পিছিয়ে পড়া এক উপজাতি, মাহালী সম্প্রদায়।

বীরভূমে সুদূর অতীত থেকেই বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। তার মধ্যে সাঁওতাল, কোঁড়া, ওরাং, মাহালি অন্যতম। বীরভূমের মাহালী সম্প্রদায়ের মানুষেরা মূলত ঝাড়খণ্ড ও ছত্রিশগড় রাজ্য থেকে এসেছে। তাঁরা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। এদের কথ্যভাষা মাহালী। এই মাহালী ভাষার সঙ্গে আবার সাঁওতাল ভাষার বেশ মিল লক্ষ্য করা যায়। এই যেমন ‘মাহালী’ শব্দটি নিজেই এসেছে সাঁওতালি শব্দ ‘মাদ’ থেকে। যার অর্থ বাঁশ। মাহালী-রা বংশপরম্পরায় বছরের পর বছর ধরে অতি নিপুণ হাতে তৈরি করে চলেছে বাঁশের তৈরি কুলো, টোপা, পেঁচে, খলপা, সাজি, ঝাঁপি প্রভৃতি।


Video – Mahali’s Bamboo Industry : Part 1

বীরভূম জেলার ভগবতীপুর ও পাহাড়পুর গ্রাম দুটিতে মাহালী-রা বসবাস করছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে। এই জেলার সাঁইথিয়া ব্লকের অন্তর্গত ভগবতীপুর ও পাহাড়পুর গ্রাম দুটির অবস্থান সদর শহর সিউড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এর মধ্যে পাহাড়পুর বক্রেশ্বর নদের ধারে অবস্থিত একটি প্রাচীন গ্রাম। ভগবতীপুর ও পাহাড়পুরে বর্তমানে যথাক্রমে ১৫ ও ২৪টি মাহালী পরিবার বসবাস করছে।

মাহালী সম্প্রদায়ের পুরুষেরা তাঁদের বাঁশ শিল্পের জন্য নিকট বা দূর থেকে ন্যায্য মূল্যে বাঁশ কিনে নিয়ে আসেন। সেই বাঁশ অস্ত্র দিয়ে চিরে সরু কাঠিতে রূপান্তরিত করেন নারী ও পুরুষ উভয়েই। তারপর অস্ত্র দিয়েই বিভিন্ন জিনিস তৈরির উপযোগী করেন সেই সরু কাঠিগুলিকে। অনেকে আকর্ষণ বাড়াতে সরু কাঠিগুলিকে বিশেষ উপায়ে রাঙিয়েও তোলেন বিভিন্ন রঙে। এক্ষেত্রে লাল, সবুজ আর হলুদ রঙই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন তাঁরা।

মাহালী-দের অর্থনৈতিক অবস্থা কোনও দিনই ভালো ছিল না। নিত্য অভাব লেগেই রয়েছে তাঁদের ছোট ছোট মেঠো বসত ঘরগুলিতে। বর্ষার দিনগুলি যেন আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে তাঁদের কাছে। বাঁশ থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষগুলি তৈরি করার জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট কোনও খোলামেলা বিস্তীর্ণ জায়গা। বর্ষার দিনগুলিতে সেই জায়গা পাওয়ার বড্ড অভাব রয়েছে তাঁদের।


Video – Mahali’s Bamboo Industry : Part 2

এর পাশাপাশি বাঁশের দ্রব্যাদি বিক্রির বাজারও ক্রমশ দূরে হারিয়ে যাচ্ছে তাঁদের থেকে। ন্যায্য মূল্যে বাঁশ কেনার পর তা থেকে দ্রব্য তৈরি করতে যে খরচ গুণতে হয় তাঁদের, তার থেকে লাভের অঙ্ক বের করতে বড্ড হিমশিম খেতে হয় এই মাহালী-দের। এছাড়াও আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে স্বল্প মূল্যের বিভিন্ন বিকল্প দ্রব্যাদি হাজির হয়েছে বাজারে। সেসবের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা চলে প্রতি নিয়ত।

পাহাড়পুরের মাহালী পাড়ার মাহালী সম্প্রদায়ের অন্যতম সদস্য লখীরাম মাহালী জানালেন, তাঁদের এই বাঁশ শিল্পের জন্য কোনও রকম সরকারি সুবিধা তাঁরা এখনও পাননি। মহিলা শিল্পীদের কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেই এখানে। এর পাশাপাশি প্ল্যাস্টিকজাত বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। তাই বাঁশ শিল্পের কদর কমছে ধীরে ধীরে।

Advertisement
Previous articleLata Mangeshkar : অপূরণীয় ক্ষতি সঙ্গীত জগতে, অন্যলোকে সুর সম্রাজ্ঞী
Next articleদীর্ঘকালীন প্যারাসিটামল সেবন বাড়াতে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি, দাবি গবেষকদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here