প্রায় ২৫০-৩০০ বছর পূর্বে স্থানীয় পাইকপাড়া-ক্ষতিপুর গ্রাম সংলগ্ন একটি মাঠ থেকে ধরমরাজ ঠাকুর এর একটি শিলাপাথর পেয়েছিলেন তাঁদেরই বংশের ব্রজসুন্দরী ঘোষ (দেবাংশী) নামের এক মহিলা। পরে সেটি বেলিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করা হয়। তারপর কালে কালে তার মহিমা ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। রাজ্য ও দেশের পাশাপাশি এখন বিদেশ থেকেও বিপুল পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে এখানে।

জনদর্পণ প্রতিনিধি : বীরভূম জেলার আমোদপুর-সাঁইথিয়ার মধ্যবর্তী বেলে বা বেলিয়া বাংলার আর পাঁচটা গ্রামের মতোই কৃষি নির্ভর অতি সাধারণ একটি গ্রাম। কিন্তু তার পরিচিতি এখন জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য, রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ এমনকি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বলাবাহুল্য, তার এই বিপুল পরিচিতির কারণ এখানকার জাগ্রত ধরমরাজ ঠাকুরের মহিমা। গ্রামবাসীদের দাবি, ঠাকুরতলার মাটি এবং ঔষধি গাছ মিশ্রিত তেল বিভিন্ন প্রকারের ব্যথা বিশেষ করে বাতের ব্যথায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাদের আরও দাবি, কাছের বা দূরের বহু রোগী ইতিমধ্যে বাতের ব্যথা থেকে পরিত্রাণও পেয়েছে।
গ্রামের বাসিন্দা জহর কুমার ঘোষ জানালেন, প্রায় ২৫০-৩০০ বছর পূর্বে স্থানীয় পাইকপাড়া-ক্ষতিপুর গ্রাম সংলগ্ন একটি মাঠ থেকে ধরমরাজ ঠাকুর এর একটি শিলাপাথর পেয়েছিলেন তাঁদেরই বংশের ব্রজসুন্দরী ঘোষ (দেবাংশী) নামের এক মহিলা। পরে সেটি বেলিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করা হয়। তারপর কালে কালে তার মহিমা ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। রাজ্য ও দেশের পাশাপাশি এখন বিদেশ থেকেও বিপুল পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে এখানে। জহর কুমার ঘোষের বাবা চন্দ্র কুমার ঘোষ দেবাংশীও জানালেন এই একই কথা।
বর্তমানে এক সুবিশাল পাকুড় গাছের নিচে স্থাপন করা হয়েছে এই ধরমরাজ ঠাকুর এর মন্দিরটি। সারা বছরই নিয়ম ও রীতি মেনে পুজো চলে এখানে। তবে বৈশাখের বুদ্ধ পূর্ণিমায় বেশ জাঁকজমক করে ধরমরাজ ঠাকুর এর পুজোর আয়োজন করা হয়। এখানে পাঁঠা বলিরও চল রয়েছে। ভক্তেরা তাদের মানত অনুযায়ী প্রতি বছর বিপুল পাঁঠা বলি দেন এখানে।
বৈশাখের বুদ্ধ পূর্ণিমায় এখানে জাঁকজমক সহকারে পুজোপাঠের আয়োজন চললেও এই স্থানের মূল মহিমা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার আষাঢ় মাসে। আষাঢ় মাসের প্রতি রবিবার এখানে বিপুল সংখ্যক ভক্তের আগমনে মেলারও আয়োজন হয়ে থাকে। রাস্তার দু’ধার ধরে আষাঢ়ের প্রতি রবিবার দোকানিরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেন। ভক্তেরা পাশেরই এক সুগভীর পুষ্করিণী বা পুকুর থেকে স্নান সেরে মন্দিরে আসেন পুজো দিতে ও ধরমরাজ ঠাকুর দর্শন করতে। পুজোর সমস্ত উপকরণ তারা পেয়ে যান মেলার সারিবদ্ধ দোকানিদের কাছ থেকে। মন্দির সংলগ্ন স্থানে বাতের ব্যথার জন্য মাটি এবং ঔষধি গাছ মিশ্রিত তেলেরও ব্যবস্থা থাকে। ভক্তেরা পুজোর শেষে সেই তেল নিয়ে বাড়ি ফেরেন। বর্তমানে মন্দিরের দায়িত্বে আছেন ১৬ জন সেবায়েত এবং ১২ জন পুরোহিত।