Advertisement
সজয় পাল : ২০০২ সালের পর আবারও মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হল চিন। সেবছর সার্স (সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসে ৮০৯৮ জন সংক্রমিত রোগীর মধ্যে মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। এবার সেই চিনই আক্রান্ত হল করোনাভাইরাসে। ভাইরাসটির অন্য নাম ২০১৯-এনসিওভি। চিন সহ এই রোগে ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, নেপাল, ফ্রান্সের একাধিক মানুষ। তাই সারা বিশ্ব এখন যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এই করোনাভাইরাস নিয়ে। যদিও চিন ছাড়া অন্য কোনও দেশ থেকে এখনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চিনের উহান শহরে প্রথম এই রোগের সংক্রম দেখা যায়। বিবিসি সংবাদ মাধ্যম সূত্র অনুযায়ী, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে এখনও প্রায় ৪০০০-এরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে মারা গিয়েছে প্রায় ১০৬ জন। সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রোগ ধরা পড়ছে অনেক দেরিতে। রোগের উপসর্গ ঠাণ্ডা লাগা সাধারণ সর্দি-কাশি বা জ্বরের মতো হওয়ায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগ বুঝতে দেরি হচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহ পর শ্বাস কষ্ট শুরু হচ্ছে রোগীর। তখন আর কিছুই প্রায় করার থাকছে না। প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে, এই রোগে আক্রান্ত প্রতি ৪ জনের অন্তত ১ জন মারা যাচ্ছে।
তবে করোনাভাইরাস কোনও নতুন নাম নয়। এই ভাইরাস প্রথম দেখা যায় ১৯৬০ সাল নাগাদ। তখন এটি মুরগির মধ্যে ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসাবে দেখা দিয়েছিল। ভাইরাসটি নিদুভাইরাস প্রকৃতির একটি নতুন প্রজাতি। এর জিনোম সম্পূর্ণ নিজস্ব আরএনএ দ্বারা গঠিত। আর এর আকার প্রায় ২৬-৩২ কিলো বেস পেয়ার। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ছাড়া এর অস্তিত্ব প্রায় বোঝায় যায় না। দেখতে অনেকটা মাথার মুকুটের মতো। এখনও পর্যন্ত এই প্রকৃতির মোট ৫টি প্রজাতি আবিষ্কার করা গিয়েছে। যার মধ্যে করোনাভাইরাস হল সর্বশেষ।
ভাইরাসটি সরাসরি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। প্রবেশের জন্য কোনও মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। ভাইরাসটি প্রথমে অন্য প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে। সেখান থেকে শারীরিকভাবে দুর্বল এমন মানুষের শরীরে আসে। চিনের উহান শহরে করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ালো তা সঠিকভাবে এখনও জানা যায়নি। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ অনুমান করছেন, ভাইরাসটি যেহেতু হর্সশু বাদুরের সঙ্গে যুক্ত, তাই এই বাদুরের থেকেও ছড়াতে পারে। তার কারণ উহান শহরের বড়ো বাজারগুলিতে মানুষের খাদ্য হিসাবে বাদুরও আনা হয়ে থাকে। আবার কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা ভাইরাসটি সাপের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। যদিও এবিষয়ে কোনও মহলই এখনও নিশ্চিত নন।
কোনও ভাইরাস নিজে থেকে কখনও ধ্বংস বা নষ্ট হয় না। বাইরের খোলা বাতাসে সে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ জড় বস্তুর মতো অবস্থান করে। কিন্তু যখনই কোনও প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে তার মধ্যে প্রাণ ফিরে আসে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনা প্রায় নেই। কিন্তু পরবর্তীকালে মানুষের শরীরে প্রবেশের পর যদি সে নিজের জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলে তাহলে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ভাইরাস ছড়ানো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। (১) যে অঞ্চলে এই ভাইরাস ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানকার মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। (২) দিনে বার কয়েক হাত-মুখ খুব ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। (৩) যারা এই রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করছেন, তাদের বিশেষভাবে নির্মিত প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পড়তে হবে। বর্তমানে এই রোগের কোনও টিকা বা ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয়নি। তাই নিয়মগুলি অবশ্যই মানতে হবে।
Advertisement