Monday, December 9, 2024

বিষয় বাংলাদেশ : শুধুই কি কোটা সংস্কার আন্দোলন, নাকি নেপথ্যে কোনও ষড়যন্ত্র

- Advertisement -

বাংলাদেশ এর ইতিহাসে এটি কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। অতীতেও দেখা গিয়েছে, সে দেশের যে কোনও সহিংসতায় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় কোনও রকম অংশগ্রহণ না করলেও অবশেষে তাদের উপরই এসে পড়েছে অধিকাংশ আঘাত। হত্যা, লুটপাট, বাড়িঘর ও উপাসনালয় ভাঙচুর, বেদখল থেকে শুরু করে নারী নির্যাতনের সীমাকেও ছাড়িয়ে যেতে দেখা গিয়েছে।

বাংলাদেশ
Image by Peggy und Marco Lachmann-Anke from Pixabay

উত্তাল গোটা দেশ! চারিদিকে শুধু মৃতের মিছিল! দিকে দিকে চলছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, লুঠপাট, ভাঙচুর, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্বিচারে হামলা, প্রকাশ্যে মারধোর, জেল ভেঙে অপরাধীদের মুক্তকরণ, বেদখল, বসতবাড়িতে আগুন – এসবই এখন বাংলাদেশ এর বর্তমান চিত্র। সমগ্র পৃথিবীর সামনে উন্মুক্ত এক ভয়াবহ ছবি। যা ভাষায় বর্ণনা করা এক কথায় মুশকিল।

ঘটনার শুরু গত ৫ আগস্ট বিকাল থেকে। দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের পর থেকেই গোটা বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। যা এখনও চলমান। অথচ দেশ এখন সেনাবাহিনীর কবজায়। নৈরাজ্য না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোথাও এখনও সেনাদের ভারি বুটের শব্দ শুনতে পাচ্ছে না দেশবাসী। কারণ কী?

ঘটনার সূত্রপাত

বাংলাদেশ এর অসংখ্য আন্দোলনের আঁতুড়ঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার ছাত্রসমাজ অতীতেও বহুবার গর্ব ও সম্মানের সঙ্গে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করে গিয়েছে। বাংলাদেশ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালের বহু আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাতও ঘটিয়েছে এখানকার ছাত্র সমাজ। যেখানে বুদ্ধিজীবী সমাজের একাংশের সমর্থন অবশ্যই ছিল।

কিন্তু ছাত্রদের কথায়, বাংলাদেশ সরকার প্রথম দিকে কোনও রকম কর্ণপাত করতে চায়নি তাদের দাবিকে। নিজেদের অবস্থানে অটল থেকেছে বরাবর। প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হলেও পরে ধাপে ধাপে তা সহিংসতায় রূপান্তরিত হতে শুরু করে। পরে শুরু হয় রক্তক্ষয়। সারা দেশ জুড়ে জারি করা হয় কারফু। প্রকাশ্যে পুলিশ বাহিনী ছাত্রদের উপর সশস্ত্র হামলা চালাতে শুরু করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদের নিহতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে।

- Advertisement -

দাবি মানার পরেও কেন আন্দোলন?

পরে বাংলাদেশ সরকার ছাত্রদের দাবি মেনে নিলেও সারা দেশ জুড়ে সহিংস আন্দোলন কিন্তু থামানো যায়নি। শুরু হয় নতুন আর এক আন্দোলন ‘দফা এক’। অর্থাৎ ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গদি ছাড়তে হবে ও নিহত ছাত্রদের পূর্ণ তদন্ত করতে হবে, প্রয়োজনে শাসক দলকেও তদন্তের আওতায় আনতে হবে। সন্দেহ ঠিক এখন থেকেই। কারণ সেদেশের অধিকাংশ কূটনীতিক সে সময়ে দাবি করতে শুরু করেছিলেন, দেশের ছাত্র আন্দোলন আর ছাত্রদের হাতে নেই। বরং চলে গিয়েছে তৃতীয় কোনও অজ্ঞাত শক্তির হাতে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগ

অবশেষে এল সেই দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট। গোটা বাংলাদেশ জুড়েই প্রায় সারাদিন চলছে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি। সেনাবাহিনী ক্রমে পিছু হটতে শুরু করে (এখানে সন্দেহ থেকেই যায়, তৃতীয় কোনও শক্তির মদতে নয়তো। যেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যথেষ্ট দক্ষ হিসেবেই নিজেদের পরিচয় দিয়েছে পূর্বে)। তারা একপ্রকার সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলেই নেয় এবং সেই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বলে। শেখ হাসিনা প্রথম দিকে রাজি না হলেও পরিজনদের কথায় রাজি হন এবং পদত্যাগ করে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ভারতে চলে আসেন।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরেও কেন সহিংস বাংলাদেশ?

