সম্প্রতি ঘুনিতে এমনই এক বিষাক্ত সাপ আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলপী ব্লকের দেরিয়া গ্রামে। রাতে গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত হালদার যথারীতি ঘুনি পেতে বাড়ি ফিরে আসেন এবং পরের দিন ভোরবেলা মাছ নিতে গিয়ে লক্ষ্য করেন ঘুনিতে আটকে রয়েছে যথেষ্ট লম্বা একটি কেউটে সাপ। কেউটে এই অঞ্চলে মাঝে মধ্যেই নজরে পড়ে। |

জনদর্পণ ডেস্ক : সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে বন্যা ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার পাশাপাশি অন্যতম গুরুতর ভাবনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে মানুষ ও পশু সংঘাত। এই পশুর মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে মেরুদন্ডী প্রাণী, তেমনি বাদ পড়ে না অমেরুদন্ডী গোছের প্রাণীরাও। প্রতি পদক্ষেপে এখানে বিপদ যেন কোনওভাবেই পিছু ছাড়তে চাই না।
চলতি বর্ষার মরশুমে সেই সম্ভাবনা যেন আরও বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামবাসীরা বর্ষার এই সময়টাতে মাছ ধরার অভিপ্রায়ে জমির জল পাশ হওয়ার জায়গায় ঘুনি (এক প্রকার মাছ ধরার ফাঁদ) পাতে আর দূর্ভাগ্যবশত তাতে বিভিন্ন সময়ে লুপ্তপ্রায় বিষাক্ত সাপ আটকে যেতে দেখা যায়। যদিও সামান্য অসচেতন হলেই দংশন খেতে হয় সেই সাপের।
সম্প্রতি ঘুনিতে এমনই এক বিষাক্ত সাপ আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলপী ব্লকের দেরিয়া গ্রামে। রাতে গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত হালদার যথারীতি ঘুনি পেতে বাড়ি ফিরে আসেন এবং পরের দিন ভোরবেলা মাছ নিতে গিয়ে লক্ষ্য করেন ঘুনিতে আটকে রয়েছে যথেষ্ট লম্বা একটি কেউটে সাপ। কেউটে এই অঞ্চলে মাঝে মধ্যেই নজরে পড়ে। তবে এত বড়ো আকারের কেউটে বহুদিন লক্ষ্য করেনি কেউ।
সাপের সঙ্গে এমনিতেই মানুষের সংঘাত বহুদিনের। সাপ ও মানুষের মুখোমুখি সংঘর্ষে সাপেরই প্রাণনাশের ঘটনা ঘটে অধিকাংশ সময়ে। আর এভাবেই লুপ্ত হয়ে চলেছে খোরিস, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, গোখরো প্রভৃতি সাপেরা।
তবে এদিন ঘটল এর বিপরীত ঘটনা। সাপটিকে বাঁচাতে চেয়ে প্রশান্তবাবু সাহায্যপ্রার্থী হন প্রতিবেশী রাকেশ হালদারের। এবং তাঁর সূত্র ধরেই খবর পৌঁছে যায় হটুগঞ্জ নিবাসী ইন্দজিৎ শাহ্-র কাছে। পেশায় উন্নয়নমূলক বিভাগীয় কর্মী হলেও সাপের বৈজ্ঞানিক সংরক্ষণ ও উদ্ধারকার্যে তিনি বেশ প্রাজ্ঞ। বিলম্ব না করে তিনি সহযোগীদের নিয়ে পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে এবং উদ্ধার করেন ওই কেউটে-টিকে। এর পাশাপাশি ইন্দজিৎবাবু গ্রামবাসীদের তাৎক্ষণিক পাঠও দিলেন জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের উপর। পরবর্তীতে তাঁরই উদ্যোগে সাপটিকে ডায়মন্ডহারবার বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, সাপটি লম্বায় ছিল প্রায় সাড়ে ৭ ফুট।
এদিনের ঘটনা গ্রামবাসীদের উপর কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছে বলেই জানা গিয়েছে। কারণ অধিকাংশেই দৃঢ়চেতা হয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার সাক্ষী হলে অবশ্যই বন দফতর বা স্থানীয় অভিজ্ঞ মানুষের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করবেন। যথাযথ ব্যবস্থাপনাই পরিবেশকে তার স্বকীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।