বৃদ্ধাশ্রম এর সংখ্যা বাড়ছে প্রতি বছর, বাড়ছে উদ্বেগ

Advertisement

অনেক সময় সন্তান কর্মসূত্রে অন্য জায়গায় মাইগ্রেট বা স্থানান্তরিত হয়ে যেখানে যাচ্ছে সেখানে তাদের নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু অন্য জায়গায় গিয়ে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে এবং দীর্ঘদিন স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করার পরে, সন্তানের অধীনস্থ হয়ে থাকার ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যার জন্যেও বৃদ্ধাশ্রম এর সংখ্যা বাড়ছে।


Symbolic Image – Image by Kasun Chamara from Pixabay

প্রিয়া ঠাকুর : বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রম এর সংখ্যা আর তার প্রয়োজনীয়তা উভয়ই ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের অন্তিম সময়ে একমাত্র ভরসার কাঁধ এই বৃদ্ধাশ্রমগুলি। ২০১৬ সালে ভারতে মোট বৃদ্ধাশ্রম এর সংখ্যা ছিল ৫০০টি। যা বর্তমানে ৭২৮ এ এসে দাঁড়িয়েছে।

এই যুগে সব কিছুই অস্থায়ী আর যান্ত্রিক। মানুষ ও যন্ত্র এখন প্রায়ই একই স্থানে। যা হয়তো আধুনিকতার ফল। এই বৃদ্ধাশ্রমও হয়তো তারই দান। আধুনিকতার যেমন ভাল দিক রয়েছে, তেমনই রয়েছে খারাপ দিক। বলা বাহুল্য, আধুনিকতার এই ছোঁয়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষকে অনুভূতিহীন এক যন্ত্রমানবে পরিণত করেছে।

মা-বাবারা সন্তানদের সযত্নে লালন-পালন করে তাদেরকে এই সমাজে চলার যোগ্য করে তোলে ও তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বিপদে-আপদে সন্তানের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। নিজের সন্তান লালন-পালন করা থেকে শুরু করে তাদের সন্তানের সন্তানকেও লালন-পালনের দায়িত্বও নিয়ে নেন তারা। কিন্তু শেষ বয়সে পৌঁছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। সন্তানদের থেকে ভালোবাসা আর যত্নের বদলে তাদেরকে তাচ্ছিল্য ও অবহেলার শিকার হতে হচ্ছে। কিছুক্ষেত্রে তাদের মারধরও করা হয়।

সন্তান কর্মসূত্রে দূরে কোথাও পাড়ি দিলে ভিটে ত্যাগের মতো তারা তাদের মা বাবার আশ্রয় ত্যাগ করে চলে যায়। পুরনো ভিটে-বাড়ি সঠিক দেখাশোনার অভাবে যেমন নিষ্প্রাণহীন একটি বস্তুতে পরিণত হয়, সেই সঙ্গে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে বাধ্য হন মা-বাবারা। এই প্রাণহীন বাড়ির মতোই তারাও একটা সময় হয়ে যান প্রাণহীন।

খুব কম মানুষই আছেন, যাদের মনে মা-বাবাকে ভাল রাখার কথা কিংবা তাদেরকে যেভাবে মানুষ করা হয়েছে, সামর্থের বাইরে গিয়েও সেগুলোর মূল্য তাদের কাছে থাকে। মনে থাকে তাদের ছোটখাটো বায়না পূরণ থেকে শুরু করে নিজের প্রিয় খাবার ‘আমার পেট ভর্তি’, ‘আমি খেয়েছি তুই খেয়ে নে’, এই সমস্ত মিথ্যা কথা বলে তার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার কথা। সেখানে তাদের কাছে হয়তো সেই প্রিয় খাবারটি খাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ তার থেকেও দ্বিগুণ আনন্দ তাদের সন্তানের মুখের হাসিটা। কিন্তু এই প্রকৃতির মানুষেরাও হয় তো নানান রকমের চাপে পরে তাদের মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম এ দিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে।

সন্তানের সংসারে অশান্তির কারণে বা হয়তো সন্তানের উপরে যাতে বোঝা না হয়ে যান এই সমস্ত চিন্তার বশে নিজে থেকেও তারা তাদের শেষ আশ্রয় হিসেবে বৃদ্ধাশ্রমে থাকার কথা পরিকল্পনা করছেন বা সেখানে গিয়েই থাকার ব্যবস্থা করছেন।

অনেক সময় সন্তান কর্মসূত্রে অন্য জায়গায় মাইগ্রেট বা স্থানান্তরিত হয়ে যেখানে যাচ্ছে সেখানে তাদের নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু অন্য জায়গায় গিয়ে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে এবং দীর্ঘদিন স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করার পরে, সন্তানের অধীনস্থ হয়ে থাকার ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যার জন্যেও বৃদ্ধাশ্রম এর সংখ্যা বাড়ছে।

অনেক সময় তারা একলা বোধ করেন। নাতি-নাতনি, সন্তান ও আপনজনদের সঙ্গ পেতে চান। যা তাদের একলা থাকার অনুভূতি অনেকটাই দূর করে। তারা শেষ বয়সে আপন লোকজনের থেকে ভালোবাসা ও যত্ন চান। যখন তারা এগুলো থেকে বঞ্চিত থাকেন তখন সেটি তাদের মানসিকভাবে চাপে ফেলে, তারা হীনমন্যতায় ভোগেন। অনেক সময় বহুদিন ধরে নিজে রোজগার করার পরে যখন তারা কর্মক্ষম হয়ে আর্থিকভাবে অন্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন, তখন তারা অসুরক্ষিত মনে করছেন।

তাছাড়াও তাদের নানান রকমের শারীরিক ও মানসিক রোগ বয়সকালে বাসা বাঁধে। শেষ জীবনে তারা কেবল কাছের মানুষগুলোর সান্নিধ্যটুকু পাওয়ার জন্য ব্যাকুলভাবে বসে থাকেন, হয় তো রোজ রাত্রে শুতে যান মিষ্টি স্বপ্নটা পরের দিন পূরণ হবে, সেই স্বম্ভাবনার ইচ্ছা নিয়ে।

Advertisement
Previous articleMocha র শেষে এই সপ্তাহেই ঝড়-বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে
Next articleমৌমাছি সম্পর্কে এই অবাক করা তথ্যগুলি হয়তো অনেকেই জানে না (ভিডিও সহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here