ছাত্রদের এই দাবিও একপ্রকার মেনে নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন তিনি। তাহলে ছাত্র আন্দোলন থামল না কেন? দুঃখিত, এখন একে আর ঠিক ‘ছাত্র আন্দোলন’ বলা যাচ্ছে না, সহিংসতা বলা যেতে পারে। কারণ ছাত্রদের দাবির মধ্যে কোথাও উল্লেখ ছিল না, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সারা বাংলাদেশ জুড়ে চলবে তাণ্ডবলীলা, জ্বলবে একের পর এক বাড়ি, সেই আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে নিরস্ত্র মানুষকে, মানুষ মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে ব্রিজ থেকে, ভেঙে দেওয়া হবে জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমানের মূর্তি, গণভবন দখল করে করা হবে নৃশংস বিজয় উল্লাস, ভেঙে দেওয়া হবে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও তাদের বাড়িঘর, ভেঙে ফেলা হবে জাদুঘর, জ্বালিয়ে দেওয়া হবে গ্রন্থাগার ইত্যাদি। আর পুরো ঘটনাটি ঘটছে ‘যোগ্য’ সেনাবাহিনীর চোখের সামনেই। বাংলাদেশী ছাত্ররা আসলে কী এই ভয়াবহ পরিবেশ তৈরির জন্যেই আন্দোলনে সামিল হয়েছিল? তারা প্রকৃতই কী সুশিক্ষিত ছাত্র সমাজের অংশ? তারা কী চাকরি পাওয়ার আদৌ যোগ্য? এরা যদি ছাত্র না হয়, তাহলে এরা কারা? নাকি ছাত্রদের সঙ্গেই মিশে ছিল ওই ‘তৃতীয় কোনও অজ্ঞাত শক্তি’? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। তৃতীয় কোনও শক্তি যে এই আন্দোলনকে হাতিয়ার করেছে তা আরও স্পষ্ট হল বর্তমান পরিস্থিতি থেকে।

সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার

বাংলাদেশ এর ইতিহাসে এটি কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। অতীতেও দেখা গিয়েছে, সে দেশের যে কোনও সহিংসতায় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় কোনও রকম অংশগ্রহণ না করলেও অবশেষে তাদের উপরই এসে পড়েছে অধিকাংশ আঘাত। হত্যা, লুটপাট, বাড়িঘর ও উপাসনালয় ভাঙচুর, বেদখল থেকে শুরু করে নারী নির্যাতনের সীমাকেও ছাড়িয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। এবারেও তার অন্যথা হয়নি।

চলতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে অন্যদের পাশাপাশি অগণিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্ররাও অংশগ্রহণ করেছিল। আন্দোলনের শেষে সেই একই প্রতিচ্ছবি দেখেছে গোটা বিশ্ব। তাদের উপরই নেমে এসেছে চরম আঘাত। তৃতীয় কোনও শক্তির মদত ছাড়া ঘটনাটিগুলি যে ঘটেনি তা যে কারওরই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

সেনাবাহিনীর দর্শকের ভূমিকা

পদত্যাগের আগে সহিংস আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে সেনা নামিয়ে দেশে কারফু জারি করতে বাধ্য হয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার। হয়তো বিশ্বাস ছিল, ‘দক্ষ’ সেনা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টো। সেনাবাহিনী সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। পরে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে যখন সহিংসতা আরও তীব্র হয়ে পড়ে, সেনাবাহিনী তা নিয়ন্ত্রণ না করে তখন কেবল দর্শকের ভূমিকা অবলম্বন করতে থাকে। কার নির্দেশে? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

ভারত বিরোধী শ্লোগান

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বহুবারই ভারত বিরোধী শ্লোগান উঠতে দেখা গিয়েছে। বুঝতে পারা যায়নি, এই আন্দোলনের সঙ্গে ভারতের কী সম্পর্ক রয়েছে। যতদূর জানা যায়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার জোট শরিক জামাত গোষ্ঠী কট্টর ভারত বিরোধী। অতীতে তারা বহুবার ভারত বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগানও দিয়ে এসেছে। এছাড়াও ১৯৭১ সালের যুদ্ধে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃতেই যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, এ তারা কখনওই মানতে চায়নি। শেখ হাসিনার শাসনামলে এই দুটি দলই ছিল বিপর্যস্ত। অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য জামাতকে সরকার নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছিল। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ জুড়ে সহিংসতার মাঝে শেখ মুজিবর রহমানের একাধিক মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়। যেখানে অধিকাংশ বাংলাদেশী শেখ মুজিবর রহমানকে জাতির পিতা হিসাবে মেনে নিয়েছে। তাহলে কারা ঘটিয়েছে এই কার্যকলাপ? তবে কি কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের সামনে রেখে সরকার উচ্ছেদ করতে তারাই কোনও ষড়যন্ত্র ঘটিয়েছিল? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর