যদিও প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর বিষয়গুলি বাদ দিলে মানুষের কাছে মাংস কেন এতটা প্রিয়, তার সঠিক কোনও কারণ এখনও জানতে পারেননি গবেষকেরা। তবে জার্মানির ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী বেনইয়ামিন বুতলার দাবি করেন, অভ্যাস, সংস্কৃতি ও অনুভূতির কারণে মানুষ মাংস পছন্দ করে। তার আরও দাবি, স্বাদের জন্যেই অনেক মানুষ পছন্দ করে মাংসকে।

অনলাইন পেপার : একথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই, এই বিশ্বে শাকাহারিদের তুলনায় মাংসাশী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে বা ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে মাংস ভোজনকে বাঁকা চোখে দেখেন। কিন্তু মাংসাশীদের কাছে এটাই নাকি বিশ্বের সেরা ভোজ্য। যদিও একাধিক বিজ্ঞানী বারংবার মাংসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে গবেষণায় তুলে ধরেছেন। কিন্তু তাতে কি যায় আসে!
প্রতি বছর চাহিদা নিবারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাংস উৎপাদন করতে যতটা পরিমাণ অতিরিক্ত খরচ বৃদ্ধি ঘটে, অন্য কোনও খাদ্যদ্রব্যের জন্য অতটা খরচ বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি বছর মাংসের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টন। ২০৫০ সাল নাগাদ মাংসাশীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটার কারণে সেই সংখ্যা পৌঁছে যেতে পারে প্রায় ৪৫ কোটি টনে। যা উৎপাদন করতে যথেষ্ট বেগ পেতে পারে মানুষ নিজেই।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎপাদনে সারা বিশ্বে প্রতি বছর যতটা জমির প্রয়োজন পড়ে, শুধুমাত্র গো-মাংস উৎপাদনে প্রয়োজন পড়ে তার থেকেও প্রায় ৩৬ গুণ বেশি জমির। এতে পরিবেশের উপর প্রভাবও পড়ে অনেকটাই বেশি। উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎপাদনে যতটা গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হয়, গো-মাংস উৎপাদনে তার প্রায় ৬ গুণ বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে।
যদিও প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর বিষয়গুলি বাদ দিলে মানুষের কাছে মাংস কেন এতটা প্রিয়, তার সঠিক কোনও কারণ এখনও জানতে পারেননি গবেষকেরা। তবে জার্মানির ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী বেনইয়ামিন বুতলার দাবি করেন, অভ্যাস, সংস্কৃতি ও অনুভূতির কারণে মানুষ মাংস পছন্দ করে। তার আরও দাবি, স্বাদের জন্যেই অনেক মানুষ পছন্দ করে মাংসকে।
এক সময় গবেষকেরা ধারণা করতেন, আদি যুগ থেকে মানুষের মাংস খাওয়ার অভ্যাসের জন্যেই তার শারীরিক গঠন হয়েছে বর্তমান মানুষের মতোই। আবার মস্তিস্কের আকারও বৃদ্ধি পেয়েছে মাংস খাওয়ার জন্যেই। কিন্তু বর্তমান গবেষণা এই তথ্যের ভুল কিছুটা সংশোধন করে দিতে পেরেছে। নতুন গবেষণায় জানা যাচ্ছে, ২০ লক্ষ বছর আগে মাংস খাওয়ার কারণে মানুষের মস্তিস্কের আকার যতটা বৃদ্ধি পেয়েছে, ১০ লক্ষ বছর আগে রান্না শেখার পর তার তুলনায় আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ এই সময় মানুষ রান্না করে আরও অনেক ধরণের খাবারের স্বাদ নিতে পেরেছে।
বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এটা ভেবে যে, ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে প্রায় ১ হাজার কোটি। স্বাভাবিকভাবে তখন মানুষের মধ্যে মাংসের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তখন চাহিদা মতো মাংস উৎপাদনে অনেক বেশি বেগ পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই বিজ্ঞানীরা বিকল্প ব্যবস্থার দিকে এখন থেকেই জোর দিতে চাইছেন।