ভেষজ আবিরের চাহিদা ছিল এবছর বেশ তুঙ্গে

Advertisement
মানুষ নিজের ত্বকের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। তাই অন্যান্যবারের থেকে এবছর দোলযাত্রায় সবচেয়ে বেশি খোঁজ হয়েছে ভেষজ আবিরের। দাম রাসায়নিক আবিরের থেকে কিছুটা বেশি হলেও ভেষজ আবিরের চাহিদা ছিল এবছর বেশ তুঙ্গে। তবে বাজার ঘেঁটে যাচাই করে আবির কিনতেও কুণ্ঠা বোধ করেননি ‘দোল প্রেমী’ মানুষেরা। কারণ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর চালাকিতে ভেষজ আবিরের প্যাকেটেই বিক্রি হয়েছে রাসায়নিক আবির।
ভেষজ আবিরের আবিরের চাহিদা ছিল এবছর বেশ তুঙ্গে
Image by Murtaza Ali from Pixabay

বিদিশা মিত্র : গত ২৮ মার্চ ছিল দোল পূর্ণিমা বা দোলযাত্রা অর্থাৎ ‘রঙ খেলার দিন’। সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায় দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করেছে। কৃত্রিম রঙে মনের মানুষকে রাঙিয়ে নিয়েছে নিজের মতো করে। লাল, নীল, সবুজ, হলুদের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে সমস্ত রাগ-অনুরাগ আর ক্ষোভ। এদিন যেন ব্যস্ত সময়ও থেমে গিয়েছে কিছুক্ষণের জন্য।

বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য সখীদের সঙ্গে রঙ খেলায় মেতে উঠেছিল। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। আবার অন্য লোককথা অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ দেবী রাধিকার থেকে কালো ছিল। কৃষ্ণ মায়ের কাছে এই অভিযোগ করলে মা রাধিকার মুখে রঙ ছুঁড়ে মারে। পরে এই রঙ ছোঁড়াকেই উৎসবে পরিণত করে শ্রীকৃষ্ণ। এই উৎসব অবাঙালিদের কাছে ‘হোলি’ নামে পরিচিত। দোলযাত্রার পরের দিন ‘হোলি’ উৎসবে মেতে ওঠে অবাঙালিরা।

‘হোলি’ বা ‘দোলযাত্রার’ প্রধান উপাদান ‘আবির’, যা এক প্রকার গুঁড়ো রঙ। ফাল্গুন মাসের উৎসবে এই উপাদান ব্যবহার করা হয়, তাই অন্য কথায় একে ‘ফাগ’-ও বলা হয়ে থাকে। কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক দুই রকমভাবেই আবির তৈরি হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে আবিরের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃত্রিম আবিরের উৎপাদনই হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। যা ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধরণের আবির তৈরিতে সাধারণত ব্যবহার করা হয় রেড অক্সাইড, মেটানিল ইয়েলো, ম্যালাকাইট গ্রিন ছাড়াও সীসা, ক্যাডমিয়ামের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক। যার ফলে দোলের পর অধিকাংশ মানুষই (বিশেষ করে ছোটো শিশুরা) ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে।

তবে প্রাকৃতিক আবির বা ভেষজ আবিরে এই সমস্যা থাকে অনেক কম। এই ধরণের আবির তৈরি হয় প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান যেমন, গাঁদা ফুল, কাঁচা হলুদ, জবা, বীট, অপরাজিতা, পালং, গোলাপের নির্যাস দিয়ে। এই আবিরে রাসায়নিক থাকে নামমাত্র।

মানুষ নিজের ত্বকের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। তাই অন্যান্যবারের থেকে এবছর দোলযাত্রায় সবচেয়ে বেশি খোঁজ হয়েছে ভেষজ আবিরের। দাম রাসায়নিক আবিরের থেকে কিছুটা বেশি হলেও ভেষজ আবিরের চাহিদা ছিল এবছর বেশ তুঙ্গে। তবে বাজার ঘেঁটে যাচাই করে আবির কিনতেও কুণ্ঠা বোধ করেননি ‘দোল প্রেমী’ মানুষেরা। কারণ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর চালাকিতে ভেষজ আবিরের প্যাকেটেই বিক্রি হয়েছে রাসায়নিক আবির।

তবে জেলায় ভেষজ আবির তৈরির কর্মশালা ও কারিগর বেশ কম। তাই প্রশাসনের উদ্যোগে ভেষজ আবির তৈরির কর্মশালা ও কারিগরের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে তবেই ভেষজ আবিরের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকবে।

Advertisement
Previous articleসমাজের সাফাইকর্মী সোনা দেবী নিজেই আজও অচ্ছুৎ
Next articleআসতে পারে ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলার নতুন চুক্তিপত্র, সম্মতি ২৩ দেশের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here