Advertisement
অনলাইন পেপার : মোটামুটিভাবে চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই মানুষ তার শারীরিক দুর্বলতাগুলি অনুভব করতে পারে। ঠিক আগের মতো দৌড়-ঝাঁপ করতে তার অসুবিধা হয়। বারবার মনে হতে থাকে, এই বুঝি বৃদ্ধ দশা চলে এল। চল্লিশ ঊর্ধ্ব সমস্ত মানুষের এটাই ধারণা হওয়া স্বাভাবিক। যতই বয়সকে লোকানো যাক না কেন, বয়স নিজে থেকে অবশ্যই জানান দিয়ে দেবে। বয়সের এটাই ধর্ম। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
ফিরে আসা যাক বিজ্ঞানের কাছে। বৃদ্ধ দশা বলতে বিজ্ঞান কি বলতে চাইছে, জেনে নেওয়া যাক তার উত্তর। বিজ্ঞান বলছে, মানুষের শরীরের সহস্র কোটি কোষ কখনও চিরস্থায়ী নয়। ক্রমাগত মরছে, আবার পুনরায় ওই মারা যাওয়া কোষগুলির স্থানে নতুন কোষ জন্ম নিয়ে শূন্যস্থানকে পূরণ করে দিচ্ছে। কৈশোর বা যৌবনের সময়কালে এর অনুপাত থাকে প্রায় সমান। কিন্তু বয়স চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে কোষের জন্ম-মৃত্যুর হারে ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। কোষের জন্মের হার কমে গিয়ে বাড়িয়ে দেয় মৃত্যুর হার। তখন থেকেই শারীরিক দুর্বলগুলি প্রকাশ পেতে থাকে। সে সঙ্গে দুর্বল হতে থাকে শারীরিক বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও। আরও কিছু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই প্রক্রিয়াতেও গতি পায়। পরে যখন কোষের জন্মের হার একেবারেই কমে গিয়ে মৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। এই মুহূর্তটিকে বিজ্ঞান বৃদ্ধ দশা বলছে।
সেল মেটাবলিজম জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ও বার্কলের কয়েকজন বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তাঁরা বয়স থামিয়ে দেওয়ার মূল মন্ত্র জেনে ফেলেছেন। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যাচ্ছে, মানুষের শরীরে এনএলআরপি-থ্রি ইনফ্ল্যামাসোম নামের প্রোটিনটি মূলত বয়স বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়। তখন এই প্রোটিনটি শারীরিক সক্ষমতার বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকে। এমনকি ডায়াবেটিস, স্মৃতিভ্রংশ বা ক্যানসারের মতো রোগেরও সৃষ্টি করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই প্রোটিন থেকে এক ধরণের অণুকে সরিয়ে ফেলে লক্ষ্য করেছেন, প্রোটিনটি আর তার কাজ করতে পারছে না। অর্থাৎ নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। ফলে শারীরিক সক্ষমতাও আর হ্রাস পাচ্ছে না।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই আবিষ্কার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। বয়স বাড়ার ফলে যে রোগগুলি শরীরে হানা দেয়, মানুষ তার থেকে মুক্তি পেতে পারে। শারীরিক ক্ষমতাও বজায় রাখতে পারবে। ফলে বৃদ্ধ দশা শরীরে পৌঁছাতে পারবে না।
Advertisement