মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই একটি প্রথম সারির গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট। দেশের জনগণ যে প্রার্থীকে ৫১ শতাংশ ভোট দেবে, সেই প্রার্থীই হবেন পরবর্তী ৪ বছরের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু স্বাধীনতার পর ৫ বার এমন হয়েছে, যেখানে জনগণের দেওয়া নির্ধারিত ভোট বেশি পাওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচিত হতে পারেননি প্রার্থী। কারণ এদেশে জনগণ ভোট দিলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ পদ্ধতিতে। |

অনলাইন পেপার : আগামী ৩ নভেম্বর সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। কারণ ওই দিনই জানা যাবে আগামী ৪ বছর কে বসবেন আমেরিকার সিংহাসনে, আর ‘ছড়ি’ ঘোরানোর চেষ্টা করবেন সমগ্র বিশ্বের উপর। এবারের এই ভোট যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য কে কে অংশগ্রহণ করবেন, তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যেই সারা বিশ্ব প্রায় জেনে গিয়েছে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অথবা ডেমোক্রাটিক প্রার্থী জো বাইডেন, এই দুই জনের একজন ৩ নভেম্বরের পর হতে চলেছেন আগামী ৪ বছরের জন্য ‘হোয়াইট হাউজ’-এর বাসিন্দা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই একটি প্রথম সারির গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট। দেশের জনগণ যে প্রার্থীকে ৫১ শতাংশ ভোট দেবে, সেই প্রার্থীই হবেন পরবর্তী ৪ বছরের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু স্বাধীনতার পর ৫ বার এমন হয়েছে, যেখানে জনগণের দেওয়া নির্ধারিত ভোট বেশি পাওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচিত হতে পারেননি প্রার্থী। কারণ এদেশে জনগণ ভোট দিলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ পদ্ধতিতে।
কি এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি? ইলেকটোরাল কলেজ হল প্রেসিডেন্ট মনোনয়নকারী সমিতি। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, আমেরিকার প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে থাকে কতকগুলি ইলেকটোর। এই ইলেকটোরের সংখ্যা সেই অঙ্গরাজ্যের জনসাধারণের সংখ্যার পরিমাণের সঙ্গে নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আমেরিকার সবচেয়ে অধিক জনবসতি যুক্ত অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া। এই রাজ্যে ইলেকটোরের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি হবে, ৫৫টি। এইভাবে নিউইয়র্ক, টেক্সাস, ফ্লোরিডার ইলেকটোরের সংখ্যা যথাক্রমে ২৯টি, ৩৮টি ও ২৯টি। সমগ্র আমেরিকা জুড়ে মোট ইলেকটোরের সংখ্যা ৫৩৮টি।
এবার নজর দেওয়া যাক প্রাপ্ত ভোটের দিকে। এই দেশে জনগণের দেওয়া ভোটকে বলা হয় পপুলার ভোট। কোনও প্রার্থী যদি কোনও একটি অঙ্গরাজ্যের পপুলার ভোট তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে বেশি পেয়ে যান, তবে তিনি ওই রাজ্যের সমস্ত ইলেকটোরাল ভোটগুলিও পেয়ে যাবেন। ধরা যাক, ‘ক’ প্রার্থী ক্যালিফোর্নিয়ার পপুলার ভোট পেয়েছেন ৫০ শতাংশের কিছু বেশি। তাহলে সে ওই রাজ্যের ৫৫টি ইলেকটোর ভোটের সবগুলিই দখল করে ফেলবেন।
এইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে গেলে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট প্রার্থীকে পেতেই হবে। যদি কোনও কারণে দেশের মোট পপুলার ভোট কম পান, অথচ ইলেকটোরাল ভোট ২৭০টি বা তার বেশি পেয়ে যান, তবুও তিনি জনগণের কম ভোট পাওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন।
গত নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩০ লাখ পপুলার ভোট কম পাওয়ার পরেও ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। শুধু ২০১৬ নয়, ২০০০, ১৮৮৮, ১৮৭৬ ও ১৮২৪ সালের নির্বাচনেও এই একই পদ্ধতিতে জয়ী প্রার্থী পপুলার ভোট কম পাওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন।