সৌরজগতের গ্রহগুলি নিজ নিজ পথে সূর্যকে পরিক্রমণ করার সময় পরস্পর পরস্পরকে অতিক্রম করার ফলে তাদের মধ্যে কৌণিক দূরত্ব কমে যায়। এই ঘটনাটিকেই বলা হয় সংযোগ বা কনজংশন। বৃহস্পতি ও শনির মতো বৃহৎ আকৃতির গ্রহের ক্ষেত্রে এই ঘটনাটিকে বলা হচ্ছে ‘মহাসংযোগ’। বৃহস্পতি ও শনির ক্ষেত্রে গড়ে কুড়ি বছর অন্তর এমন ঘটনা ঘটলেও এবার অর্থাৎ ২০২০ সালে তাদের মধ্যে কৌণিক দূরত্ব হতে চলেছে প্রায় 0.১ ডিগ্রি। স্বভাবতই পৃথিবীর আকাশ থেকে দেখলে তাদের যুগ্ম গ্রহ হিসাবেই মনে হবে। |

শুভাশিস গড়াই : ২০২০, বছরটাকে ‘বিশে বিষময়’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হলেও আকাশপ্রেমীদের কাছে এমনটা নয়। এবছর আমরা দেখেছি সূর্য গ্রহণ, চাঁদের নানারূপ, ধুমকেতু থেকে উল্কাবৃষ্টি। বছরের একেবারে শেষ প্রান্তে সামনে এসেছে আরও এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ। তবে ঘটনাটা পর্যবেক্ষণ করতে শুধুমাত্র ওই দিনটিতে আকাশে নজর রাখলে হবে না। ঘটনার অন্তত দিন সাতেক আগে থেকে আকাশের দিকে চোখ রাখতে হবে। সেই মহাজাগতিক ঘটনাটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘গ্রেট কনজংশন’ বা মহাসংযোগ। ঘটতে চলেছে আগামী ২১ ডিসেম্বর সূর্যাস্তের ঠিক পরেই।
এমনিতে আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলি নিজ নিজ পথে সূর্যকে পরিক্রমণ করার সময় পরস্পর পরস্পরকে অতিক্রম করার ফলে তাদের মধ্যে কৌণিক দূরত্ব কমে যায়। এই ঘটনাটিকেই বলা হয় সংযোগ বা কনজংশন। বৃহস্পতি ও শনির মতো বৃহৎ আকৃতির গ্রহের ক্ষেত্রে এই ঘটনাটিকে বলা হচ্ছে ‘মহাসংযোগ’। বৃহস্পতি ও শনির ক্ষেত্রে গড়ে কুড়ি বছর অন্তর এমন ঘটনা ঘটলেও এবার অর্থাৎ ২০২০ সালে তাদের মধ্যে কৌণিক দূরত্ব হতে চলেছে প্রায় 0.১ ডিগ্রি। স্বভাবতই পৃথিবীর আকাশ থেকে দেখলে তাদের যুগ্ম গ্রহ হিসাবেই মনে হবে।
শেষবার এমনটি ঘটেছিল গ্যালিলিওর সময়ে অর্থাৎ ১৬২৩ সালে। প্রসঙ্গ ক্রমে বলে রাখা ভালো, তার ঠিক ১৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৬১০ সালে গ্যালিলিও তাঁর দূরবীনের সাহায্যে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ ও শনির বলয় আবিষ্কার করেছিলেন। যা ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। গণনা বলছে ২০৮০ সালে আবার এই ঘটনা ঘটবে। তবে ততদিন অপেক্ষা না করে এই সুযোগ হাতছাড়া করা ভুল হবে।
এবার ফিরে আসি কৌণিক দূরত্ব প্রসঙ্গে। কি এই কৌণিক দূরত্ব? সহজ কথায়, কোনও বস্তু দৃশ্যত যে দূরত্বে রয়েছে, তা আমাদের চোখের সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করবে সেটিই হল ওই বস্তুর কৌণিক দূরত্ব। এক্ষেত্রে ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতি ও শনি আমাদের চোখের সাথে 0.১ ডিগ্রি কোণ করে থাকবে। যার অর্থ ওই দিন বৃহস্পতি আর শনি গ্রহকে দেখা যাবে প্রায় গায়ে গা লাগা অবস্থায়। দেখে মনে হবে যেন একখানা মাত্র উজ্জ্বল গ্রহ দেখছি৷
শুধু আগামী ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতি ও শনির ‘মহাসংযোগ’-এর ঘটনা নয়, আগামী ২০২১ ও ২০২২ সাল মিলিয়ে এরকম চারটি সংযোগের ঘটনা ঘটতে চলেছে। ২০২১ সালের ১৩ জুলাই শুক্র ও মঙ্গল অবস্থান করবে ০.৫ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বে। ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল মঙ্গল ও শনির কৌণিক দূরত্ব হবে ০.৩ ডিগ্রি। ওই একই মাসের ৩০ তারিখে আবার শুক্র ও বৃহস্পতির কৌণিক অবস্থান হবে ০.২ ডিগ্রি। এছাড়াও ওই বছরের ২৯ মে মঙ্গল ও বৃহস্পতি ০.৬ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বে থাকবে।
বৃহস্পতি ও শনি ইতিমধ্যেই তাদের পরস্পরের দূরত্ব কমিয়ে আরও কাছে চলে এসেছে। পৃথিবীর আকাশ থেকে এই মহাজগতিক দৃশ্য দেখাও যাচ্ছে। তারা সবচেয়ে কাছে থাকবে ২১ ডিসেম্বর। তবে যাঁরা দেখবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন তাঁদের মনে হয়তো এখনও দুটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। কোন দিকে এবং কিভাবে তাঁরা দেখবেন এই মহাসংযোগের দৃশ্য?
এমনিতেই শীতের এই সময়টা আকাশ দেখার একেবারেই উপযুক্ত সময়। যাঁরা রীতিমতো প্রতিদিনই প্রায় আকাশের দিকে নজর রাখেন, তাঁদের পক্ষে এই গ্রহ দুটিকে চিনে নেওয়া খুব একটা কঠিন হবে না। নতুনদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বেশ সহজ। কারণ বৃহস্পতির উজ্জ্বলতা এমনিতেই অত্যন্ত বেশি (চাঁদ, শুক্র গ্রহ ও মঙ্গল গ্রহের পর)। তাই সহজেই চিনে নেওয়া যায়। আর শনি থাকবে ঠিক এর পাশেই। সূর্যাস্তের পর দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে দিগন্তরেখা থেকে প্রায় ১৫-২০ ডিগ্রী উপরে ওই দিন অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর দেখা যাবে এই মহাসংযোগ।
মজার ব্যাপার, খালি চোখেও দিব্যি দেখা যাবে এই দৃশ্য। তবে চাইলে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বাইনোকুলার ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে দেরি না করে আসুন গ্রহ-নক্ষত্র-রাশি সংক্রান্ত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে ছুঁড়ে ফেলে প্রত্যক্ষ করি এই মহাসংযোগের ঘটনাকে।