Advertisement
নাসার মঙ্গলযান ‘কিউরিসিটি’ আগে থেকেই মঙ্গলের মাটিতে তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছে প্রাণের অস্তিত্ব। কিন্তু কোথাও যেন কিছুটা খামতি রয়ে গিয়েছে। এবার সেই খামতি দূর করতে নাসা পাঠালো এযাবৎকালের সবচেয়ে উন্নত মঙ্গলযান ‘পারসিভিয়ারেন্স’-কে। ‘পারসিভিয়ারেন্স’ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করবে। – ছবি : সংগৃহীত
|
রঞ্জন সরকার : সৌরমণ্ডলের চতুর্থ গ্রহ হল মঙ্গল, যাকে নিয়ে পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণার কোনও শেষ নেই। পৃথিবীর পরবর্তী এই লাল গ্রহটিতে প্রাণ আছে, কি নেই সেই প্রশ্নকে দূরে সরিয়ে কবেই সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রী’ পাড়ি দিয়েছিল সেখানে। তারপর সেখানকার অদ্ভুত সব প্রাণীদের সঙ্গে কুস্তি-দোস্তিও করতে দেখা গিয়েছিল সেই কাহিনীতে। হলিউড অবশ্য আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। রীতিমতো মঙ্গলের প্রাণীদের সঙ্গে পৃথিবীবাসীর সংযোগ ঘটিয়েছে তাদের বহু চলচ্চিত্রে।
কিন্তু বাস্তবে আদৌ কি সেখানে প্রাণের নিদর্শন বলে কিছু আছে? যদিও এসব তথ্য অনেকদিন ধরেই খুঁজে চলেছে নাসার মহাকাশযান ‘কিউরিসিটি’। রোবোটিক এই গাড়িটি তন্ন তন্ন করে মঙ্গলের মাটিতে খুঁজে চলেছে প্রাণের ‘দুষ্প্রাপ্য’ সব নমুনা। জল আর বরফ অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছে সেখানে। অস্তিত্ব মিলেছে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অথবা লাল ধুলি ঝড়েরও। নিয়ম বেধে মঙ্গলকে ঘুরে চলেছে ফোবোস ও ডিমোস নামের দুটি চাঁদ। তবে প্রাণ কোথায়? নাকি ‘কিউরিসিটি’-র রোবোটিক চোখকে ফাঁকি দিয়ে সেখানকার সমস্ত প্রাণগুলি লুকিয়ে পড়েছে লাল ধুলোর আড়ালে।
তাই এবার আরও বড়ো অভিযানে নেমে পড়ল নাসা। ৩০ জুলাই স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫০ নাগাদ মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল এযাবৎকালের সবচেয়ে উন্নতমানের মঙ্গলযান ‘পারসিভিয়ারেন্স’। এদিন এই ৬ চাকার মঙ্গলযানটি উৎক্ষেপণ করা হয় ফ্লোরিডার কেপ কানাভেরাল থেকে। এটিতে রয়েছে ১৯টি উন্নতমানের ক্যামেরা এবং এর ওজন প্রায় ১ মেট্রিক টন। এটিকে তৈরি করা হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরিতে। বিজ্ঞানীদের দাবি, আগের মঙ্গলযান ‘কিউরিসিটি’-তে যে খামতি ছিল, তা পূরণ করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই ‘পারসিভিয়ারেন্স’-এর।
১৯টি হাইডেফিনেশন ক্যামেরার পাশাপাশি এটিতে আরও যুক্ত করা হয়েছে শক্তিশালী ২টি মাইক্রোফোন ও একাধিক বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এটিকে তৈরি করতে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তাঁরা। ‘পারসিভিয়ারেন্স’-এর নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী জিম ব্রাইডেনস্টাইন জানালেন, যানটি মঙ্গলের মাটিতে যখন চলাফেরা করবে পৃথিবীতে বসে সেটি শুধু দেখা নয়, তার শব্দও শোনা যাবে স্পষ্টভাবে। তারপর সেই শব্দের বিশ্লেষণও করা যাবে।
এর একটি বিশেষ কাজ হল মঙ্গলের নিরক্ষীয় অঞ্চলের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে তার বিশ্লেষণ করা। ‘পারসিভিয়ারেন্স’ নামবে মঙ্গলের একটি হ্রদের পাশে। যেহেতু এক সময়ে প্রচুর জল বয়ে যেত এই হ্রদ দিয়ে এবং একটি সুবিশাল পলির স্তরও সেখানে রয়েছে, যার জৈব বিশ্লেষণ খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই পলির স্তরে যদি কোনওভাবে কোনও অণুজীবের সন্ধান পায় ‘পারসিভিয়ারেন্স’, তাহলেও প্রমাণ পাওয়া যাবে লাল গ্রহে কোনও এক সময়ে প্রাণের পরিবেশ ও প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। ‘পারসিভিয়ারেন্স’ মঙ্গলে পৌঁছবে আগামী বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি নাগাদ। আর পৌঁছেই শুরু করে দেবে তার ক্রিয়াকলাপ। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে সমগ্র বিজ্ঞানী মহল।
Advertisement