মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে তখন মাত্র এক মাস বাকি। প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। হঠাৎ দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত বিভাসের বাবা বিমান মণ্ডল পরলোক গমন করেন। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল বিভাস ও তার মায়ের। বিভাসের বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য। চাষ-বাস করেই কোনও রকমে সংসার চলে তাদের। বিভাসের মা সারদা দেবী একজন গৃহবধূ। বাবার অকাল প্রয়াণে কী করবে ভেবে পায়নি বিভাস।

বিজয় ঘোষাল : সংসারে দারিদ্র আর নিত্য অভাব। তবু হৃদয়ে রয়েছে অদম্য ইচ্ছা আর কিছু করে দেখানোর তাগিদ। এই অধ্যবসায়কে পাথেয় করে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছে বীরভূম জেলার ভ্রমরকোল গ্রাম-পঞ্চায়েতের নওয়াপাড়া গ্রামের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিভাস মন্ডল। বিভাসের প্রাপ্ত নম্বর ৬৩৫। বাংলায় ৮৬, ইংরেজিতে ৯১, অঙ্কে ৯৩, ভৌতবিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞানে ৯৪ করে, ইতিহাস ও ভূগোলে যথাক্রমে ৮৭ ও ৯০ নাম্বার পেয়েছে সে। সব বিষয়ে লের্টাস মার্ক সহ সে প্রথম বিভাগে শতকরা ৯০.৭১ পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। আমোদপুর জয়দূর্গা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল বিভাস মণ্ডল। স্কুলের মধ্যে তৃতীয় স্থানও অধিকার করেছে সে।
মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে তখন মাত্র এক মাস বাকি। প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। হঠাৎ দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত বিভাসের বাবা বিমান মণ্ডল পরলোক গমন করেন। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল বিভাস ও তার মায়ের। বিভাসের বাবা-ই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য। চাষ-বাস করেই কোনও রকমে সংসার চলে তাদের। বিভাসের মা সারদা দেবী একজন গৃহবধূ। বাবার অকাল প্রয়াণে কী করবে ভেবে পায়নি বিভাস। তবুও কিছু করে দেখানোর অদম্য ইচ্ছাকে সঙ্গে করে আর বাবার অনুপ্রেরণাকে মাথায় নিয়ে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল তাকে। মাধ্যমিক এর ফলাফল কী হবে তা নিয়েও ছিল সন্দেহ।
তবে মোবাইলের স্ক্রিনে অনলাইনে মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে আনন্দ যেন ধরে রাখতে পারেনি বিভাস। পেরেছে সে বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে। আজ বিভাসের বাবা বেঁচে থাকলে অবশ্যই তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। জানালেন বিভাসের মা। বিভাসের মায়ের পাশাপাশি তার এই কাঙ্খিত সাফল্যে খুশি বাড়ির অন্য সদস্যরা সহ প্রতিবেশী ও স্কুলের শিক্ষকেরা।
বিভাস জানায়, গত বছর ২৭ ডিসেম্বর তার বাবা মারা যান ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে। তখন আর মাত্র ১ মাস বাকি ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে। এই দুর্দিনে তার মা একমাত্র অভিভাবক হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল তার। সাহস জুগিয়েছিল ছেলেকে আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার জন্য। তাই জীবনের বড় পরীক্ষার প্রস্তুতিতে তার মা-ই তাকে মানসিক ভাবে শক্ত করেছেন।
বিভাস আরও জানায়, পড়াশোনা করতে কোন সমস্যা হয়নি তার। স্কুলের শিক্ষক প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ মুখোপাধ্যায় সহ অন্য শিক্ষকদের পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছে সে। মাধ্যমিক প্রস্তুতিতে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে প্রসেনজিৎ বাবু বই জোগাড় করে দিয়ে পাশে থেকেছেন সব সময়।
এছাড়াও বিভাস মাধ্যমিক এ তার এই সাফল্যের পিছনে গৃহশিক্ষক রনজিৎ সাহাকেও বিশেষভাবে কৃতিত্ব দিচ্ছে। বিভাস জানায়, সব সময় রনজিৎ বাবু তার পাশে থেকেছেন। এই সাফল্যে তিনিও খুব খুশি।
বিভাস জানত সে ভাল ফল করবে। কিন্তু এতটা ভাল করবে এই আশা সে করেনি। স্কুলে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়া কোনওটাই তার লক্ষ্য ছিল না। বিভাসের স্বপ্ন সে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে। আর বাবার স্বপ্নকে পূরণ করবে। সে জন্য তার ইচ্ছা শক্তিকে পাথেয় করেই সে ইতিমধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনাও শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণে তার এখন সবচেয়ে বড় বাঁধা সংসারের দারিদ্রতা।
২০ মে ২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পরীক্ষার ৭৫ দিন পর প্রকাশ পেয়েছে এই ফলাফল। এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হার ৮৬.১৫ শতাংশ। জেলা ভিত্তিক পাশের হারে এগিয়ে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর।