ভাইরাস আসে ভাইরাস যায়, ‘ক্ষুধা ভাইরাস’ যাবে কবে?

Advertisement
Hun2
সুমন সরকার : কোভিড১৯এর দৌলতেভাইরাসশব্দটি এখন বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত এবং ব্যবহৃত একটি শব্দে পরিণত হয়েছে সারা পৃথিবীর ধনীগরীব, নবীনপ্রবীণ, শিক্ষিতঅশিক্ষিত সহ সমস্ত শ্রেণীর মানুষ এক বাক্যেই বুঝে নিতে পারছে এই শব্দটির অর্থও শিক্ষিত সমাজ শিক্ষা অর্জনের সময়কালে পাঠ্যবইয়ে বিস্তারিত জেনেছেভাইরাসসম্পর্কে কিন্তু যারা অত দূরও শিক্ষা অর্জন করতে পারেনি, তারাও এর আগে কমবেশি অনেকবারই শুনেছে ওই শব্দটি কিন্তু তখনও পর্যন্ত তার কার্য ক্ষমতা সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা করতে পারেনি এখন অবশ্য পারছে করোনার ভয়াবহ রূপ বা ক্ষমতা দেখে
     পূর্বে করোনার মতোই বহুবার একাধিক অজানা ক্ষতিকর ভাইরাসে জর্জরিত হয়েছে পৃথিবী লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ গিয়েছে সেসময়েও তারপরেও রক্ষা পেয়েছে মানব সভ্যতা প্রাণঘাতী ভাইরাস সম্পর্কে জেনে ভ্যাকসিন আবিস্কার ও তার প্রয়োগে শান্ত হয়েছে পৃথিবী বলা বাহুল্য করোনাও একদিন নির্মূল হবে বা আয়ত্তে আসবে উন্নত পৃথিবীতে তা শুধু এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র
     কিন্তুক্ষুধা ভাইরাসনির্মূল হবে কবে? ‘ক্ষুধা ভাইরাসনামটা অদ্ভুত শোনালেও, এর পরিচিতি আদিকাল থেকেক্ষুধা’-র সঙ্গেভাইরাসশব্দটি মিশিয়ে নতুন কাব্যিক নামকরণ হয়েছেক্ষুধা ভাইরাসসোশ্যাল নেটওয়ার্কের বিভিন্ন সাইটে এখন এই শব্দটি বেশ ঘোরাঘুরি করছে। কে বা কারা শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা শুরু করল, সে প্রসঙ্গে না গিয়ে বরং শব্দটির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করা যাক
     আমাদের শরীরে প্রতি নিয়ত বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের আগমন ঘটছে তাদের মধ্যে কোনওটি উপকারী আবার কোনওটি অপকারী অপকারী ভাইরাস শরীরকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দেবে, এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমাদের শরীরও ছেড়ে কথা বলে না প্রতি নিয়ত সংগ্রাম করে চলে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যখন আর পারে না, তখন প্রয়োজন হয় বাইরের ক্ষমতা অর্থাৎ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে
     কিন্তু ভাইরাস যখন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, ডাক্তারের কাছেও যখন তার উপযুক্ত প্রতিষেধক না থাকে, তখন বাধ্য হতে হয় তার কাছে হার মানতে পূর্বে এরকম বহুবার হয়েছে অজানা ভাইরাসে একাধিকবার পৃথিবী তছনছ হয়ে গিয়েছেবিশেষজ্ঞরা তাকেই বলেছেন মহামারীএখন যেমন করোনা সারা বিশ্বকেই এক প্রকার দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলেছে
Hun1
ছবি : সংগৃহীত
     ঠিক তেমনি ক্ষুধাও মানুষের জীবনকে দুর্দশার মুখে ঠেলে দেয় মানুষ বা অন্য যে কোনও প্রাণী তার জীবদ্দশায় যা কিছু করে, তার অধিকাংশ কারণই হল ক্ষুধানিবারণ এই ক্ষুধানিবারণের জন্যেই সমস্ত বিশ্বের প্রতিটি প্রাণী প্রতি নিয়ত হিংসা, মারামারি, সংঘর্ষ বা যুদ্ধ করে চলে এই আধুনিক যুগে দাঁড়িয়েও দেখতে পাওয়া যায়, বর্তমান মানব সভ্যতার এক বিশাল সংখ্যক মানুষ আজওক্ষুধানিবারণের জন্য সভ্য সমাজের ডাস্টবিন দখল করতে জীবন বাজি রেখে কুকুরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে তাইক্ষুধাএখানে সবচেয়ে ভয়ঙ্করভাইরাসআর তার চেয়েও অবাক করা ব্যাপার, আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার গ্রাফরেখা কখনওই নিম্নমুখী হয় না। বরং ঊর্ধ্বমুখী হয় ক্রমশ।
     Global Hunger Index Data (2019) অনুযায়ী, ভারতবর্ষক্ষুধাতালিকায় ১০২ নাম্বার অবস্থানে রয়েছে সারা পৃথিবীতে ২০১৫ সালে ৭৮৫ মিলিয়ন থেকে ২০১৯ সালে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮২২ মিলিয়ন অর্থাৎ ৪ বছরে বেড়েছে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন ক্ষুধার্ত মানুষ (আরও একটি আশঙ্কা প্রকাশ পাচ্ছে, করোনা পরবর্তী সময়ে এই ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা অকল্পনীয় হারে বৃদ্ধি পেতে পারে)। আবার UNICEE (2018) Data থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতি বছর গড়ে ৩.১ মিলিয়ন শিশু শুধুমাত্র খাবারের অভাবেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় এছাড়াও ভারতের একাধিক সমাজসেবা সংগঠনের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এই ভারতেই প্রতিদিনই প্রায় গড়ে ৩০০০ শিশুর মৃত্যু ঘটছে খাবার না পাওয়ার জন্য
     যদিও এসব তথ্য নিয়ে তেমন কোনও আলোচনা হয় না কোথাও ফাইল বন্দি এই তথ্যগুলি দিনের পর দিন সারিবদ্ধভাবে লুটিয়ে থাকে ধুলোই ঢাকা টেবিলের একপাশে ধুলো ঝেড়ে ফাইল খোলার প্রয়োজন বোধ করে না এই সভ্য সমাজ
     পরিশেষে জানতে ইচ্ছা করে, পূর্বে করোনার মতো একাধিক ভয়ঙ্কর ভাইরাস পৃথিবীতে এসেছে, আবার চলেও গিয়েছে মানুষই নির্মূল করেছে তাদের করোনা ভাইরাসও একদিন থাকবে না নিশ্চিত সেও নির্মূল হবে মানুষেরই হাতে কিন্তুক্ষুধা ভাইরাসনির্মূল হবে কবে? এই ভয়ঙ্করভাইরাস’-এর আদৌ কি কোনও প্রতিষেধক তৈরি করবে মানুষ!
(লেখক কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী)
Advertisement
Previous articleপ্রকৃতির সংস্পর্শে মানসিক দুশ্চিন্তা কমে : তথ্য উঠে এল গবেষণায়
Next articleসৌরবিদ্যুৎ জগতে শুরু হতে চলেছে নতুন অধ্যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here